বন্দরে কনটেইনার জট নিরসনে কাজ চলছে : নৌ প্রতিমন্ত্রী
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ইন্টারনেট নির্ভর হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম বন্ধের কারণে বন্দরে কনটেইনার জট লেগে গেছে। এই জট নিরসনে কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটির এক নম্বর জেটিতে বন্দর শ্রমিকদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের অচলাবস্থায়ও চট্টগ্রাম বন্দর থেমে থাকেনি। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিং ঠিকভাবে হওয়ায় এখানে একটা কনটেইনারের উপরে চারটা-পাঁচটা করে কনটেইনার বসানো হয়েছে। এ দুর্যোগের মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর সাত আট হাজার কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে। কিন্তু সেগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বেরিয়ে যেতে পারেনি। কারণ আমাদের কাস্টমস পুরোপুরি ডিজিটাল ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের সব কনটেইনার জট লেগে গেছে। করোনাকালে আমরা বিভিন্ন অফডকে কনটেইনার রেখে কাস্টমসের সহযোগিতায় সবগুলো রিলিজ করেছিলাম। আশা করি, এবারও আমরা সবার সহযোগিতা পাবো।'
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকার কথা উল্লেখ করে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্ররা আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক। ভুল-ত্রুটি, ভালো-মন্দ যাই থাক তরুণদের একটি বোঝাপড়া আছে। সে বোঝাপড়া নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে এবং আন্দোলন করেছে। আন্দোলনে নামার সঙ্গে সঙ্গে সরকার তাদের দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে আপিলের বিভাগে রিট করেছে। ২০১৮ সালে সরকারই তো এ কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল। সেটা আবার হাইকোর্ট বাতিলের রায় দিয়েছিল। আপিল বিভাগ সেটা আবার স্থিতিশীলতা দিয়েছে। যেহেতু বারবার এরকম হচ্ছে তাই ছাত্ররা দাবি করেছিল কোটা সংস্কার করে একটি আইনি কাঠামো করে দেওয়ার। আমাদের সঙ্গে কমিউনিকেশন গ্যাপ ছিল। প্রধানমন্ত্রী চীনে সফর ছিলেন। সফর সংক্ষিপ্ত করে আবার দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন ছাত্রদের সঙ্গে সরকারের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি হয়েছে তখন আমরা ঢাকা শহরে অগ্নিসন্ত্রাস, তাণ্ডব ও সন্ত্রাস দেখলাম। আলোচনার মাধ্যমে যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তাহলে তো তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। সেজন্য তাড়াহুড়ো করেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা হামলা করল। পুলিশের পোশাক পরে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দুর্যোগ ভবনে আগুন দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সার্ভার স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হল। সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে সংবাদের কন্টেন্ট আগে থেকেই তৈরি করে সরবরাহ করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে একটি পরিত্যক্ত দেশ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিল।’
নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে শ্রমিক যারা আছেন তাদেরও অনেক দাবি দাওয়া আছে। স্কপের পাঁচ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন আপনাদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছিলাম। সকল রাজনৈতিক দল এক হয়ে শ্রমিকদের ওই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। কিন্তু সে শ্রমিক আন্দোলন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়নি, পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করেনি। সেটা একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল। ছাত্রজীবনে আমাদেরও দাবি ছিল। আমরা সচিবালয় ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করেছি। শিক্ষামন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করেছি। কিন্তু কখনও ঢুকে আক্রমণ করিনি।’
দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বর্ণনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যম এত বেশি শক্তিশালী যে কোনো সংবাদ গোপন থাকে না। কোনো না কোনোভাবে পেয়ে যায়। দেশের এরকম একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে দেশের সার্বিক মানুষের শান্তি স্থাপন ও স্থিতিশীলতা, রক্ষা করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আমরা জিয়াউর রহমান ও এরশাদ আমলের জরুরি অবস্থা দেখেছি। ২০০৭ সালের ওয়ান এলেভেন সরকারের জরুরি অবস্থাও দেখেছি।’
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এবার কারফিউ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে আনন্দিত করেছে। কারফিউ জারি করার পর স্বাভাবিক অবস্থা আস্তে আস্তে ফিরে আসতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমি ধন্যবাদ জানাব। কারণ আপনারা বাংলাদেশের লাইফ লাইন এ চট্টগ্রাম বন্দরকে এক মিনিটের জন্যও বিচ্ছিন্ন হতে দেননি। করোনা মহামারির সময়ও চট্টগ্রাম বন্দর পরিবারেরও অর্ধশতাধিক মানুষ জীবন দিয়েছে। তবুও বন্দর বন্ধ হয়নি।’
বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশ দখল করতে বিদেশ থেকে উষ্কানি দেওয়া হয়েছে। সেই উষ্কানিতে মির্জা ফখরুল বললেন আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি আছে। সরকার উৎখাত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কিন্তু এখন মির্জা ফখরুল বলছেন এ আন্দোলনের সঙ্গে আমরা নেই। আমরা সমর্থন দিয়েছি, সম্পৃক্ত হয়নি। এত বড় অভিনেতা আমি কোনোদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখিনি। আমরা সিনেমা, নাটক ও যাত্রা দেখেছি। অনেক অভিনেতার অভিনয় দেখে প্রশংসা করেছি। এখন মির্জা ফখরুলের অভিনয় দেখে প্রশংসা না করে পারছি না।’