Cvoice24.com

ভারী পণ্য ওজনে যন্ত্রপাতির অভাব, খালাসেও নেই আলাদা জেটি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১৪ আগস্ট ২০২২
ভারী পণ্য ওজনে যন্ত্রপাতির অভাব, খালাসেও নেই আলাদা জেটি

প্রতিষ্ঠার ১৩৪ বছরে একদিকে বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) ভেড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করেনি চট্টগ্রাম বন্দর। অন্যদিকে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিলেও ভারী পণ্য ওজনে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি আর খালাসে আলাদা জেটি কোনটিই নেই। যদিও চট্টগ্রাম বন্দরের সব তোড়জোড় যেন কনটেইনার ইয়ার্ডকে ঘিরে। চলতি বছরের শুরুতে চালু হয় ‘নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড’। চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’।

বন্দরের ১৯ জেটিতে বর্তমানে ৪০ টন ওজনের বেশি ভারী পণ্য খালাস করা সম্ভব হয় না। অথচ ২৫০ টন ওজনের ভারী কোন পণ্য আসলে তা খালাসের জন্য আলাদা কোন জেটি নেই বন্দরের কাছে। পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনলেও ভারী পণ্য ওজন করার মত নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। এ কারণে নিলামের আগে পণ্যের যথাযথ ওজনের তথ্য দিতে পারে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

১৬ বছর আগে সবশেষ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মাণ করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্গেট পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। এখানে বড় জাহাজ ভেড়ানোর পরিকল্পনাও আছে বন্দরের। তবে ভারী পণ্য খালাসে আলাদা জেটি নেই বন্দরের। বর্তমানে মেকানিক্যাল ডিভাইস ব্যবহার করে জাহাজের ক্রেনের সহায়তায় ভারী পণ্য খালাসের কাজ সারছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে করে ঝুঁকির সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে হাতে থাকা বে-টার্মিনাল প্রকল্পে ভারী পণ্য খালাসে আলাদা একটি জেটি করা যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা। 

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিক প্রযুক্তিতে আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নতুন টার্মিনালও গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরের চাহিদাও দিনকে দিন বাড়ছে। পাশাপাশি সরকারের বড় প্রকল্পের কাজ মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, মিরসরাই ইকোনমিক জোনের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনে অনেক ভারী পণ্য আমদানি করতে হবে। কিন্তু এসব পণ্য খালাসের জন্য আলাদা একটি জেটি নির্মাণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সে হিসেবে ভারী মালামাল হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আলাদা একটি জেটি থাকা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়ন করা হলে একদিকে জট কমবে, অন্যদিকে জাহাজের টার্ন আ্যারাউন্ড টাইম (গড় অবস্থানকাল) কমে আসবে। এতে করে বন্দর ব্যবহারকারীদের ব্যয়ও কমে আসবে। 

তবে কনটেইনার ধারণক্ষমতায় দারুণ সফলতা দেখিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এক বছর আগে ৪৯ হাজার টিইইউএস কনটেইনার ধারণক্ষমতা থাকলেও এখন ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস কনটেইনার রাখতে পারে বন্দর। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, জেনারেল কার্গো বার্থে ১৯ হাজার ৮০৮, চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে ৮ হাজার ৩৭৬, এনসিটি ইয়ার্ডে ১৩ হাজার ৮৭৬, নর্থ কনটেইনার ইয়ার্ডে ২ হাজার ৪৫৮, সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ডে ৩ হাজার এবং নিউমুরিং ওভারফ্লো ইয়ার্ডে ৬ হাজার ৫শ টিইইউএস কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা আছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরে বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে পেরেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, বন্দরের সার্বিক কল্যাণের জন্য আমরা নানা উদ্যোগ হাতে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ভারী পণ্যগুলো বার্জে করে আসে। বার্জ ছাড়াও ভারী পণ্যগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গেও আনা হয়। আমাদের হাতে বে-টার্মিনালের প্রকল্প রয়েছে। সেটি বাস্তবায়নের কাজও চলমান আছে। আশা করছি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম আরো শক্তিশালী হবে।

বন্দর কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য চলতি বছরও চায়নার তৈরি নতুন ক্রেন সংগ্রহ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বেশি ওজনের কোন পণ্য নিলামে তোলার আগে ওজন মাপার জন্য প্রয়োজনীয় কোন যন্ত্র নেই। এ কারণে পণ্যের সঠিক ওজন নিরুপন করা সম্ভব হয়না। 

সূত্র আরও জানায়, বন্দরের কাছে বর্তমানে ৪০ টন ওজনের ১৬টি কেউ গেন্ট্রি ক্রেন, ৪৪টি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন, একটি রেল মাউন্টেড ইয়ার্ড গেন্ট্রি ক্রেন, ৪৪টি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার (ফোর এইচ), একটি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার (টু এইচ) রয়েছে। পাশাপাশি ৮৪ টন ওজনের পাঁচটি মোবাইল হার্বার ক্রেন, ৪৫ টন ওজনের ১৭টি রিচ স্টেকার, ১৬ টন ওজনের পাঁচটি ফোর্কলিফট, সাত টন ওজনের ৯টি রিচ স্টেকার (এম্পটি) ও ৫০ টন ওজনের ৮টি কনটেইনার মুভার রয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে এখন ১শ টন ওজনের দুটি ও ৫০ টন ওজনের দুটি এবং দশ থেকে ত্রিশ টন ওজনের ৩৩টি মোবাইল ক্রেন রয়েছে। পাশাপাশি দশ থেকে বিশ টন ওজনের ২৪টি এবং দেড় থেকে পাঁচ টনের ১৩৩টি ফোর্কলিপ্ট ট্রাক রয়েছে। এদিকে পঁচিশ টন ওজনের ৬টি ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ট্রাক্টর, পঁচিশ টন ওজনের ৫টি হেভি ট্রেইলার, ছয় টন ওজনের ৩০টি লাইট ট্রেইলর, দশ টন ওজনের ৪টি টেলিহ্যান্ডলার, একটি পাইপ হ্যান্ডলার রয়েছে। তাছাড়া দুটি ব্যাগিং মেশিন, একটি পিউমেটিক কনভেয়র ও দুটি কার ক্যারিয়ার রয়েছে। 

চট্টগ্রাম কাস্টমসে গত মাসের ২০ জুলাই সবশেষ ২৭ নম্বর টেন্ডার সেল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের নিলামের নথিগুলোও যাচাই করে দেখা গেছে আকারে বড় বা ওজনে ভারী ফেব্রিক্স পণ্য, মল্ড সেট, ড্রেজার এক্সেসরিজ ও এসিড পণ্যসহ বিভিন্ন ভারী পণ্য ওজন করার জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় পণ্যের ওজন নিরুপণ করতে পারছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।  

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখা থেকে সদ্যবিদায়ী ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দার সিভয়েসকে বলেন, কোন পণ্য আকারে বড় বা ওজনে ভারী হলে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় আমরা ওই পণ্যের পরিমাণ ও ওজন সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে পারিনা। তাই আমরা বিডারদেরকে (ক্রেতাদের) পণ্যচালানগুলো যে অবস্থায় থাকে ওই অবস্থায় বিড করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়