Cvoice24.com

চীনকে যেভাবে কর্ণফুলী টানেলের অর্থায়নে ফেরালেন প্রধানমন্ত্রী

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ২৬ নভেম্বর ২০২২
চীনকে যেভাবে কর্ণফুলী টানেলের অর্থায়নে ফেরালেন প্রধানমন্ত্রী

কর্ণফুলী টানেলের ১ম টিউব।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সঙ্গে অবকাঠামো ও আর্থিকভাবে যুক্ত রয়েছে চীন। তবে শুরুতে এই টানেল অর্থায়নে রাজি ছিল না তারা। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে কূটনৈতিকভাবে প্রচেষ্টার পরও রাজি হয়নি তারা। পরে সেখানে এক নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কনভেনশনাল ডিপ্লোম্যাসির কারণে তা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। 

শনিবার (২৬ নভেম্বর) কর্নফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপনী উদযাপন অনুষ্ঠানে সেই স্মৃতিচারণ করেন সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমার মনে আছে, ২০১৪ সালের সেই সোমবার, সেদিন আমরা যখন প্রথম এই টানেলের পরিকল্পনা করি, তখন চীনের একটা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমাদের কথা হয়। তবে প্রথমে তারা এই টানেল করতে আগ্রহী ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর কনভেনশনাল ডিপ্লোম্যাসির বাইরে গিয়ে যেটা করেছেন সেটার বাস্তব প্রতিফলন হচ্ছে এই টানেল।’

কর্ণফুলী টানেলে চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টুইন টাউন’: প্রধানমন্ত্রী

সেসময়ের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের প্রথমে কথা দিলো, তারা টানেল করে দেওয়ার জন্য সবরকম ঋণ ও সহায়তা দেবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের জুলাই মাসের ফার্স্ট উইকে প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যান। তখন ব্রিজ ডিভিশন থেকে আমাদের ইনডাক্ট করা হলো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখম চীনে গেলাম, সব চুক্তিপত্র নিয়ে যেদিন সন্ধ্যায় মিটিং হবে, তার আগেরদিন রাতে আমাদের জানানো হলো— চীনা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই প্রজেক্টে তারা সহায়তা দিতে প্রস্তুত নন। এরপর আমরা রাত ১টা-২টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে অনেক নেগোসিয়েশন করার পর ওনারা রাজি হলেন না।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব তিনি বলেন, ‘পরের দিন যখন ২টার সময় মিটিং শুরু হলো, তখন প্রধানমন্ত্রী বলার পর চাইনিজ সরকার বিনীতভাবে অসম্মতি প্রকাশ করলেন। প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকবার বলার পরেও তারা সম্মত হননি।’

‘এ জন্য আমরা একটু মনোকষ্টে ছিলাম’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে ডিনারের সময় প্রধানমন্ত্রী একটা আনকনভেনশনাল ডিপ্লোমেটিক আলোচনা তুলে এই টানেলের বিষয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাইনিজ সরকার আমাদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছে। যদি এইভাবে ফিরিয়ে দেয় তাহলে ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে বা মানুষের মধ্যে কী ধরনের মনোভাব তৈরি হতে পারে সেটি উল্লেখ করেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। আরও বলেন, আপনারাই আমাদের ইনভাইট করেছেন, আমরা আপনাদের কাছে চাইনি।’ 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তখন চীনা প্রাইম মিনিস্টার আমাদের ডাকলেন, আর সবাইকে ইন্সট্রাকশন দিলেন। ডাইনিং টেবিলেই চাইনিজ প্রাইম মিনিস্টার ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চাইনিজ কমার্স মিনিস্টার, ফাইন্যান্স মিনিস্টার এবং আমরা যখন আলোচনা শুরু করলাম, তখন  প্রধানমন্ত্রীর কথায় চাইনিজ প্রাইম মিনিস্টার কনভিন্স হলেন। তখন তিনি ভোর ৪টায় একটি লেট নাইট ডিনার আহ্বান করলেন। যেখানে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথাও জানালেন।

সচিব বলেন, ‘তখন প্রধানমন্ত্রী চাইনিজ প্রাইম মিনিস্টারকে বললেন, আপনার আসার দরকার নেই। আমার বড় স্যুইটে বড় ড্রইংরুম আছে, সেখানে বসেই চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলবো। পরে রাত ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর রুমে বসে চাইনিজ কমার্স মিনিস্টার ও আমরা চুক্তিটা স্বাক্ষর করেছি। আর এখানে আনকনভেশনাল ডিপ্লোমেটিক এফোর্ট না থাকলে এটা কোনভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না।’

তিনি বলেন, রাত ১২টায় আমরা যখন চুক্তি স্বাক্ষর করে বের হয়ে যাই তখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের বললেন, তোমরা কোথায় যাচ্ছো। আমি বললাম স্যার (প্রধানমন্ত্রী), আমাদের তো কাজ শেষ। আমরা রুমে চলে যাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, তোমরা কোথাও যাবে না। না খেয়ে আছো। টেবিলে ভাত, সবজি, ডাল, গরুর মাংস আছে খেয়ে যাও। উনি এই বিষয়টিও খেয়াল করেছেন, আমরা কাজ করতে গিয়ে খেতে পারিনি, আসলেই আমরা অভুক্ত ছিলাম। এই যে এত বিপর্যয়ের মধ্যে, এত টেনশনের মধ্যেও আমাদের ব্যক্তিগত দিকগুলোও খেয়াল রেখেছেন, তা নাহলে এটা আসলে বাস্তবে রূপ নিতো না। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

এ সময় এই টানেল নির্মাণে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

খবর: বাংলা ট্রিবিউন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়