চট্টগ্রাম বন্দর : তিন স্ক্যানার বাক্সবন্দি, বছর পার করে বসছে মাত্র একটি
শুভ্রজিৎ বড়ুয়া, সিভয়েস২৪
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়ানো ও মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য খালাস রোধে আনা চারটি স্ক্যানার এক বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরে। সম্প্রতি একটি স্ক্যানার বসানোর কাজ শুরু হলেও বাকি তিনটি কবে বসবে তাও এখনো অনিশ্চিত। তবে কোথায় বসানো হবে তা নির্ধারিত।
বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বসানোর জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে চীন থেকে আমদানি করা হয় চারটি স্ক্যানার। শুরুতে ছয়টি স্ক্যানার বসানোর জন্য এই প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ হয় ১৪৭ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে এ ছয়টি কনটেইনার স্ক্যানার স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ প্রথমবার দরপত্র আহ্বানের পর সেই বছরের ২৪ জুন, ১৫ জুলাই, ৩ আগস্ট ও ২৫ আগস্টে আরও চারবার পিছিয়ে টেন্ডার প্রকাশ করা হয়। ২৫ আগস্টের টেন্ডার শেষে তিন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কাছে পাঠানো হলেও ২০২২ সালের ২৬ মে পুনরায় একই দরপত্র আহ্বান করেন। যার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে একনেকের অনুমোদন নিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠান নাকটেক কোম্পানি লিমিটেডকে কাজ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত বছরের (২০২৩ সাল) বছরের ৪ জানুয়ারি চায়না প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি হলে তারা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের চারটি স্ক্যানার আনে চট্টগ্রাম বন্দরে।
এ নিয়ে জানতে কথা হয় তৎকালীন এনবিআরের কাস্টমস অডিট, মডার্নাইজেশন এন্ড ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার বিভাগের দ্বিতীয় সচিব ও বর্তমান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাাখার উপ-কমিশনার ইমাম গাজ্জালীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্ক্যানারগুলো প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে ছিল। এর একটি বড় কারণ হলো, স্ক্যানারগুলো বসানো হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা স্বাপেক্ষে এ স্ক্যানারগুলো বসানোর স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। স্ক্যানারগুলো আরো আগে বসানো যেত। তবে বিভিন্ন জটিলতা ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে স্ক্যানারগুলো বসাতে একটু সময় বেশি লেগেছে। এখন যেহেতু স্ক্যানার বসানোর জায়গা নির্ধারণ হয়ে গেছে। আর বেশি সময় লাগবে না।’
কোথায় কোথায় স্ক্যানার বসানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন যেটি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে, সেটি এনসিটি (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল)-দুইয়ে। ওটার কাজ প্রায় শেষ। আশা করা হচ্ছে, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ওটার কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর পর্যায়ক্রমে এনসিটি ৪, ৫ এবং সিসিটি (চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল) -২ এ বাকি তিনটি বসানো হবে। এনসিটি -৫ এ একটি স্ক্যানার আছে। তবে ওটা প্রায় নষ্টই থাকছে। ওটা পুরাতন। আর চারের একটা অফ থাকছে। যেটা রিকুয়েস্ট করে করে চালাতে হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের নির্দেশনায় নন-এগ্রেসিভ ইনস্ট্রাকশন গাইডলাইন আছে। ওটা অনুযায়ী, স্ক্যানারগুলো অপারেশনের আয়ুষ্কাল ধরা হয় দশ বছর।’
স্ক্যানার ইনস্টল হওয়ার আগেই এক বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়ারেন্টি পিরিয়ড যখন থেকে শুরু, তখন থেকে আমরা আয়ুষ্কাল হিসেব করি। এছাড়া এখনও অফিশিয়ালি মেশিনটা তো তারা (নাকটেক কোম্পানি লিমিটেড) বুঝিয়ে দেয়নি। মেশিনগুলো এখনও পার্টস হিসেবে আছে।’
প্রসঙ্গত, চুক্তি অনুযায়ী স্ক্যানারগুলো স্থাপনের পরবর্তী পাঁচ বছর সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করার কথা রয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেটে নয়টি স্ক্যানার রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেটে আছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে এফএস ৩০০০ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। এছাড়া সিসিটি-২ ও জিসিবি-২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। ৪ নম্বর গেট ও সিপিএআর গেটে রয়েছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার।