Cvoice24.com

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জের
পুরো প্রাণ পায়নি খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই

মিনহাজ মুহী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ২৫ জুলাই ২০২৪
পুরো প্রাণ পায়নি খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই

সম্প্রতি কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের ব্যবসা-বাণিজ্যে। টানা চার দিনের অচলাবস্থা শেষে বুধবার সব দোকানপাট খুলেছে। তবে বেচাকেনা খুবই কম। অবশ্য বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ তা কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই ঘুরে দেখা গেছে, অন্য সময়ের মতো খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মানুষের ভিড় নেই। ক্রেতা সংকটে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে কিছু দোকানে ক্রেতার কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। এছাড়া, সড়কে মালামালভর্তি ট্রাকের সংখ্যাও খুবই কম। পাশাপাশি বিক্রি ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাজ না পেয়ে বসে আছেন এখানকার শ্রমিকরা। প্রভাব পড়েছে তাদের দৈনন্দিন আয়ে।

জানা গেছে, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে তিন হাজার শ্রমিক তালিকাভুক্ত। অচলাবস্থা শেষে এখন খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতা নেই।

খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস সিভয়েস২৪’কে বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ক্রেতাদের আনাগোনা কম। আগে দৈনন্দিন হিসাবে যা বিক্রি হতো এখন তা অনেক কমে এসেছে। আশা করছি, আজ বিকাল থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হবে এবং বেচাবিক্রিও বাড়বে।’

দাম কম পণ্যের!

চারদিনের অচলাবস্থা শেষে দোকানপাট খুললেও বেচাবিক্রি না থাকায় পণ্যের দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি— চারদিনের ক্ষতি পোষাতে কতদিন সময় লাগবে তা অজানা। তবে লাভের অংশ কম রেখে ক্রেতাদের কাছে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে পণ্য।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজ-ডালের দাম পাইকারিতে কমেছে কেজিতে ৪ থেকে ৮ টাকা। গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৯৫ টাকা। তবে একই পেঁয়াজ বুধবার থেকে বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯১ টাকায়।

এদিকে, বিভিন্ন প্রকার ডালের দামও কমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, প্রকারভেদে পাইকারিতে ডালের দামও কমেছে ৪ থেকে ৮ টাকা করে। বুধবার থেকে সব ডালের দাম কমানো হলেও বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এসব ডালের দাম ছিল ৮ টাকা বেশি।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিকেজি মোটা মসুর ১০২ টাকা, মটর ৭১ টাকা, মটর ডাল ৭৪ টাকা, চনার ডাল ৯৩ টাকা, চিকন মসুর ১২৮ টাকা ছিল। তবে বুধবার থেকে তা ৪ থেকে ৮ টাকা কমে মোটা মসুর প্রতিকেজি ৯৮ টাকা, মটর ৬৬ টাকা, মটর ডাল ৭০ টাকা, চনার ডাল ৮৮ টাকা এবং চিকন মসুর ১২৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘কারফিউ জারির কারণে আমাদের ব্যবসা হয়নি। এসব (চার) দিনের যে ক্ষতি হয়েছে তা আমাদের পোষাতে অনেক সময় লাগবে। এখন দোকান চালু থাকলেও বেচাবিক্রি নেই। কিছু ক্রেতা আসছেন তাদের আগের চেয়ে কম দামে পণ্য দিয়ে দিচ্ছি। কারণ, আমাদের মূল টার্গেট অন্তত ব্যবসার টাকাটা চলমান রাখা।’

পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় বেশি

খুচরা পর্যায়ে দেখা গেছে, মোটা মসুর ডাল আগের দামেই রয়েছে। খুচরায় প্রতিকেজি মসুর ডাল ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর পেঁয়াজও খুচরায় আগের দামে অর্থাৎ প্রতিকেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু, ডাল, পেঁয়াজ, চিনিমহ সকল পণ্যের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় আগের দামই স্থির রয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার যে দামে পণ্য কেনা হয়েছে; সেই দাম ধরেই বিক্রি করা হচ্ছে। নতুন করে পণ্য আনতে গিয়ে যদি আগের চেয়ে পণ্য আরো কম দামে কিনতে পারি। তাহলে ওইভাবে আমরাও দাম কম রেখে পণ্য বিক্রি করবো।

অলস সময় কাটছে শ্রমিকদের; প্রভাব পড়েছে দৈনন্দিন আয়ে

বিক্রি ও সরবরাহ এখনো আগের মতো স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রায় অলস সময় কাটাচ্ছেন এখানকার শ্রমিকরা। তাদের দৈনন্দিন আয়েও প্রভাব পড়েছে। শ্রমিকরা বলছেন, এমনিতেই বেচাকেনা আগের চেয়ে কমে গেছে। এর মধ্যে সহিংসতার ঘটনায় খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে গাড়ি আসতে না পারায় আড়ত থেকে পণ্য বিক্রি আরও কমে গেছে। এছাড়া এখন ক্রেতাও কম।

নোয়াখালীর বাসিন্দা শফিক আহমেদ পরিবার নিয়ে থাকেন চট্টগ্রাম শহরের একটি ভাড়া বাসায়। আর কাজ করেন খাতুনগঞ্জের একটি আড়তে। গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ চারদিন কোনো আয় হয়নি তাঁর। আর বুধবার থেকে দোকানপাট খোলা থাকলেও বেচাকেনা কম হওয়ায় মেলেনি আশানুরুপ আয়ও।

শফিক সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘দিনে যা আয় হয় তা দিয়ে খাওয়ার জোটে। একদিন রোজগার না হলে পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকতে হয়। গত চারদিন আমরা শ্রমিকরা কেমন ছিলাম সেটা একমাত্র আমরাই জানি। এ সময়ে কোনো টাকা আয় হয়নি। গতকাল সবকিছু খোলা থাকলেও আয় ভালো হয়নি। কিছু হয়েছে; যা অন্য সময়ের তুলনায় খুবই কম। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকালে কিছু আয় হলে হয়তো কোনো রকম সারানো যাবে।’

পাশে থাকা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘গত কয়েকদিন তো সবকিছু বন্ধ ছিল। যার কারণে কাজ করতে পারিনি। তার কারণে আয়ও হয়নি। গতকাল এবং আজ কয়েকটি ছোট ছোট ট্রাকে মাল তুলেছি। গতকাল বিকালে ২০ বস্তা মাল ট্রাকে তুলে ২২০ টাকা আয় হয়েছে। আজকের অবস্থা বিকেলে বলতে পারবো। কাজ নেই দেখে অনেকে অলসভাবে সময় কাটাচ্ছে। কারণ, এ কাজ ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।’

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও প্রাণহানি ঠেকাতে চট্টগ্রামে জারি করা অনির্দিষ্টকালের কারফিউ বুধবার ও বৃহস্পতিবার ৯ ঘণ্টা শিথিল রয়েছে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের মানুষজন স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য ঘরের বাইরে আসতে পারছেন। একইসঙ্গে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলছে সরকারি-বেসরকারি সব অফিসের কার্যক্রম।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: