Cvoice24.com

ক্রেতা সংকটে খাতুনগঞ্জের মশলার বাজার, দাম নিম্নমুখী

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০৮, ৩ জুলাই ২০২২
ক্রেতা সংকটে খাতুনগঞ্জের মশলার বাজার, দাম নিম্নমুখী

আর কিছুদিন পরেই কোরবানের ঈদ। আসন্ন এ কোরবানের ঈদকে ঘিরে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত মসলা আমদানি করে প্রস্তুত ছিলেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। মুনাফার হিসেবও কষে রেখেছিলেন অনেকেই। কিন্তু কে জানতো, লকডাউনবিহীন এই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ভাটা পড়বে বেচাবিক্রিতে। ক্রেতার সংকটের কারণে বেচাবিক্রির এ ভরা মৌসুমে ব্যবসায়ীদের সব আশায় যেন ছাই ঢেলে দিয়েছে। পর্যাপ্ত বেচাকেনা না থাকায় বিপুল পরিমাণে লোকসানের আশঙ্কাও করছেন ব্যবসায়ীরা।

সারাবছর ব্যবসা করলেও অধিক বিক্রির আশায় কোরবানের ঈদের প্রতি মুখিয়ে থাকেন খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ীরা। এ কারণে প্রচুর পরিমাণে মসলা আমদানি করেছেন অনেকেই। তাছাড়া ব্যাংক ঋণের বাড়তি সুদ থেকে মুক্তি পেতে আমদানি করা মসলার দামও কমিয়েছেন তারা। তবুও বাড়ছে না ক্রেতার আনাগোনা। বন্যার প্রভাব, ঊর্ধ্বমুখী বাজার পরিস্থিতি ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ক্রেতার আগমন কমেছে বলে মনে করছেন খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ীরা।

দু সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন পদের মসলা কেজিতে ২৫ থেকে ২'শ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এলাচ কেজিতে ২'শ টাকা কমে বর্তমানে ১ হাজার ১৫০, কেজিতে ৭০ টাকা কমে প্রতিকেজি লবঙ্গ ৯৫০, কেজিতে ৫০ টাকা কমে প্রতিকেজি জিরা ৩৫০, কেজিতে ২৫ টাকা কমে ধনিয়া ৯০, কেজিতে ৭০ টাকা কমে প্রতিকেজি দারুচিনি ২৮০, কেজিতে ২০ টাকা কমে প্রতিকেজি ভারতীয় হলুদ ১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি গোল মরিচ ৫শ, মিষ্টি জিরা ১৬০ ও শুকনা মরিচ ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানের মৌসুমে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চাহিদার হার অনেক কম। এবার খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছেও মসলা পণ্যের চাহিদা খুব একটা নেই। তাই মসলা পণ্যের দামও কমে গেছে। অনেকে আগে থেকেই অল্প অল্প করে বিভিন্ন ধরনের মসলা কিনে বাসায় মজুদ করেছেন। তার উপর সামনে সবাই কোরবানের পশু কিনতেই ব্যস্ত সময় পার করবেন। তাই কোরবানের আর ছয়দিন বাকি থাকলেও ক্রেতার সমাগম তেমন একটা না হওয়ার আশঙ্কা করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার টন মসলা আমদানি হয়। যার আমদানি মূল্য প্রায় ৭’শ কোটি টাকা। মসলা পণ্যের মধ্যে ধনিয়া ছাড়া বাকি সব পণ্য কম-বেশি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৬ হাজার ৭‘শ টন জিরা, ২ হাজার ১৪৭ টন ধনিয়া, ২ হাজার ৯৮৪ টন এলাচি, ১ হাজার ৫৫২ টন লবঙ্গ ও ১২ হাজার ৯৬৫ টন দারুচিনি আমদানি হয়েছে।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অমর কান্তি দাশ সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়েও মসলা আমদানি হচ্ছে। বিশেষ করে জিরা আমদানি হচ্ছে সড়কপথে। তবে ডলারের দাম ও আমদানি খরচ বেড়েছে। তবুও আমরা পর্যাপ্ত মসলা আমদানি করেছি। ক্রেতার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দাম মানুষকে ভোগাচ্ছে। আমাদের মোকামগুলোতেও বেচাবিক্রি কমে গেছে। তাই আমদানিকারকেরা সামনে কম এলসি খুলবেন। যেহেতু এবার মসলার বেচাবিক্রি কম আগামী কয়েকমাস মসলার দাম বাড়বে না বলে আমি আশা করি। 

এদিকে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামও নিম্নমুখী। হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস মিয়া সিভয়েসকে বলেন, মোকামে দু’সপ্তাহ আগেও মাঝারি আকারের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ তা বিক্রি করছি ৪০ টাকায়। তিনদিন আগে চায়না আদা ৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ ৬০ টাকা চলছে। তাছাড়া চায়না রসুন কেজিপ্রতি ৯০, দেশি রসুন মানভেদে ৩৫ থেকে ৬০ ও মিয়ানমারের আদা ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

তিনি বলেন, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন হচ্ছে পচনশীল পণ্য। অথচ এখন ভরা বিক্রির মৌসুম হলেও আমাদের বেচাবিক্রি কম। তাই পণ্যগুলো নিয়ে খুব চিন্তায় সময় পার করছি আমরা। বিক্রি না হলে অনেক লোকসান গুণতে হবে আমাদের।

সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়