Cvoice24.com

লাখ লাখ টন আমদানি, তবুও লাগামহীন সাত পণ্যের বাজার

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৭:০১, ১৭ মার্চ ২০২৩
লাখ লাখ টন আমদানি, তবুও লাগামহীন সাত পণ্যের বাজার

এক সপ্তাহ পর শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। গত দুই মাসে ৫০ জাহাজে করে প্রায় ১২ লাখ টন চাল, ডাল, গম, ভুট্টা, চিনি, খেঁজুর ও ছোলা আমদানি হয়েছে। এরপরও পাইকারি বাজারে দাম নাগালের বাইরে পণ্যগুলোর। যার উত্তাপ ছড়াচ্ছে খুচরা বাজারেও।

গত মাসের শেষ দিকে চারটি জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণে চাল ও গম আসে। এরমধ্যে দুটি জাহাজে ২৮ হাজার টনের কিছুটা বেশি চাল ও দুটি জাহাজে করে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৫৬ টন গম আসে। এমভি ভিভা গ্লোবাস, এমভি উন হে, এমভি ব্লু লোটাস ও এমভি সুপার ট্রেডার নামের জাহাজ থেকে ইতোমধ্যে চাল ও গম খালাস শেষ হয়েছে। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৫০টি জাহাজে করে ১২ লাখ টন চাল, ডাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও ছোলা আমদানি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৭ হাজার ৯৯২ মেট্রিকটন চাল, ৪৪ হাজার ৪৪৭ মেট্রিকটন ডাল, ৫ লাখ ৩৪ হাজার টন গম, ৪২ হাজার ৯৫১ মেট্রিকটন ভুট্টা, ২ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিকটন চিনি ও ৪৫ হাজার ৭৭৪ মেট্রিকটন ছোলা আমদানি করা হয়েছে। 

জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। এই সুযোগে আমদানি বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, একটি পণ্য আমদানিকারক থেকে ভোক্তার কাছে আসতে কয়েক দফা হাত বদল হয়। তাই পণ্যর দাম বেড়ে যাচ্ছে।  

বিশ্ববাজারে বর্তমানে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বুকিং রেট নিন্মগামী। এর সুযোগ নিয়েছে আমদানিকারকরা। আমদানি থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য পৌঁছাতে হাতবদল হয় অন্তত ৮ বার। আর প্রতি হাত বদলে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। যে কারণে রেকর্ড পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানির পরও দাম সাধারণ মানুষের নাগালে আসছে না।

পাইকারি বাজারে পাইজাম, নাজিরশাইল ৩শ টাকা এবং জিরাশাইল, মিনিকেট ও কাটারি জাতের চালে ১শ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিবস্তা পাইজাম ২ হাজার ৬শ ও ও নাজিরশাইল ৩ হাজার ৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া জিরাশাইল সাড়ে ৩ হাজার, মিনিকেট সিদ্ধ ২ হাজার ৭শ এবং ২৫ কেজি ওজনের কাটারি (সিদ্ধ) ১ হাজার ৯শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া চিনিগুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৭শ টাকায়।

এদিকে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি ছোলায় ৫শ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিমণ ছোলা ৩ হাজার ১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে প্রতিকেজি ছোলার দাম পড়ছে ৮৩ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারি থেকে খুচরায় ১২ টাকা বেশি দরে ছোলা বিক্রি হচ্ছে। 

চিনির বাজারে প্রতিমণে ১শ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিমণ চিনি ৩ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে প্রতিকেজি চিনির দাম পড়ছে ১০৫ টাকা। অথচ খুচরা দোকানে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছ ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। এদিকে পাইকারি বাজারে মব ধরনের ডালের কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে মাঝারি আকারের তুরস্কের মসুর ডাল ১২৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মুগ ডাল ১১৮ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে আমদানি করা সব ধরনের খেঁজুরের দামও বেড়েছে। জাহিদি খেজুরের কেজিতে ৪শ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২শ, মরিয়ম খেঁজুর (৫ কেজি) ৩শ টাকা বেড়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, মাবরুম খেজুরে ৮শ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ২শ টাকা, আজওয়া খেজুরে ৪শ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬শ টাকা ও কেজিতে ৪শ টাকা বেড়ে মাসরুক খেজুর ১ হাজার ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, গত মাসে ভোগ্যপণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৩টি জাহাজে করে বিপুল পরিমাণে চাল, ডাল, গম, ভুট্টা, সয়াবিন তেল, পাম তেল, খোলা চিনি আমদানি হয়েছে। বন্দরে আসা ভোগ্যপণ্যগুলো আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে খালাস করে দিচ্ছি। 

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট ঠেকাতে চিটাগং চেম্বার থেকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রসাশনকেও জিরো টলারেন্স প্রয়োগের আহ্বান করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসেনর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাস এলেই দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঘটানোর চেষ্টা করে। যার ফলে আমরা আগে থেকেই অভিযান শুরু করেছি। যারাই কারসাজি করবে বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ভোক্তার সাথে প্রতারণা ঠেকাতে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা সাথে সাথে তা নিষ্পত্তি করছি। আমাদের জনবল কম, তবুও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভোক্তারা প্রতারণার শিকার হলে ১৬১২১ ও ৩৩৩ নম্বরে কল করে অভিযোগ দিতে পারবেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়