Cvoice24.com

চট্টগ্রাম বন্দর শেড যেন ‘তেলের খনি’

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৬:৫২, ৫ আগস্ট ২০২২
চট্টগ্রাম বন্দর শেড যেন ‘তেলের খনি’

চট্টগ্রাম বন্দর।

তেল নিয়ে তেলেসমাতির কারণে কয়েক মাস আগেও সয়াবিন তেল ছিল সোনার হরিণ। অথচ সেই ‘সোনার হরিণ’ দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দরের পাঁচটি শেডে নিলামের অপেক্ষায় এসব তেল। প্রায় বছর খানেক ধরে তেলের বাজার ‘গরম’ থাকলেও সেই বাজার ধরতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস। যদিও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এখন বলছে ডাকা হচ্ছে নিলাম। 

শুধু যে ভোজ্যতেল তা কিন্তু নয়, আলকাতরা-থিনার-ডিজেল-ইঞ্জিন অয়েলে টইটম্বুর বন্দরের আরও আটটি শেড। যেন রীতিমতো বন্দরে মিলেছে তেলের খনি। তবে বছরের পর বছর অযত্ন, অবহেলায় পড়ে থাকায় অধিকাংশ ভোজ্যতেলের ড্রাম জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। তেলেও মিশে গেছে ময়লা। ফলে এসব তেল ভালো দামে বিক্রি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে ১৬টি শেড বা গোলা রয়েছে। এরমধ্যে দুটি শেডে ১২ হাজার ২৬০ লিটার সয়াবিন তেল, তিনটি শেডে ১ হাজার ৩শ লিটার পাম অয়েল রয়েছে। অপর দুটি শেডে রয়েছে ৭২০ লিটার লুব অয়েল, আরেকটি শেডে ১ হাজার ৪শ লিটার আলকাতরা, আটটি শেডে ১২ হাজার ৬৩০ লিটার কেরোসিন, একটি শেডে ১শ’লিটার থিনার পড়ে আছে। তাছাড়া আরও দুটি শেডে ১৪০ লিটার হাইড্রোলিক অয়েল ও একটি শেডে ৮০ কেজি গ্রিজ রয়েছে। বছরের পর বছর অযত্ন, অবহেলায় পড়ে থাকায় অনেক তেল ভর্তি ড্রাম ভেঙ্গে গেছে। আর এ কারণেই অধিকাংশ তেলের মধ্যে ময়লা জমেছে। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের বিভিন্ন শেডে নয় ধরনের তেল রয়েছে। এরমধ্যে ভোজ্যতেল, জ্বালানি ও ইঞ্জিন অয়েল রয়েছে। বন্দরের ‘ডি’শেডে তিন ড্রামে ৬শ লিটার ও ‘এম’ শেডে ছয়টি জারে ১২০ লিটার লুব অয়েল রয়েছে। ‘এ’ শেডে দশ ড্রামে ১ হাজার ৪শ লিটার আলকাতরা রয়েছে। ‘জি’শেডে আট ড্রামে ১ হাজার ৪শ লিটার ও ‘এম’শেডে তিন ড্রামে ৩শ লিটার কেরোসিন তেল পড়ে আছে। এদিকে বন্দরের ‘এম’ শেডে ৩৫টি ড্রামে ৬ হাজার ৬৪০ লিটার ডিজেল রয়েছে। পাশাপাশি ‘এ’শেডে ৫৫টি জারে ১ হাজার ৩১০ লিটার ও ‘জি’শেডে পাঁচ ড্রামে ১ হাজার ৪৮০ লিটার ডিজেল রয়েছে। তাছাড়া ‘ই’এবং ‘এফ’শেডে ২ হাজার ৪শ লিটার ও ‘আই’শেডে চার ব্যারেল ডিজেল বিভিন্ন জারে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

এদিকে বন্দরের ‘এ’ ও ‘জি’শেডে ৪০টি জারে ১ হাজার ৩শ লিটার পাম অয়েল রয়েছে। ‘আই’গোলায় ১শ জারে ১২ হাজার ২৬০ লিটার সয়াবিন তেল রয়েছে। তাছাড়া ‘কে’গোলায় ছোট দুই ড্রামে ১শ কেজি থিনার, ‘ই’শেডে ৮০ কেজি গ্রিজ এবং ‘ই’‘এফ’ও ‘কে’গোলায় ১৪০ লিটার হাইড্রোলিক অয়েল রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক কর্মকর্তা সিভয়েসকে বলেন, ‘বন্দরের অন্তত আটটি শেডে নয় ধরনের তেল রয়েছে। পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে বন্দরে পড়ে থাকতে থাকতে অনেক জার নষ্ট হয়ে গেছে। পুরানো, ভাঙ্গা জারগুলোতে থাকা তেলগুলোও ময়লাযুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে এসব তেল নিলামে তুলে ভালো দামে বিক্রি করার সম্ভাবনাও কম। কারণ ক্রেতারা ভালোটাই কিনতে চান। শুধু তাই নয়, ভোজ্য-জ্বালানি ও ইঞ্জিন অয়েলের পাশাপাশি বন্দরের বিভিন্ন শেডে বিপুল পরিমাণে ফেব্রিক্স পণ্য পড়ে রয়েছে। যদিও পণ্যগুলো নিলামে বিক্রির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, বন্দরের বিভিন্ন শেডে ভোজ্যতেল, ডিজেল ও জ্বালানি সহ বিভিন্ন ধরনের তেল রয়েছে। তবে বন্দর শেডে পড়ে থাকা পণ্যগুলো বিক্রি করতে ধাপে ধাপে নিলামের আয়োজন করতে হয়। এ কারণে তেলজাতীয় পণ্যগুলো নিলামে তুলতে সময় লেগেছে। বর্তমানে তেলের পাশাপাশি ফেব্রিক্স, গ্রীণ টি, পলিব্যাগ, প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার, বনেটসহ বিভিন্ন নিলামযোগ্য পণ্য রয়েছে। কাস্টমস পণ্যগুলো বিক্রির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (নিলাম শাখা) আলী রেজা হায়দার সিভয়েসকে বলেন, বছরের পর বছর অযত্নে পড়ে থাকায় তেলভর্তি জারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক তেলে ময়লাও জমেছে। তবে নিলাম একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা ঠিক যে, ধাপে ধাপে নিলামের আয়োজন করতে হয় বিধায় তেলগুলো এতদিন শেডে পড়েছিল। তবে আমরা এবার তেলগুলো বিক্রি করবো। ইতোমধ্যে আগ্রহী অনেকে দরপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা যাচাই-বাছাই করে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছেই তেলগুলো বিক্রি করবো।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়