Cvoice24.com

মাতারবাড়ির অস্থায়ী জেটিতে জাহাজ ভিড়িয়ে বন্দরের আয় ১০ কোটি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২২ জানুয়ারি ২০২৩
মাতারবাড়ির অস্থায়ী জেটিতে জাহাজ ভিড়িয়ে বন্দরের আয় ১০ কোটি

মাতারবাড়িতে সমুদ্র বন্দর সংশ্লিষ্ট কোন স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী খালাসের জন্য দুবছর আগে মাটি ভরাট করে নির্মাণ করা হয় দুটি অস্থায়ী জেটি। দু’বছরে এসব জেটিতে ভিড়েছে ১১১টি জাহাজ। বন্দর হিসেবে গড়ে উঠার আগেই এসব জাহাজ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে বন্দর। 

মাতারবাড়িতে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা দুটি জেটিতে এখন পর্যন্ত ভিড়েছে ১১০টি জাহাজ। প্রথম জেটি চালু হয় ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে নির্মিত দ্বিতীয় জেটি চালু হয় ২০২১ সালের ১৫ জুলাই। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মত ভিড়ে পানামা পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। এদিকে ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট বিকেলে ভিড়ে শততম জাহাজ ‘দ্য নেক্সট পাওয়ার অ্যান্ড পোর্ট হাব’। এখন পর্যন্ত অস্থায়ী দুই জেটিতে মোট ১১১টি জাহাজ ভিড়েছে।

২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মিত অস্থায়ী দুটি জেটিতে ৪৯টি জাহাজ ভিড়ে। এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৮২ টন পণ্য। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট শততম জাহাজ ভিড়িয়ে এক লাখ ১৭ হাজার ৯১ টন মালামাল হ্যান্ডলিং হয়। এসময় বন্দর আয় করে দুই কোটি আট লাখ ছয় হাজার টাকা রাজস্ব। এভাবে ১১১টি জাহাজে আনা পণ্য খালাস করে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বন্দর।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পর প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এসে খালাস করলে ব্যয় বাড়তো। কিন্তু মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরের জন্য নির্ধারিত জায়গায় দুটি অস্থায়ী জেটি করার কারণে পণ্য খালাসের ব্যয় কমে গেছে। যেমন— চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি মেট্রিক টন পণ্য খালাসে ব্যয় হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। অথচ মাতারবাড়িতে একই পণ্য খালাসে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ৪শ’ টাকা। তাহলে প্রতি মেট্রিক টন পণ্য খালাসে ৮শ’ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষর সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে গড়ে উঠবে এশিয়ার বিজনেস হাব মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। এখানে দুটি অস্থায়ী জেটি তৈরি করে গত দু’বছর ধরে জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্নভাবে লজিস্টিকস সুবিধা দিয়ে আসছে বন্দর। বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি জেটিতে এখন বিদ্যুৎ প্রকল্পের পণ্য নামানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুই জেটিতে ১১১টি জাহাজ ভিড়েছে। এর মাধ্যমে পণ্য খালাস করে প্রায় ১০ কোটি টাকার রাজস্ব এসেছে।

জানা গেছে, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠলে ভারতের আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও নেপাল, ভুটান উপকৃত হবে। ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া থেকে ফিডার জাহাজে করে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে। ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারত, নেপাল, ভুটানের কনটেইনার বা কার্গোই শুধু আসবে না, মাতারবাড়ি থেকেই কলকাতা, হলদিয়াসহ কাছের বন্দরগুলোতে ফিডার সার্ভিস চালু হয়ে যাবে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বাংলাদেশ।

বন্দর জেটিতে গড়ে প্রতিটি জাহাজে ১ হাজার ৮৭৮ টিইইউস কনটেইনার পরিবহন হয়। মাতারবাড়ি বন্দরে ৮ থেকে ১০ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে চ্যানেল সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ২৮৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের ডিজাইন ও ড্রয়িংয়ের কাজও শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকল ২০২৬ সালের প্রকল্পটি অপারেশনে নিতে চায় বন্দর। 

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে বে অব বেঙবগল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট ইনিশিয়েটিভ ঘোষণা করা হয়। ওই ঘোষণার প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে গ্রহণ করা হয় একটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প। ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। তবে মাতারবাড়ীকে একটি হাব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ২৫০ মিটার প্রস্থ ও ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। এ চ্যানেলকে পাশে আরো ১০০ মিটার বাড়িয়ে তৈরি করা হবে গভীর সমুদ্রবন্দর। এই প্রকল্পের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়