সরবরাহের অজুহাতে চড়া সবজির দাম
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
সরবরাহ কমের দোহাই দিয়ে চড়া দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। এতে ক্রেতা সাধারণকে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে প্রতিকেজি সবজি কিনতে। দাম কমার লক্ষণই নেই চাল, ডিম, আলু ও মুরগিতেও। ক্ষুব্ধ ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের অজুহাতের কোনো শেষ নেই। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল সংস্থার অভিযান কমে যাওয়াকে দুষছেন তারা। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরের কর্নেলহাট ও অলংকার বাজার ঘুরে ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কাঁকরোল, বরবটি, ঝিঙ্গা ও ঢেঁড়স। গাজর ও বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে মুন্সীগঞ্জের আলু বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। লাল গোল আলু ৮০-৯০ টাকা। তবে কমেছে শুধু কাঁচামরিচের দাম। এই পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।
বাজারের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে অলংকার বাজারে বাজার করতে আসা সাবের আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ভেবেছিলাম সরকার পরিবর্তনের পরে বাজারে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। দামও কমবে। কিন্তু দাম তো কমছেই না, সরকারের এ নিয়ে কোন উদ্যোগও দেখছি না।
পাশে থাকা কাজল দাশ নামে আরেক জন বলেন, ‘প্রশাসনকে বাজার মনিটরিংয়ের কাজেও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কোথাও কোথাও অভিযান করলেও এক অভিযানে তিন-চারজন ম্যাজিস্ট্রেট যাচ্ছেন। তারা চাইলে আলাদা আলাদা বাজারে মনিটর করতে পারেন। একটা-দুইটা বাজারে গিয়ে দুই-তিনটা ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেন- এটা স্রেফ লোক দেখানো ছাড়া আর কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘বাজার মনিটরিংয়ে প্রশাসনের আন্তরিকতা না থাকলে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিবেই। আর তার বলি হব আমরা সাধারণ ক্রেতারা।’
সবজির বাড়তি দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলি বলেন, ‘সরবরাই কম, আমরা পর্যাপ্ত মালামাল পাচ্ছি না। এ কারণে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। এখানে সাপ্লাই চেইনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক রাখা না গেলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। তবে আশা করি সবজির দাম আগামী সপ্তাহে কমে আসবে।’
এদিকে পাইকারিতে পাকিস্তানি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯২ টাকা, মিসরেরটা ৮০ থেকে ৮২ টাকা । আদা-রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা দরে।
মাংসের বাজারে ঢুকে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি ১৬৫-১৭৫ ও সোনালি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। আর খাসি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া প্রতি ডজন ডিম পাইকারিতে ১৪৫ টাকার ওপরে বিক্রি হলেও খুচরাতে ১৬০ টাকার থেকে ১৭০ টাকা।
মুরগি বিক্রেতা মো. আমিন বলেন, ‘মুরগির দাম একটু বেড়েছে। তবে আগামী সপ্তাহে বাজার ঠিক হয়ে যাবে। ফার্মে মুরগিগুলো এখনো বিক্রির উপযোগী হয়নি। তাই সরবরাহ কমেছে বলে দাম বেড়েছে। আশা করি আগামী সপ্তাহে ১৫০ টাকায় নেমে আসতে পারে।’
অন্যদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের যোগান বেড়েছে কিন্তু সে অনুযায়ী দামের পরিবর্তন আসেনি। ৩০০ টাকা কেজির নিচে ভালো কোন মাছ বাজারে মিলছে না। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ৭৫০ গ্রাম ওজনের এক হাজার থেকে ১২০০ টাকায় এবং এক কেজি ওজনের চেয়ে বেশি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। ছোট ও মাঝারি আকারের পাঙ্গাশ ১৭০ থেকে ২২০ টাকা। তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। চাষের কই ২৫০ টাকার ওপরে। রুই মাছের দাম হাঁকানো হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা।
এছাড়া মুদিপণ্যের মধ্যে ছোট মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৪৭ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা।
চালের বাজারে কেজিপ্রতি থেকে ৪ টাকা বাড়তি মোটা ও সরু চালে। নাজির ও মিনিকেট মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর পাইজাম ও লতা মানের মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর স্বর্ণা ও ইরি মানের চালের দাম ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে।