আকাশ ছুঁয়েছে সবজির দাম
‘মনে হচ্ছে না খেয়েই মরতে হবে’
শুভ্রজিত বড়ুয়া, সিভয়েস২৪
নগরের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাজার করতে আসেন ইমতিয়াজ নামে প্রাইভেট কোম্পানির এক চাকরিজীবী। সারা বাজার ঘুরে এক পাশে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। কী কিনেছেন জানতে চাইলে উত্তর দিলেন এভাবে— ‘মাথা ঘুরছে ভাই, বাজারের এ দিক থেকে ও দিক পুরোটাই ঘুরেছি। কী কিনবো সেটাই বুজতে পারছি না। যেটাতেই হাত দেই সেটারই বাড়তি দাম। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি করা ১৫ টাকার পেঁপে এখন ৩০ টাকা কেজি। মিষ্টি কুমড়া যদি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়, কিভাবে বাঁচবো ভাই বলেন। অল্প বেতনের চাকরি করে কোনোভাবে বেঁচে আছি। যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে মনে হচ্ছে না খেয়েই মরতে হবে।’
শুধু বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার নয়, দাম বাড়তে বাড়তে চট্টগ্রামের সব বাজারের অবস্থা এমনই। কমার কোনো লক্ষণ নেই। আগে কিছু না পেলে ডিম আর আলু দিয়ে চালিয়ে দেওয়া যেত। এখন দুইটারই দাম বেশি। এরপর বাজারে মধ্যবিত্তদের সবশেষ ভরসা ছিলো সবজিতে। এখন সেই সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া।
নগরের কর্নেলহাট ও অলংকার বাজারে ঘুরে দেখা যায়, আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায় এবং কাঁচা পেঁপে ৩০-৪০ টাকায়। এছাড়া লাউ, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, পটোল, করলা, ঝিঙে, কাঁকরোল, করলা, ঢেঁড়সসহ প্রায় সবজির দাম খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। একশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে টমেটো, গাজর ও বরবটি। এমনকি আঁটি প্রতি কপিশাক ৫০ টাকা ও লালশাক ৬০ টাকায়।
ব্যবসায়িরা জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সবজিতে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছে।
এ নিয়ে কর্নেলহাট বাজারের দোকানি শিবু বলেন, ‘সাপ্লাই একদম কম। পাইকারিতেও দাম বাড়তি। এরপরও পরিবহনসহ সব মিলিয়ে দাম বাড়তি। এরমধ্যে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বাজারে সবজির চাহিদা বেশি। দশমির আগ পর্যন্ত প্রায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সবজি খায়।
বাজার করতে আসা রনি নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘দাম বাড়তে বাড়তে এখন এমন অবস্থা ঠেকেছে, কমার কোনো সম্ভাবনাও দেখছি না। বাজারে এলে মাথা ঘোরে। না খেয়ে তো থাকতো পারবো না। দুটো মাত্র সবজি কিনেছি। তার মধ্যে মিষ্টি কুমড়া ৭০ টাকা এবং ঝিঙে কিনেছি ৮০ টাকায়।’
কেন দাম বাড়তি জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী বলেন, ‘বন্যার কারণে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। সরবরাহ না হলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’ বাজার দর নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পাইকারি পর্যায়ে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, পটোল, করলা, ঝিঙে, কাঁকরোল, তিতাকরলা, ঢেঁড়সসহ প্রায় সবজির কেজি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।’
বাড়তি রয়েছে চাল, ডিম ও মুরগির দামেও। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ১৪ টাকায়। আর প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকায়। আর মাঝারি চাল বিআর-২৮ ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। পাশাপাশি মানভেদে সরু চালের কেজি ৭০ থেকে ৭৮ টাকা।
এ নিয়ে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ সভাপতি এস এম নাজের হেসেন বলেন, ‘বন্যা কোনো বিষয় না, দাম বাড়াতে হলে একটি অজুহাত দরকার হয়। ব্যবসায়ীরা সেই অজুহাত পেয়ে গেছেন, তাই চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজারে সরকারের নজরদারি বাড়ানো দরকার।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বন্যা পরবর্তী কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সবজির বাজার নিয়ে কারসাজি করার চেষ্টা করছে বলে আমরা শুনেছি। এ নিয়ে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। জরিমানা করে অসাধু ব্যক্তিদের সতর্ক করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’