Cvoice24.com

চট্টগ্রাম চেম্বার সচিবের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
চট্টগ্রাম চেম্বার সচিবের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ

চট্টগ্রাম চেম্বারের সচিব মো. ফারুকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির একগুচ্ছ অভিযোগে এনে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছে সংগঠনটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেন। 

এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস এম আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘সিসিসিআই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টিকারী এবং গত ৭ বছর ধরে অকারণে কর্মচারী ছাঁটাই, দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ ও প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখা, দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত স্বঘোষিত জেনারেল সচিব প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুকের পদত্যাগের দাবিতে আমরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। তাঁকে পদত্যাগের মাধ্যমে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরে আসবে। কারণ এই সচিব চট্টগ্রাম চেম্বারের শত শত অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও কোটি কোটি টাকা লুটপাঠের সাথে যুক্ত রয়েছে।

১৫ হাজার টাকা বেতন থেকে ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকায়

২০০৮ সালে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি যোগদান করেন চেম্বার সচিব মো. ফারুক। ১৬ বছরে বেতন বাড়িয়ে তাঁর বেতন ঠেকেছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪০ টাকা। চেম্বারের ইতিহাসে নজিরবিহীন ইনক্রিমেন্ট উল্লেখ করে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস এম আলমগীর হোসাইন এসব অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, ৬৬টি ইনক্রিমেন্ট নিয়ে একসাথে ৭৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি করেছেন। সবশেষ ১৮ জুলাই চেম্বারের বোর্ড সভায় তিনি আরও ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে তার বেতন ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর করা হয়নি।

ভাঙা-গড়ায় পকেট পুরাতেন চেম্বার সচিব!

নতুন নতুন ইন্টেরিয়র করে পকেট পুরানোর অভিযোগও ওঠেছে চেম্বারের শীর্ষ এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। চেম্বার এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের অভিযোগ, ৬ তলা পুরাতন চেম্বার ভবন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙে ফেলেন চেম্বার সেক্রেটাারি। ভাঙার আগে ৭৫ লাখ টাকার ইনটেরিয়র ডেকোরেশন করেন, যা তার অর্থ আত্মসাৎ করার অপকৌশল। এমনকি ২৪ তলা বিশিষ্ট ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারেও বিভিন্ন সময় ভাঙা-গড়ার প্রকল্প করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী হারমোনিয়াস টাইলস না লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের টাইলস লাগিয়ে ১৫ কোটি টাকার মত কনকর্ডকে খাইয়েছেন। সেখান থেকে তিনিও ভাগ নিয়েছেন। এছাড়াও চেম্বারের মেগা প্রজেক্ট, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা চেম্বারের তত্ত্বাববধানে না করে জাবেদ আলী নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে করিয়ে কোটি কোটি টাকা থেকে চেম্বারকে বঞ্চিত করেছেন।

চেম্বার বোর্ড ‘নাচতো’ সচিবর কথায়!

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতিরা ছিলেন পুতুল নেতৃত্ব। চেম্বার সচিব যেমনে নাচাতেন তেমনি নাচতেন— এমন অভিযোগ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের। চেম্বার প্রেসিডিয়াম পদোন্নতি দেওয়ার পরও নিজের পছন্দসই না হরে আটকে দিতেন পদোন্নতি। তিনি এমন ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে মাঝে মাঝে প্রেসিডিয়ামকেও অবহেলা করতেন।

চেম্বারে বসে বন্দর নিয়ন্ত্রণ, নীল নকশায় ফারুকের পদোন্নতি!

সংবাদ সম্মেলনে চেম্বার দখলে রেখে বন্দরও নিয়ন্ত্রণেরও অভিযোগ ওঠেছে সচিব মো. ফারুকের বিরুদ্ধে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, চেম্বার দখলে রাখলে বন্দর নিয়ন্ত্রণ করতে সহজ হয় কারণ বন্দর ব্যবহারকারীরা সকলেই চেম্বারের সাথে কোন না কোনভাবে জড়িত। অতি সম্প্রতি নানা কারণে চট্টগ্রাম চেম্বার আলোচনায় এসেছে। ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণকারী মো. ফারুক ২০০৮ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার প্রকল্পে যোগ দেন। শতবর্ষের পুরানো এই ট্রেড বডি (চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি)-তে অনেক বিজ্ঞ, দক্ষ, সৎ, নির্লোভ কর্মকর্তা থাকার পরও তাদের পাশ কাটিয়ে মাত্র ৩৩ বছর বয়সী ফারুককে চেম্বার নিজ কব্জায় রাখার নীল নকশার অংশ হিসেবে নিয়ম বিধি বর্হিভূতভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।

গাড়ি নথি নিয়ে লাপাত্তা সচিব

চট্টগ্রাম চেম্বার এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন চেম্বারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে এক হয়েছেন। তিনি এত বেশি বৈষম্য ও দুর্নীতি করেছেন, যা চেম্বারের শত বছরের ইতিহাসে কেউ করেননি। এ কারণে তিনি ২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে লাপাত্তা। শেষ দিন অফিস শেষ করে যাওয়ার আগে তিনি ফেঁসে যাবেন এমন গুরুত্বপূর্ণ নথি, ল্যাপটপ এবং চেম্বারের নোহা গাড়ি নিয়ে চলে যান। অন্য সময়ের মতো সেদিন তিনি ড্রাইভারকে না নিয়ে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে চলে যান।

সচিব ছাড়া গতি বেড়েছে চেম্বারের!

বর্তমান সচিব মো. ফারুকের পদত্যাগ দাবি করে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বলছে, তাঁর অবর্তমানে চেম্বারের কার্যক্রম কোন বাধা-বিগ্ন ছাড়া চলছে। বরং আগের চেয়ে চেম্বারের কাজে গতি বেড়েছে। 
নতুন প্রশাসক আসলে অথবা নতুন ভাবে পরিচালনা পরিষদ গঠন করলে তারা যেন মো. ফারুককে আর চেম্বারে না রাখেন— এ দাবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: