Cvoice24.com

বিএসসির দুই জাহাজে আগুন
ঢাকঢোলে ‘পাওয়ারফুল’ কমিটি, তদন্তে ঢিলেঢালা

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ২ নভেম্বর ২০২৪
ঢাকঢোলে ‘পাওয়ারফুল’ কমিটি, তদন্তে ঢিলেঢালা

পর পর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দুই জাহাজে আগুন নাশকতা কি না অন্যকিছু খুঁজে দেখতে ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন’ তদন্ত কমিটি গঠন করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। ঘটনার পর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও বিএসসির পৃথক তদন্তের পর এ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া অনেকটা ‘ঢাক পেটা’। অথচ এ কমিটির তদন্ত কার্যক্রম একেবারে ঢিলেঢালা! সাত কর্মদিবসের স্থলে মাস পেরুলেও জমা হয়নি প্রতিবেদন। এমনকি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ কমিটি প্রতিবেদন প্রস্তুতও করতে পারেনি।  

কমিটির সদস্য সচিব হাতে সময় বাড়িয়ে নেওয়ার বললেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানাতে পারেন নি। 

চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের তেলবাহী জাহাজ ‘বাংলার জ্যোতি’তে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৩০ সেপ্টেম্বর। এ ঘটনায় তিনজনের প্রাণহানি ঘটে। এর চারদিনের মাথায় ৪ অক্টোবর বিএসসির মালিকানাধীন তেলবাহী আরেক জাহাজ ‘বাংলার সৌরভে’ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হন। 

চারদিনের ব্যবধানে পরপর দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ড নাশকতা হিসেবে সন্দেহ করে বিএসসি। সন্দেহ আরো ঘনীভূত করে ৫ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেকের বক্তব্যে। কারণ হিসেবে তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, কোনো ধরনের বিস্ফোরণ হয়নি, অথচ জাহাজের চার স্থানে একসঙ্গে আগুন। আবার আগুন লাগার সময় জাহাজের পাশ দিয়ে একটি স্পিডবোটও চলে যেতে দেখা। 

বিএসসি এমডির এমন সন্দেহের পর তার উত্তর পেতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটি গঠনের কথা বলেন নৌ উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। ৬ অক্টোবর বিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কমিটির কথা জানান নৌ-উপদেষ্টা।

ওদিনই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল ইসলামকে আহ্বায়ক আর  সিনিয়র সহকারী সচিব (আই.ও) মো আব্দুল আওয়ালকে সদস্য সচিব করে ১০ সদস্যের ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন’ এ কমিটি করে মন্ত্রণালয়। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে সুস্পষ্ট সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়৷

তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেন নি।

কমিটির সদস্য সচিব সিনিয়র সহকারী সচিব (আই.ও) মো আব্দুল আওয়াল সিভয়েস২৪'কে বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট এখনও প্রস্তুত হয়নি। আমরা চট্টগ্রাম গিয়ে জাহাজ দুইটি দেখেছি। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথাও হয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে কমিটির সবাই বসে রিপোর্টটি প্রস্তুত করে জমা দিতে পারবো।'

এক প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, রির্পোট দেওয়ার আগে এ নিয়ে কোনো কিছু বলাটা ঠিক হবে না। তবে এখানে সব সিনিয়র ও এক্সপার্টদের নিয়েই তদন্ত রিপোর্টটি তৈরি হচ্ছে। এজন্য আমরা অবশ্য মন্ত্রণালয় থেকে সময় বাড়িয়েও নিয়েছি। রির্পোট জমা দেওয়ার পর কেন এবং কিভাবে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তা আপনারা জানতে পারবেন।’‍

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে ১৯৮৭ সালে যুক্ত হয় ডেনমার্ক থেকে আনা দুটি তেলবাহী জাহাজ ‘বাংলার জ্যোতি’ ও ‘বাংলার সৌরভ’। মূলত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আমদানি করা অপরিশোধিত তেল গভীর সমুদ্র থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে আনার কাজ করত জাহাজ দুটি।

অতিরিক্ত দাহ্য গ্যাসের কারণে ‘বাংলার জ্যোতিতে’ বিস্ফোরণ, বাংলার সৌরভের তদন্তের ফল ‘অপ্রকাশিত’

ফোর পিক সেকশনে অতিরিক্ত দাহ্য গ্যাস জমা হওয়ার কারণেই বাংলার জ্যোতিতে আগুনের সূত্রপাত। আর এই আগুন থেকে বিস্ফোরণ— বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ৩০ সেপ্টেম্বর অগ্নিকাণ্ডের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার সুপারিশসহ এ প্রতিবেদন জমা দেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরিফ হাসনাতের নেতৃত্বে গঠিত বিপিসির তদন্ত কমিটি।

এদিকে চারদিনের ব্যবধানে নিজস্ব মালিকানাধীন আরেকটি জাহাজ ‘বাংলার সৌরভে’ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তবে ‘অপ্রকাশিত’ রয়ে গেছে তদন্ত ফল।

সন্দেহ দূর না হতেই আরো এক জাহাজে আগুন

জ্বালানি তেল বহনকারী দুই জাহাজে পর পর অগ্নিকাণ্ডে ‘সন্দেহ’ দূর না হতেই এলপিজি বহনকারী লাইটার জাহাজ সোফিয়ায় আগুন লাগ। গত ১২ অক্টোবর রাত ১টার দিকে মাদার ভেসেল ‘ক্যাপটেইন নিকোলাস’ থেকে স্থানান্তরের সময় এ ঘটনা ঘটে। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর ১৫ অক্টোবর আগুন পুরোপুরি নেভানো যায়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: