Cvoice24.com

শেডে এলসিএল পণ্যের স্তুপ, চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি বন্দর

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ১৯ নভেম্বর ২০২২
শেডে এলসিএল পণ্যের স্তুপ, চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি বন্দর

বন্দর শেডে থাকা এলসিএল পণ্য।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার হাজার টিইইউস কন্টেইনার ডেলিভারি হয়ে থাকে। কিন্তু গত ৫ মাস যাবৎ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল বোঝাই এলসিএল (লেস দেন কনটইেনার লোড) পণ্যের স্তুপ জমেছে। জাহাজ থেকে খালাসের পর পণ্যগুলো আমদানিকারক যথাসময়ে না নেয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর। ফলে বন্দরের ভেতরে থাকা শেডগুলোতে জায়গা না থাকায় নতুন আসা এলসিএল পণ্যগুলো আনস্টাফিং (কনটেইনার থেকে নামিয়ে শেডে সংরক্ষণ) করতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই দ্রুত এলসিএল পণ্য খালাসে ১৪ দিন আগে চিঠি পাঠালেও কোন সাড়া দেয়নি আমদানিকারকরা।  

চট্টগ্রাম বন্দরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে দুই ধরনের কনটেইনার আসে। এর মধ্যে শুধু একজন আমদানিকারকের পণ্য বোঝাই কনটেইনারকে বলা হয় এফসিএল (ফুল লোডেড) কনটেইনার। আর একাধিক আমদানিকারকের পণ্য বোঝাই কনটেইনারকে বলা হয় এলসিএল। এ ধরনের কনটেইনারগুলো বন্দরের ভেতরে খুলে (আনস্টাফিং) সব পণ্য বের করে শুল্কায়ন শেষে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আমদানিকারকরা এরপর কাভার্ড ভ্যান বা ট্রাকে পণ্য নিয়ে যান। এই প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন হয় অনেক জায়গার ও সময়ও লাগে বেশি। আমদানিকারকরা সময়মতো এসব পণ্য না নেওয়া পর্যন্ত কনটেইনার থেকে খুলে রাখা পণ্য শেডেই পড়ে থাকে। 

এলসিএল পণ্যগুলো দ্রুত খালাস হলে সার্বিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে বলে মনে করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বিজিএমএইএর দাবি, পোশাক কারখানার কোন কাঁচামাল বন্দরে পড়ে নেই। পোশাক কারখানার বাইরে অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল আমদানি করে। তারাই পণ্য ডেলিভারি নিতে গড়িমসি করে।

চলতি বছরের মার্চেও বন্দরে এলসিএল পণ্যের চাপ বেড়ে গিয়েছিল। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে পণ্যের আমদানিকারককে চিঠি পাঠিয়ে চারগুণ স্টোর রেন্ট বা গুদাম ভাড়া আরোপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। তবে কিছুদিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আর বাড়তি ভাড়া অরোপ করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর গত জুন মাসে জরিমানার পথে না হেঁটে আমদানিকারকদের দ্রুত শেড থেকে এলসিএল কার্গো ডেলিভারি করতে চিঠি দেয়া হয়। পাঁচ মাস পর আবারো বন্দর শেডে এলসিএল পণ্যের পরিমাণ বেড়ে গেলে গত ৬ নভেম্বর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বরাবর চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

ওই চিঠিতে বলা হয়, আমদানি পণ্য ডেলিভারি দিতে চট্টগ্রাম বন্দর সপ্তাহের ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানিও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন জাহাজে আমদানিকারকদের যে পরিমাণ এলসিএল কার্গো আসছে, সে অনুযায়ী দ্রুত ডেলিভারি হচ্ছে না। জায়গা সংকটের কারণে আমদানি করা এলসিএল কনটেইনার আনস্টাফিং করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন শিলেল্পর কাঁচামাল সরবরাহ, দেশের সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখাসহ চট্টগ্রাম বন্দরে আসা কনটেইনারবাহী জাহাজ হতে কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আমদানিকৃত শিল্পের কাঁচামালগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দ্রুত খালাস করা প্রয়োজন। এসময়ে ওয়ারহাউজ, গুদাম, ফ্যাক্টরি খোলা রেখে এলসিএল পণ্য ডেলিভারী গ্রহণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরি। এলসিএল পণ্য দ্রুত খালাস না করায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।

জানা গেছে, এলসিএল পণ্য রাখার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে ১১টি শেড রয়েছে। এরমধ্যে জেনারেল কার্গো বার্থে ৮টি এবং চট্টগ্রাম কনটইেনার টার্মিনাল, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এবং ওভারফ্লো ইয়ার্ডে ১টি করে শেড রয়েছে। এসব শেডে ১ হাজার টিইইউএস পণ্য রাখা যায়। শেড খালি না হলে নতুন আসা পণ্য কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে চিন্তিত বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে আমদানি করা এলসিএল পণ্য দ্রুত ডেলিভারী নিতে আমরা চিঠি পাঠাই। সে ধারাবাহিকতায় গত ৬ নভেম্বর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর কাছে আমরা চিঠি দেই। কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা কোন সাড়া পাইনি। 

বার বার চিঠি পাঠানার পরও পণ্য ডেলিভারি না নিলে চারগুণ বাড়তি স্টোর রেন্ট আরোপ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি হচ্ছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, আমাদের দেশে দিন দিন শিল্প কারখানার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের দেশের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। তাদেরও কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসছে। কিন্তু সে হিসেবে বন্দরের সক্ষমতা বাড়েনি। বন্দর দিয়ে আমাদের পোশাক কারখানার কাঁচামালগুলো আমদানি করার তিনদিনের মধ্যে আমরা ডেলিভারি নিই। কিন্তু অন্যান্য কারখানার স্ক্র্যাপ, খাদ্যদ্রব্য, উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়। তারা আমদানি করা কাঁচামাল বন্দরের গোডাউনে দিনের পর দিন ফেলে রাখে। বন্দর কর্তৃপক্ষ চিঠি দেয়ার সময় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরাসরি ম্যানশন করতে পারেনা। তাই তারা আমাদের সংগঠন ও বিকেএমইএ বরাবর চিঠি পাঠান। বন্দর থেকে আমদানি করা কাঁচামাল দ্রুত ডেলিভারি নিতে আমি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে আগামীকাল চিঠি পাঠাবো।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়