Cvoice24.com

একসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ চার রাসায়নিক চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
একসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ চার রাসায়নিক চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে

চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন শেডে এখনো পড়ে আছে বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্যের চালান। এরমধ্যে মাঝে মাঝে কিছু রাসায়নিক পণ্য ধ্বংস বা নিলামে বিক্রি করা হলেও ধ্বংসযোগ্য আরও ২৭১ কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্য এখনো রয়ে গেছে। এরমধ্যে সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ফর্মালডিহাইডের মত ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পণ্য রয়েছে এক শেডের নিচে।

জরাজীর্ণ জারে খোলা অবস্থায় পড়ে থাকা এসব রাসায়নিক পণ্যের গায়ে নেই মেয়াদোর্ত্তীর্ণের তারিখও। এভাবে একসঙ্গে নানা ধরনের রাসায়নিক পণ্য থাকাটা বন্দরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর। যদিও বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে— রয়ে যাওয়া রাসায়নিক পণ্যগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়।  

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের ‘জে’ গোলার ভেতর চার ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ এসিড পণ্য রয়েছে। এরমধ্যে ৫৫টি জারে ২ হাজার ১০১ কেজি সালফিউরিক এসিড রয়েছে। পাশাপাশি ফসফরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড ও হাইড্রো এসিড মিলে মোট ১৩৮ কেজি পণ্য রয়েছে। একই শেডে আট কেজি পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ১শ লিটার ফর্সালডিহাইড রয়েছে। 

তাছাড়া বন্দরের ‘আই’ শেডে ১০ কোটা ফ্যানল, ‘কে’ শেডে ৫০ কেজি এসিটিক এসিড, ‘এম’ শেডে ১ হাজার ৯৯৫ কেজি ফসফরিক এসিড, ‘সি/৭’ শেডে ৩২ কেজি ওয়াশিং কেমিক্যাল, ‘সি-২’ শেডে ৩৭৮ কেজি ডায়েসিড এইচপি ও ‘পি’ শেডে ২৭০ কেজি হাইড্রোক্লোরিক এসিড রয়েছে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক মুহাম্মদ মেহেদী ইসলাম খান সিভয়েসকে বলেন, আমরা ৫৪ টি নরমাল রাসায়নিক পণ্য নিয়ে কাজ করি। সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ফর্মালডিহাইড নামের রাসায়নিক পণ্যগুলো নিয়ে আমরা কাজ করি না। তবে যেহেতু রাসায়নিক এ পণ্যগুলো খোলা জারে আছে, তাই এটি অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে শেডের ভেতরে সালফিউরিক এসিড পরে আছে। এখন সেখানে কেউ গেলে তার চামড়া পুড়ে যাবে। তবে আগামী সোমবার বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংস নিয়ে একটা বৈঠক করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা কিভাবে নিরাপদে পণ্যগুলো ধ্বংস করবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, বন্দরের শেডে থাকা রাসায়নিক পণ্যগুলো দ্রুত বন্দর থেকে সরানোর বিষয়ে আমাদের চিন্তা রয়েছে। কাস্টমস প্রতি মাসে নিলামের আয়োজন করছে। সেখানে কিছু পণ্য বিক্রি হয়। যেগুলো একেবারেই বিক্রি হয়না সেগুলো ধ্বংস করা হয়। ইতোমধ্যে ২৭১ কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংসের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে রাসায়নিক পণ্য যাতে বন্দর ইয়ার্ডে না নেমে জেটিতে ভেড়া জাহাজ থেকে সরাসরি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরিতে করে আমদানিকারকের কারখানায় নেয়া যায় তার উদ্যোগও আমরা নিচ্ছি। এতে করে বন্দর আরো সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকবে। 

এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি ধ্বংসযোগ্য কনটেইনার রয়েছে। এরমধ্যে ২৭১টি কনটেইনারে রাসায়নিক পণ্য রয়েছে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক বিষয় নিয়ে গত ২৮ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না হওয়া দীর্ঘদিনের পুরনো পণ্য সরাতে একেটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে আহবায়ক (সার্বিক) এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনারকে সদস্য সচিব করা হয়। 

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার ওমর মবিন বলেন, বন্দরের বিভিন্ন শেডে পরে থাকা রাসায়নিকসহ অন্যান্য পণ্যগুলো আমরা প্রথমে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করি। বিক্রি না হলে তা ধ্বংস করে ফেলা হয়। বন্দরের বিভিন্ন শেডে থাকা রাসায়নিক পণ্যগুলোর গায়ে মেয়াদোর্ত্তীর্ণের তারিখ নেই। তাই ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া হয়। তবুও ক্রেতাদের আমরা যাচাই করে কেনার পরামর্শ দিই। পণ্য ধ্বংসের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। তাই প্রতিবার পণ্য ধ্বংসের আগে জায়গা নির্বাচন করতে হয়। পাশাপাশি আমদানিকারকের মামলা থাকলেও পণ্যগুলো বিক্রি করা সম্ভব হয় না। এজন্য পণ্য নিলামে তুলতে ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়