Cvoice24.com

চট্টগ্রামে চার লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের টার্গেট

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ৩ জুলাই ২০২২
চট্টগ্রামে চার লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের টার্গেট

এবার কোরবানির ঈদে চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রামের চামড়া আড়তদাররা। চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসব চামড়া সংগ্রহ করা হবে। চামড়া সংগ্রহের মোক্ষম এ সময়ে স্ব-উদ্যোগে ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহ করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে এক সময় ২২টি ট্যানারি ছিল। লোকসানের কবলে অধিকাংশ মালিক ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে রিফ লেদার নামের একটি ট্যানারির উপর ভিত্তি করে চামড়া সংগ্রহ করেন আড়তদাররা। কোরবানের সময় চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে প্রায় পঞ্চাশ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারিটি। ফলে আড়তে সংগৃহীত অধিকাংশ চামড়া চট্টগ্রামের বাইরে ট্যানারিতে বিক্রি করতে হয়। এতে অনেক সময় প্রত্যাশিত মূল্য পাওয়া যায় না। এতে করে লোকসানও গুণতে হয় অনেক আড়তদারকে।

চামড়ার আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবছর কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ পিস। গত বছর  লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন লাখ। তার বিপরীতে সংগ্রহ করা হয়েছিল মাত্র দুই লাখ। ২০২০ সালে ৪ লাখ ও তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে সাড়ে ৩ লাখ কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। চলতি বছর ভালো দাম ও লোকসান পুষিয়ে নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর ঢাকার ট্যানারি মালিকরা যদি চামড়ার ন্যায্য দাম না দেয় তাহলে শুধু লোকসান নয়, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সিভয়েসকে বলেন, সরকার চামড়া কেনার জন্য যে মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তা লবণযুক্ত। যত বড় চামড়া হোক চট্টগ্রামের চামড়াগুলো ২০ থেকে ২২ ফুটের বেশি ধরা হয় না। ট্যানারি মালিকরা লবণযুক্ত চামড়ার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাদ দিয়ে কেনে। লবণ, কর্মচারি সবমিলিয়ে প্রতি চামড়ায় আমাদের ২শ’ টাকা খরচ পড়ে। সরকার ফুটপ্রতি পুরো চামড়ার রেট দিলেও ট্যানারি মালিকরা কিছু অংশ বাদ দিয়ে কিনলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পুরো চামড়ার দাম চান। কিন্তু আমরাও তো ট্যানারির হাতে ধরা। এটা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না। তাই তাদের উদ্দেশ্যে বলব, গ্রাম থেকে চামড়া আনতে দেরি হলে লবণ দিয়ে দিতে হবে। এতে করে এই জাতীয় সম্পদটা নষ্ট হবে না। 

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, আমাদের আগে প্রতিবছরই পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ পিস কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকতো। লবণের দাম ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ন্যায্যদাম না পাওয়ার কারণে চামড়া খাতে সংকট কাটছে না। ফলে কমেছে লক্ষ্যমাত্রাও। এবছর আমরা সাড়ে তিন থেকে চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।

তিনি বলেন, লবণের দাম বেড়ে গেছে। আগে ৬শ’ টাকায় লবণ কিনলে এখন কিনতে হচ্ছে এক হাজার টাকায়। প্রতিটি চামড়ায় সাত থেকে আট কেজি লবণ দিতে হয়। গুদাম ভাড়া, মজুরি হিসেব করলে প্রতিটি ২০ ফুটের চামড়ার পেছনে আরো ২শ’ টাকার উপরে খরচ পড়ে। অর্থাৎ প্রতি বর্গফুটে আমাদের ১০ থেকে ১২ টাকা খরচ পড়ে। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের বলব, এখন প্রচুর গরম পড়ছে। দ্রুত চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তারা নিজেরাই যদি চামড়ায় লবণ দিয়ে দেয় এবং ছায়াযুক্ত স্থানে রাখে তাহলে চামড়াটা সুরক্ষিত থাকবে। আমরা চাই না তারা লোকসানে পড়ুক।

চামড়া খাতের সংকট নিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার যে দর নির্ধারণ করে দেবে আমরা সে দামেই কিনবো। তবে ট্যানারি মালিকরা যদি আমাদের ন্যায্য দাম না দেয় তাহলে আমরা লোকসানে পড়ব। গতবছর ঢাকার এতগুলো ট্যানারির মধ্যে অধিকাংশই আমাদের কাছ থেকে চামড়া নেয়নি। ছোটখাটো দু চারটা ট্যানারির প্রতিনিধি এসে গতবছর আমাদের কাছ থেকে চার হাজার পিস চামড়া কিনেছিল। ট্যানারির মালিকদের প্রতি অনুরোধ তারা যেন চামড়া কেনার সময় ন্যায্য দামটুকু আমাদের দেয়। 

চামড়াখাতে সংকট নিরসনে এলডব্লিউজি সার্টিফিকেটধারী ট্যানারি বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে মুসলিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ১৭০টির মতো ট্যানারি রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে মাত্র একটি ট্যানারি রয়েছে। সবগুলো ট্যানারির মধ্যে চট্টগ্রামের রিফ লেদার ও ঢাকার এপেক্স ফুটওয়্যারের কাছে এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট আছে। এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট থাকলে বড় বড় বায়াররা চামড়া কেনার জন্য অর্ডার দেয়। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও এলডব্লিউজি সার্টিফিকেটধারী ট্যানারিগুলোকে প্রাধান্য। তাই সঠিকভাবে ট্যানারি পরিচালনা করে আমাদের দেশের অন্তত ৫০টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠান যদি এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট পায় তাহলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে চামড়া কেনার জন্য অর্ডার আসবে। এতে চামড়া বেচাকেনা ভালো হবে। আমাদের ভোগান্তিও দূর হবে। 

১৯৪৮ সাল থেকে বন্দর নগর চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবসায়ের বিকাশ ঘটে। লাভজনক ব্যবসার মুখ দেখায় চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি গড়ে ওঠে। কালের বিবর্তনে লোকসান গুণতে গুণতে প্রায় সব ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে। বিগত পাঁচবছর আগেও চট্টগ্রামে সফলভাবে দুটি ট্যানারি চালু ছিল। এদের একটি মদিনা ট্যানারি ও অপরটি রিফ লেদার ট্যানারি। এ ট্যানারি দুটি ঢাকার ট্যানারিগুলোর সাথে তুমুল প্রতিযোগিতা দিয়ে আসছিল। কিন্তু বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) না থাকায় পাঁচ বছর আগে সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দেয় মদিনা ট্যানারি। তবে সংকটকালীন সময়েও লড়াই করে টিকে আছে রিফ লেদার নামের একটি ট্যানারি। চট্টগ্রামে সমিতিভুক্ত আড়তদারের সংখ্যা ছিল ১১২ জন। এর বাইরে আরও অন্তত ১৫০ আড়তদার ছিল। তবে লোকসানে পড়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেন ৬৫ এরও বেশি আড়তদার। সবমিলিয়ে অস্তিত্ব সংকটে আছে চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়।

সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়