Cvoice24.com

২০২৫ সালে অটোমেটেড নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে কাস্টমস

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:২৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
২০২৫ সালে অটোমেটেড নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে কাস্টমস

আন্তর্জাতিক কাস্টম দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সেমিনার ও আলোচনা সভা

ভবিষ্যতে স্টোকহোল্ডারদের উপস্থিতি ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ কাস্টমস সেবা দেবে। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে একটি অটোমেটেড পেপারলেস বা  কাস্টমস সিস্টেম তৈরি করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ২০২৫ সালেই আধুনিক এ পদ্ধতি চালু করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। 

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক কাস্টম দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অডিটরিয়ামে আয়োজিত সেমিনার ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান ।

তিনি বলেন, বিশ্বের ১৮৪টি দেশ কাস্টমস দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। এবারের কাস্টমস দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নার্চারিং দ্য নেক্সট জেনারেশন: প্রমোটিং অ্যা কালচার অব নলেজ-শেয়ারিং অ্যান্ড প্রফেশনাল প্রাইড ইন কাস্টমস’। (ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লালন: কাস্টমসে জ্ঞানচর্চার সংস্কৃতি ও উত্তম পেশাদারিত্বের বিকাশ)। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, আজ কাস্টমসের ৭০ তম জন্মদিন। স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে রাজস্ব আয় বেড়েছে। গত অর্থবছরে ৩ লাখ ১৬৬ কোটি টাকা আয় করে এনবিআর। এরমধ্যে কাস্টমসের অবদান ৮৯ হাজার কোটি টাকা। বাণিজ্য সহজীকরণের কারণে কাস্টমস বিভিন্ন নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে এসাইকুডা, ই-অকশন চালু হয়েছে। বাংলাদেশ কাস্টমসের সকল শাখায় ২০২৫ সাল থেকে অটোমেটেড নেটওয়ার্ক কাজ করবে। 

তিনি বলেন, কাস্টমসকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাস্টমসকে রিস্ক ম্যানেজমেন্টের আওতায় আনা, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট দপ্তর কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের ১১টি স্ক্যানার আছে। আরো ৬টি স্ক্যানার চট্টগ্রাম বন্দরে বসানো সম্ভব হবে। এসাইকুডাতে রেড, গ্রিন ও ইয়েলো চ্যানেল কাজ করছে। এর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি পণ্য দ্রুত খালাস করা যাচ্ছে।  আমরা কাস্টমসের আধুনিকায়নে কাজ করছি। কিন্তু কাস্টমসে পণ্য শুল্কায়নের বিষয়ে সবার অভিযোগ আছে। তবে পণ্য শুল্কায়নে কাস্টমস সময় নেয় ১৫ শতাংশ আর ব্যবহারকারীর ৭৫ শতাংশ। সামনের দিনগুলোতে এনবিআর কিছু রাজস্ব কৌশল হাতে নিয়েছে। আশা করছি সামনে কাস্টমস সকল সমস্যা সমাধান করে আরো শক্তিশালী হবে।

কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান বলেন, প্রতিবারের মত আমরা এবারো কাস্টমস দিবসে মিলিত হয়েছি। আমরা মূলত কাস্টমসের জ্ঞানচর্চা, সংস্কৃতি ও উত্তম পেশাদারিত্বের বিকাশ ঘটাতে চাই। বাণিজ্য ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কাস্টমস। তাই আমাদেরকে সব সময় এগিয়ে থাকতে হয়। ১৯৯৩ এর দিকে এসাইকুডা সিস্টেম চালু হয়। আজ ২০১৪ বা ১৫ তে এসে কাস্টমসে ওয়েব বেইজড চালু হলেও এটা বেশিদূর এগোয়নি। অথচ এখন ২০২২ সাল। এ বিষয় নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের অভিযোগ আছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাস্টমসকে আধুনিকায়ন করা উচিত। তবে কম বিনিয়োগে বেশি লাভ এ ধরনের চিন্তা ভাবনা থেকে নীতি নির্ধারকদের সরে আসতে হবে। কাজেই আধুনিকায়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আমি দেখেছি আমাদের অফিসারদের হাতে স্টেক হোল্ডারদের পেপার থাকলে রাতের ১০টা পর্যন্তও কাজ করছে। এটা আসলে স্বাভাবিক জীবন হতে পারে না।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোশিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আক্তার হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের উন্নয়ন কাজগুলো এখান থেকে আহরণ করা রাজস্বের আয় থেকে হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারলাম এবার তরুণ প্রজন্মের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে কাস্টমস। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট জনগণ। কাস্টমস ডাটা এনালাইসিস, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সহজীকরণ, শুল্কায়ন, চোরাচালান রোধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কাস্টমস এগিয়ে যাওয়া মানে দেশ এগিয়ে যাওয়া। কাজেই কাস্টমসে বিরাজমান সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।

চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আবেদা মোস্তফা বলেন, আমাদের নারীদেরকে কাস্টমস সব সময় পাশে রাখেন। আমরা নারীদের যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে না পারি তাহলে দেশ এগোবে না। আমাদের আজ যা অর্জন, সেখানে নারীদের অবদান আছে। কাজেই সামনেও সকল কাজে নারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। কিভাবে নারীরা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে পারে আমরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এ কাজে নারীদের সম্পৃক্ত করতে পারলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট জনগণ লাগবে। আমাদের কথায়, চালচলনে স্মার্ট হতে হবে। আমাদের হতে হবে নলেজ বেইজড। পাশাপাশি আমি মনে করি অটোমেশন বা আধুনিকায়নের কোন বিকল্প নাই। এটা করতেই হবে। কাস্টমসের সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে। আমি জানি না এটা কেন হচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে কথা বলব। তার উপর কাস্টমসে রয়েছে জনবল  ও ল্যাব সংকট। আপনারা এ সমস্যা দূর করার জন্য কাজ করেন। কাস্টমস দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সিএন্ডএফ, শিপিং এজেন্ট, বন্দর, কাস্টমস ও ব্যবসায়ীরা যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করে তাহলে আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা চাই আমাদের মেধা, জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিতে।  

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ট্যাকসেস আপীলাত ট্রাইব্যুনাল সদস্য সফিনা জাহান, চট্টগ্রাম কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খলিলুর রহমান, চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী এবং চট্টগ্রাম কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক মো. মাহবুজ্জামান প্রমুখ।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়