চামড়ার জন্য ৮ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুত
শুভ্রজিৎ বড়ুয়া, সিভয়েস২৪
কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন মজুদ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কিন্তু পর্যাপ্ত ট্যানারি না থাকায় চামড়া এক মাসের বেশি সময় মজুদ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন চামড়া আড়তদাররা। এবারের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুত করা হয়েছে বলে জানা যায়। দাম কম থাকা পাশাপাশি লবণ মজুতের পরিমাণ চাহিদার প্রায় তিন গুণ বেশি বলে জানান লবণ মিল মালিকরা।
চামড়া আড়তদার ও লবণ মিল সূত্রে জানা যায়, এবারও কোরবানির ঈদে সাড়ে ৩ লাখ কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। কোরবানি পশুর চামড়ায় চর্বি ও মাংস আটকে থাকার কারণে প্রতি পিচ গরুর চামড়ায় আনুমানিক ১০ কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের আড়তগুলোতে লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। এছাড়াও জেলার সব উপজেলাগুলো মিলিয়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদা রয়েছে। তার বিপরীতে চট্টগ্রাম লবণ মিল মালিকদের কাছে মজুত রয়েছে ২২ হাজার মেট্রিক টন।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন সিভয়েস২৪-কে বলেন, গতবার তিন লাখ ৪৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিলো। এরমধ্যে আড়াই লাখের বেশি ছিল গরুর চামড়া। এবার গরু–ছাগল–মহিষ মিলে সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট আছে। গুদাম ও লোকবল নিয়ে সবারই প্রস্তুতি শতভাগ। এছাড়া অধিকাংশের লবণও মজুদ করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে চামড়া সাত থেকে ১০ দিন সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশনা আগে না থাকলেও আমরা এক মাসের বেশি সময় ধরে চামড়া সংরক্ষণ করতাম। আগে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ছিল ১১২জন। আমাদের সমিতির বাইরেসহ আরও ৩৫-৪০ জনের মতো ছিলো। ট্যানারি ছিলো ২২টি। এখন ৩০–৪০ জনের বেশি কেউ চামড়া কিনে না। রিফ লেদার ছাড়া আর কোনো ট্যানারি নাই। তাই চামড়া সংগ্রহ করে মাত্র আমরা ঢাকার ট্যানারিতে পাঠাতে পারতাম না। তাই মাস দেড়-এক চামড়া লবণ দিয়ে আমাদের সংরক্ষণ করতে হতো।’
ঢাকার কোনো ট্যানারি থেকে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও কেউ যোগাযোগ করেনি। আগামী ১৭ জুন বাংলাদেশে পবিত্র কোরবানির ঈদ হবে। এরপরের দুই দিনও কিছু কিছু জায়গায় পশু কোরবানি হবে। ওই সময় পাড়া–মহল্লা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে বা সংগ্রহ করে মৌসুমী ক্রেতারা তা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে। তাই ট্যাানারিগুলোও এখন যোগাযোগ করছে না। তারা ঈদে দুই-তিন দিন পর থেকে যোগাযাগ করবে।’
চামড়া নিয়ে সার্বিকভাবে কোনো শঙ্কা দেখছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাম নিয়ে একটা শঙ্কা আছে। তবে এবার লবণ বস্তা প্রতি (৭৪ কেজি) একশ টাকা কমে পেয়েছি। তবে এবছর গরমের তীব্রতা একটু বেশি। বেশি গরমে চামড়া ঠিক রাখা কঠিন। তাই আমরাতো লবণ ভালোভাবে দিয়ে চামড়া মজুদ করবো। এ কাজটা যেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও ঠিকভাবে করেন।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবীর সিভয়েস২৪-কে জানান, ‘এবারের তথ্যানুযায়ী আমাদের লবণের চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রাম জেলায় ৮ হাজার মেট্রিক টন। তার বিপরীতে আমাদের কাছে মজুদ আছে ২২ হাজার মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ আড়তদাররা লবণ সংগ্রহ করেছে। আর যারা করেনি, তারাও কালকের মধ্যে লবণ নিয়ে নিবে। এছাড়া অনেকে এতিমখানায় চামড়া দিয়ে যায়। কিন্তু এতিমখানায় লবণ না থাকায় তারা চামড়া মজুদ করতে পারে না। তাই এবার আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায় পর্যাপ্ত লবণ বিনামূল্যে দিয়েছি। আশা করি, লবণ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’