Cvoice24.com

রড-সিমেন্টের দাম নিয়ে ‘শঙ্কা’ চট্টগ্রামের নির্মাণ শিল্পে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৯, ৫ জুন ২০২৩
রড-সিমেন্টের দাম নিয়ে ‘শঙ্কা’ চট্টগ্রামের নির্মাণ শিল্পে

নতুন অর্থ বছরে নির্মাণ শিল্পের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিঙ্কার আমদানিতে শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৭০০ টাকা। এ কারণে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। অন্যদিকে রড তৈরির কাঁচামাল ম্যাঙ্গানিজ আমাদানিতে ১ শতাংশ উৎসে কর কমানো হচ্ছে। তবে তাতে কোনভাবে দাম কমার সম্ভাবনা নেই রডের। গ্যাস বিদ্যুতের অস্থিতিশীলতায় উল্টো দাম বড়ার সম্ভাবনা দেখছে রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই ফের দাম বাড়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চট্টগ্রামের নির্মাণ শিল্পে আবাসন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা।

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বর্তমানে জাহাজ ভাড়া ও বিশ্ববাজারে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও সিমেন্ট তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ফুয়েল, কয়লা ও প্রধান উপকরণ ক্লিংকারের দাম কমেছে। কিন্তু এখনো এলসি খুলতে সমস্যা হওয়ায় এসব কাঁচামাল আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে। তার উপর গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট তো আছেই। ফলে পণ্যের উৎপাদনও কমে গেছে। কাজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে গেলে রড-সিমেন্টের দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই।

গত বছরের এই সময়ে প্রতি টন ভালো মানের রড ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটন রড বিক্রি হচ্ছে লাখ টাকায়। এদিকে গতবছর ৪শ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া সিমেন্ট বর্তমানে কোম্পানিভেদে ৫১৬ থেকে ৫৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বিএসআরএম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত সিভয়েসকে বলেন, রড তৈরির কাঁচামাল ম্যাঙ্গানিজ আমদানিতে উৎসে কর ১ শতাংশ কমানো হয়েছে। এটা রডের দাম কমাতে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। বরং বর্তমানে এলসি খুলতে সমস্যা হওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচামাল আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তার উপর গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা তো আছেই। এসব কারণে আমাদের কারখানাগুলোতে ৮০ শতাংশ উৎপাদন কাজ চলমান আছে। সামনে গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যা বাড়লে প্রতিটন রডে আরও ৫ শতাংশ দাম বেড়ে যাবে। এক কথায় আমরা কোন সুখবর দিতে পারছি না। 

মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাবে প্লট-ফ্ল্যাট

নির্মাণসামগ্রীর বাড়তি দাম এতদিন ভুগিয়েছিল আবাসন খাত সংশ্লিষ্টদের। এবারের বাজেটে প্লট বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের (নিবন্ধন) উপর বাড়তি করারোপ করা হয়েছে। আগে যেটা ৪ শতাংশ ছিল এখন তা ৮ শতাংশ করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাবে প্লট-ফ্ল্যাট।  

আবাসন সংশ্লিষ্টদের দাবি, ফ্ল্যাটের দাম বাড়া-কমা নির্মাণসামগ্রীর উপর নির্ভর করে। অথচ রড-সিমেন্ট, ইট বালু কোন কিছুই নাগালের মধ্যে নেই। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাটের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। 

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবদুল কৈয়্যুম চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, এবারের বাজেটে নির্মাণসামগ্রীর বাইরেও আমাদের রেজিস্ট্রেশনের (নিবন্ধন) উপর বাড়তি করারোপ করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আগে যেটা ৪ শতাংশ ছিল এখন তা ৮ শতাংশ করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ফ্ল্যাট এবং প্লটের ব্যবসা স্থবির হয়ে যাবে। নির্মাণসামগ্রী তো আছেই। এরসাথে নতুন করে এ বাড়তি চাপ যোগ হলো। আমরা চাই হাতে এখনো সুযোগ আছে। বিষয়টা আবার রিভিউ হোক। সবাই মিলে সুন্দর একটা সিদ্ধান্তে আসুক।

নতুন প্রকল্পে ‘স্বপ্ন‘ দেখছেন চট্টগ্রামের চার হাজার ঠিকাদার

দীর্ঘদিন ধরে রড-সিমেন্টের ঊর্ধ্বমুখী দামে ভুগেছেন চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রকল্পে জড়িত চার হাজার ঠিকাদার। ফলে প্রকল্পের কাজেও নেমে এসেছিল স্থবিরতা। নতুন অর্থবছরে নতুন প্রকল্পে স্বপ্ন বুনছেন তারা। 

চট্টগ্রামের ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বর্তমানে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এসব প্রকল্পের অধিকাংশই ২০১৮ সালের দিকে। ফলে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়লেও প্রকল্পগুলোতে দর পুনর্নির্ধারণ করার সুযোগ ছিল না। নতুন প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্মাণসামগ্রীর দাম বিবেচনা করার প্রত্যাশায় আছেন তারা।

চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন সেফুল সিভয়েসকে বলেন, বর্তমানে ইট, বালু, রড, সিমেন্টের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমরা তো বিটুমিনও খুঁজে পাচ্ছি না। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়লেও আমরা এতদিন প্রকল্প ব্যয় যা আছে তাতেই খরচ সামলেছি। এই মাসে নতুন প্রকল্প আসবে। আশা করছি সবকিছুই বিবচনা করে প্রকল্পে দর নির্ধারণ করবে সরকার।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়