৬ বছর ধরে ‘লাপাত্তা’ কাস্টমস কর্মকর্তা!
তারেক মাহমুদ
কোথাও কোন হারানো বিজ্ঞপ্তি নেই, নেই থানায় দায়ের করা কোন নিখোঁজ ডায়েরি, কিন্তু গত ৬ বছর থেকে ‘লাপাত্তা’ লতিফুল কবির। চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তিনি। বারবার চিঠি পাঠিয়ে বা ফোন করেও তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। শেষমেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সরকারি কর্ম কমিশনের যৌথ সিদ্ধান্ত হয় তাকে অপসারণের, এটাই সরকারি চাকরির কঠোর শাস্তি ।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ থেকে কর্মস্থলে আসা বন্ধ করে দেন লতিফুল কবির। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৯ আগস্ট তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। পাশাপাশি ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ সম্বলিত লিখিত জবাব চেয়ে তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি পাঠায় এনবিআর। কিন্তু এই কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন উত্তর দেননি এবং ব্যক্তিগত শুনানির জন্যও কোন আগ্রহ দেখান নি। পরবর্তীতে ওই বছর অভিযুক্ত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তাই চলতি বছরের ১২ মার্চ ওই কর্মকর্তার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় দ্বিতীয় বার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় এনবিআর। কিন্তু গত ২৪ ও ২৭ এপ্রিল চিঠিগুলো ডাক বিভাগ থেকে এনবিআরে ফেরত আসে। এসব চিঠির খামে প্রাপকের মোবাইল বন্ধ, প্রাপকের পত্র বিলীকালীন সময়ে তালাশে না পাওয়াতে ফেরত ইত্যাদি লিখিত মন্তব্য দেয় ডাক বিভাগ।
প্রথমবারের কারণ দর্শানোর চিঠিতে ১০ কার্যদিবসে এবং দ্বিতীয়বার পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব ৭ কার্যদিবসের মধ্যে না দেওয়ায় এনবিআর ওই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ চায়। তখন সরকারি কর্ম কমিশন এনবিআরের সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করে এবং গত ১১ সেপ্টেম্বর এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি অনুযায়ী লতিফুল কবিরকে চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কার্যালয়ে গেলে ডেপুটি কমিশনার আব্দুল বাতেন সিভয়েস প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা অধিকাংশ কর্মকর্তা চট্টগ্রামে বদলি হয়ে এসেছি। তাই ওই কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কোন তথ্য আমাদের কাছ নেই। তবে বিধি মোতাবেক একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ২ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে বছরের পর বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারে এনবিআর। ওই কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অনেকে চাকরি থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে চলে যান। এ ঘটনার ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে বলে আমাদের ধারণা। তবে ওই কর্মকর্তাকে চাকরি হতে অপসারণের কোন চিঠি এখনো আমাদের হাতে আসেনি।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘আমি গত বছরের আগস্ট মাসে চট্টগ্রামে যোগদান করেছি। তাই ওই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিধান নেই। তাকে বারবার চিঠি দেয়ার পরও হদিস না মেলায় এনবিআর নিয়ম মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই এনবিআর এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবে।’