Cvoice24.com

চট্টগ্রাম থেকে হিমায়িত মাছ রপ্তানি
তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ৩০, চালু মাত্র ৫টি

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ৩০, চালু মাত্র ৫টি

দেশের রিজার্ভে অবদান রাখা হিমায়িত মাছ রপ্তানি খাতে ক্রমশ নাজুক হচ্ছে চট্টগ্রামের অবস্থা। ক্ষতির বোঝা বইতে না পেরে মাছের ব্যবসা ছেড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। ব্যবসা বাড়াতে সাগরে মাছ ধরার বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশে হিমায়িত মাছ রপ্তানি খাতে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে ১০৮টি। অথচ এখন চালু রয়েছে ৪০টি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চালু আছে ৫টি। তবে ফ্যাক্টরি আছে দুটি প্রতিষ্ঠানের। সেগুলো হলো- ফিশ গার্ডেন লিমিটেড এবং নিহাও ফুড কোম্পানি লিমিটেড। আর ফ্যাক্টরি ছাড়া ব্যবসা করছে পেপার এন্টারপ্রাইজ, শাহেদ এন্ড ব্রাদার্স ও রফিক এন্ড ব্রাদার্স। প্রতিবছরে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২২৮ মিলিয়ন ডলার। রপ্তানি হয়েছে ২১৫ মিলিয়ন ডলার।

এ বিষয়ে ফিশ গার্ডেন লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ আলী সিভয়েস২৪'কে বলেন, ‘আমরা মূলত ক্যাটাল ফিস, ইল, স্যামন ফিস, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রপ্তানি করে থাকি। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে আমাদের ব্যবসার অবস্থা ভালো না। আমাদের সঙ্গে যারা আগে ব্যবসা করতো, তাদের অনেকে এখন ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসা করে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের ফ্যাক্টরি নেই। তারা অন্য ফ্যাক্টরির মাধ্যমে তাদের কাজ করে থাকে।’

ব্যবসায় অবনতি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো দুভাবে মাছ পাই। একটা হলো সাগর ও নদী থেকে। অন্যটি হলো পুকুর, হাওর বা বিভিন্ন জলাশয়। সি-ফিশে দাম বেশি পেলেও আমাদের লাভ হয় না। এর অন্যতম কারণ হলো- জেলেদের মাছ ধরা নিয়ে আইন থাকলেও কোনো ধরনের ম্যানেজমেন্ট নেই। জেলেরা এখানে ট্রালারে উঠার সময় উপরে বড় জাল রাখলেও নিচে ছোট জাল নিয়ে সাগরে যাচ্ছে। সেগুলো সাগরে গিয়ে তল্লাশি করার কেউ নেই। ওরা ছোট মাছ ধরে এনে লোকাল মার্কেটে বিক্রি করছে। আমরা বড় মাছের টেস্টও পাচ্ছি না। আর রপ্তানি করার সুযোগও পাচ্ছি না।’

এ নিয়ে বিএফএফইএর সিনিয়র সহসভাপতি আশরাফ হোসাইন মুরাদ বলেন, ‘সি-ফিশে আমাদের র মেট্যারিয়াল (কাঁচামাল- মাছ) খুবই কম। এজন্য আমরা ২০১১ সালে ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম। কারণ আমরা তো আমাদের সমুদ্রসীমার বাইরে যারা মাছ ধরছে, তাদের বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। কেউ সেটা পারবেও না।'

'তবে অভ্যান্তরীণ সমুদ্রসীমায় মাছ ধরার যে নিয়ম ও আইন আছে, তা মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকিও নেই। তাই আমরা যদি হ্যাচারি করে ভেনামি চিংড়ি চাষের সুযোগ পেতাম, তাহলে আমাদের রপ্তানি হার এভাবে কমতো না। আর ব্যবসায়ীরাও এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতো না।’- বলেন আশরাফ। 

ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রায় ১১ বছর ধরে ভেনামি চিংড়ি চাষের পাইলট প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৩ সাল থেকে আমাদের প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন মানুষ ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় কেউ কোনো এক্সপেরিম্যান্টাল ব্যবসা করতে চাচ্ছে না। এরপরও উখিয়া ও কক্সবাজারে সি মার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু করেছে। এছাড়া নিরিবিলি নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানও ছোট পরিসরে চাষ শুরু করেছে। এ ব্যবসায় যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা না আসে, তাহলে সামনে হয়তো একটা সুন্দর সম্ভবনা আছে।’

চট্টগ্রামের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপ-পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমদ বলেন, `বিদেশে ভেনামী চিংড়ির চাহিদা রয়েছে। তবে বিভিন্ন সংকটের কারণে হিমায়িত মাছ সরবরাহের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যারা ব্যবসা করছেন তারাও তাদের সক্ষমতা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না। তবে আশা করি, ভেনামি চিংড়ি চাষের মাধ্যমে আগামীতে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পাবে এবং লাভবান হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: