Cvoice24.com

কম্পিউটার খুললেই কাস্টমস অফিসার বলে সার্ভার সমস্যা!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
কম্পিউটার খুললেই কাস্টমস অফিসার বলে সার্ভার সমস্যা!

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য থেকে সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান হলো চট্টগ্রাম কাস্টমস। ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। জনবল সংকট আর অপর্যাপ্ত ল্যাবের বিষয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আধুনিকায়নের নামে দশ বছর আগে চালু হওয়া অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমটি এখন স্টেক হোল্ডারদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দশ বছরেও হয়নি সার্ভার সমস্যার সমাধান। উল্টো কাস্টমস অফিসার কম্পিউটার খুললেই বলে সার্ভার সমস্যা। ফলে অর্থ ও সময় অপচয় রোধের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চলমান সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্টেক হোল্ডাররা। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জন্য অনুমোদিত পদ রয়েছে ১ হাজার ২৪৮টি। এর বিপরীতে বর্তমানে কাজ করছেন ৬১২ জন। এরমধ্যে প্রথম শ্রণির ২১০ পদের বিপরীতে ১১৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণির ৪৯৭ পদের বিপরীতে ২৫৮, তৃতীয় শ্রেণির ৪২৩ পদের বিপরীতে ১৬৮ জন ও চতুর্থ শ্রেণির ১১৮ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৯৫ জন।

প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদেও আছে সংকট। এরমধ্যে ২ জন অতিরিক্ত কমিশনারের পদের মধ্যে ১টি, ৫ জন যুগ্ম কমিশনার পদের মধ্যে ২টি, ১৬ জন ডেপুটি কমিশনার পদের মধ্যে ৩টি, ৪৭ জন সহকারী কমিশনার পদে ৩০টি, ১১৯ জন রাজস্ব কর্মকর্তা পদের মধ্যে ৪৬টি এবং ৪৮৭ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদের মধ্যে ২২৯টি পদই খালি রয়েছে। 

এদিকে পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ল্যাব থাকলেও তা অনেকটাই অকার্যকর। সেখানেও পর্যাপ্ত জনবলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে একটি পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা দুদিনে শেষ হবার কথা থাকলেও এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আমদানি করা পণ্যগুলো দু সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্দরে পড়ে থাকে। অনেকে বাধ্য হয়ে পণ্যের নমুনা ঢাকায় পাঠালেও তা চট্টগ্রামে আসতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগছে। 

সূত্র জানায়, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অনুযায়ী চট্টগ্রাম কাস্টমসে একজন প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, তিনজন উপ-প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, দুজন রাসায়নিক পরীক্ষক এবং ছয়জন সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক থাকার কথা। 
দীর্ঘদিন ধরে আবদুল হান্নান নামের একজন ল্যাব পরীক্ষক পুরো বিষয়টিই তদারকি করতেন। গতবছরের শুরুতে তিনি অবসরে যান। এরপর থেকেই হান্নানের নিচের পদে থাকা সহকারী পরীক্ষক হেলাল হাসান কয়েকজন অফিস সহকারীকে সাথে নিয়ে বর্তমানে ল্যাব পরিচালনা করছেন। পণ্য পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন ২শ থেকে ২৫০ নমুনা আসলেও ল্যাবে লোকবল সংকট থাকায় প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি নমুনা প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন তারা। অর্থাৎ সবগুলো পদই শূন্য পড়ে আছে। বর্তমানে মাত্র একজন সহকারী পরীক্ষক দিয়ে চলছে ল্যাব কার্যক্রম। 

অপরদিকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে গতিশীল করার জন্য ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অটোমেশনের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড পদ্ধতি চালু হয়। অথচ সিস্টেম আপডেট করার নামে ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ থাকে সার্ভার। এতে করে আমদানি-রপ্তানি পণ্য চালানের বিল অব এন্ট্রি দাখিল, শুল্কায়ন, ডিউটি পেমেন্ট এবং বন্দর থেকে ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এতে করে বিপাকে পড়েন স্টেক হোল্ডাররা। 

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের শুল্কায়নে প্রতারণা ও জালিয়াতি রোধ করতে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর দেশের সব শুল্ক স্টেশনসহ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চালু করা হয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি সিস্টেম। ওই সময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের মাধ্যমে জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে। কিন্তু ওটিপি সিস্টেম কোনো কাজে আসেনি। বরং চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি ব্যবহার করে প্রতারক চক্র আমদানি পণ্য খালাস করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। 

সিএন্ডএফ এজেন্ট ও পণ্যের আমদানিকারকরা অভিযোগ করে বলেন, আমদানিকারকরা পণ্য আমদানির মূল্য স্থানীয় টাকায় ব্যাংকে পরিশোধ করে দিচ্ছেন। কিন্তু ডলারের অভাবে ব্যাংক পণ্যের রপ্তানিকারককে এ দাম পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে বর্তমানে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তার উপর পণ্য খালাস করলেও ল্যাবে জনবল সংকট থাকায় আমদানি পণ্যের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে দেরি হচ্ছে। ফলে পণ্যগুলো বন্দরে রেখে দিতে হচ্ছে। এজন্য বাড়তি চার্জ গুণতে হচ্ছে। 
  
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোশিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আক্তার হোসেন বলেন, স্বল্প লোক দিয়ে চলছে কাস্টমস। ল্যাবেও নেই জনবল ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। যা আছে এটা নামমাত্রই বলা যায়। কাস্টমসের মত জায়গায় ল্যাবে লোকবল সংকট। এটা লজ্জাজনক। তার উপর রয়েছে সার্ভার সমস্যা। কাস্টমস অফিসার কম্পিউটার খুললেই বলে সার্ভার সমস্যা। এসব কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কাস্টমস এগিয়ে যাওয়া মানে দেশ এগিয়ে যাওয়া। কাজেই এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মতো চট্টগ্রাম কাস্টমসকে আরো বেশি সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। প্রথমেই জনবল সংকট ও সার্ভার জটিলতা দূর করতে হবে। তারপর ভাবতে হবে অত্যাধুনিক করার বিষয়ে। সঠিকভাবে রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়ায় আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে আটকে থাকছে। এ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে এটা হবে কাস্টমসের চরম ব্যর্থতা। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, বাণিজ্য ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কাস্টমস। তাই আমাদেরকেও সব সময় এগিয়ে থাকতে হবে। স্টেকহোল্ডারদের যে অভিযোগগুলো আছে সেগুলো মাথায় রেখে কাস্টমসকে আধুনিকায়ন করার কাজ করছি আমরা। রাসায়নিক পরীক্ষক ও জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা এনবিআরকে জানিয়েছি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়