Cvoice24.com

বহিরাগতদের সঙ্গে ‘হাত মিলিয়ে’ দাপ্তরিক কাজ সামলাতেন অফিস সহায়ক!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ২৯ মে ২০২৩
বহিরাগতদের সঙ্গে ‘হাত মিলিয়ে’ দাপ্তরিক কাজ সামলাতেন অফিস সহায়ক!

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। বহিরাগতদের দাপট ঠেকাতে এনবিআরের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্রও বাধ্যতামূলক করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এরপরও কাস্টমসের বিভিন্ন শাখায় দেখা মিলছে বহিরাগতদের। সম্প্রতি বহিরাগতদের দিয়ে দাপ্তরিক কাজ সামলানোর অপরাধে লিটন দাশ নামে এক অফিস সহায়ককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

গত ২৫ মে কাস্টমসের অধীনস্থ বিভিন্ন শাখা পরিদর্শনে যায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের প্রশাসন শাখা। এসময় প্রসেনজিৎ দাশ নামে এক বহিরাগতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রসেনজিৎ নিজেকে কাস্টমসের অফিস সহায়ক লিটন দাশের মামাতো ভাই বলে পরিচয় দেয়। এদিকে লিটন দাশ কাস্টমস হাউসের হল রুম, শুল্কায়ন সেকশন (বি)-৫ ও অতিরিক্ত প্রশাসন শাখায় কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে প্রসেনজিতের সহায়তা নিতেন। এর বিনিময়ে প্রসেনজিৎকে পারিশ্রমিকও দিত লিটন।

কাস্টমসের একাধিক সূত্র জানায়, বহিরাগতরা নিজেদের কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শাখায় দেদারসে ঘুরে বেড়ায়। এরা মূলত বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারির সহযোগী হিসেবে কাজ করে, ঘুষ লেনদেনে সহায়তা করে। কাস্টমসের যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতি এসব বহিরাগতদের মাধ্যমেই হয়। তবে কাস্টমস হাউসের দাপ্তরিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সব ধরনের বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধে এনবিআরের দেয়া আদেশ এখনও জারি রয়েছে। অথচ এ আদেশ উপেক্ষা করে কাস্টমস হাউসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই।

চট্টগ্রাম কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু সিভয়েসকে বলেন, ‘দিনে ২শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। অথচ এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতি এনবিআরের কোন নজরদারিই নেই। কাস্টমস হাউসের বহিরাগতের প্রবেশ নতুন কোন ঘটনা নয়। তবে এটা আমাদের সবার জন্য ক্ষতিকর। কাস্টমস হাউসে জনবলের সংকট রয়েছে, তাই আমরা মনে করি সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের প্রয়োজনে এসব বহিরাগতদের ব্যবহার করেন। তবে আমরা চাই, কাস্টমসে কোন বহিরাগত লোক না থাকুক। এর জন্য কঠোর নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত এনবিআর ও কাস্টমসকেই নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টটমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী সিভয়েসকে বলেন, ‘এক সময় কাস্টমস হাউসে বহিরাগতদের আনাগোনা বেশি ছিল। আমরা চাই না তাদের মাধ্যমে কাস্টমসের পরিবশ নষ্ট হোক।’

তিনি বলেন, ‘বহিরাগতদের সহায়তা নিয়ে অফিসের দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করছিলেন এক অফিস সহায়ক। এটা সম্পূর্ণ বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। তাই সম্প্রতি তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মোট কথা, আমরা এ ব্যাপারে আর ছাড় দিতে চাই না।’

অর্থ লেনদেনের সময় তাকে হাতেনাতে ধরেছেন কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওই অফিস সহায়ক ঘুষ লেনদেন করেছেন এমন সময় হাতেনাতে ধরতে পারিনি। পাশাপাশি ওই কর্মচারি বহিরাগত ব্যক্তির সহায়তায় অতীতে ঘুষ নিয়েছে এমনটাও আমরা জানতে পারিনি। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তারপর সব খতিয়ে দেখা হবে।’

উল্লেখ্য, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই আমদানি শুল্কায়ন সেকশন-৩ এবং হিসাব শাখায় কাজ করতেন মো. আজগর আলী এবং মো. ওবায়দুন্নবী নামে দুই বহিরাগত। ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি তারা শুল্ক গোয়েন্দার হাতে ধরা পড়ে। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাস্টমসের স্পর্শকাতর সফটওয়্যার কক্ষ থেকে দুই যুবককে হাতেনাতে আটক করেছিল আনসার সদস্যরা। সে মামলা এখনো চলমান আছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়