Cvoice24.com

গভর্নরের বক্তব্যের পর ব্যাংকে গ্রাহকের ভিড়
১০ লাখ টাকার চেকে মিললো দেড় লাখ

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
১০ লাখ টাকার চেকে মিললো দেড় লাখ

‘আমি ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। দেড় লাখ টাকা পেয়েছি।’— চট্টগ্রাম নগরে ব্যাংকপাড়া খ্যাত আগ্রাবাদে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক থেকে বেরিয়ে বলছিলেন ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। এরপরও তাঁর চোখেমুখে সন্তুষ্টির ছাপ। কারণ হিসেবে তিনি বলছিলেন, ‘আমি অনেকবার টাকা তুলতে এসেছি। কোনোটাই পাস হয়নি। বিল আটকে ছিলো। আজকে উনারা নিজেরাই আমাকে ফোন করে বললেন, ‘আপা, টাকা তোলার জন্য আসতে পারেন।’ 

নতুন টাকা ছাপানোর তথ্য জানিয়ে ‘রবিবার থেকে গ্রাহকরা চাহিদামতো টাকা পাবেন’ বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন বক্তব্যের পর তারল্য সংকটে ভোগা এসব ব্যাংকে ভিড় জমান গ্রাহকরা। তাদের কেউ কেউ বড় অঙ্কের চেক নিয়ে যান, আবার কেউ স্থায়ী আমানত ভাঙানোর চেষ্টা করেন। তবে চাহিদামতো টাকা তুলতে না পারার অভিযোগ বেশিরভাগ গ্রাহকের। 

রবিবার (১ ‍ডিসেম্বর) বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ওআর নিজাম রোড, আগ্রাবাদ ও জামালখান এলাকায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, পদ্মা ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংকের শাখাগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সকাল ১১টার দিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পাবলিক লিমিটেডের বহদ্দারহাট শাখায় গিয়ে দেখা গেছে ফরহাদ হোসেন নামে এক গ্রাহক ক্ষুব্ধ। ওই গ্রাহক তাঁর স্থায়ী আমানত ভেঙে নগদ টাকা উত্তোলন করতে চান। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাকে বুঝিয়ে আরও সপ্তাহ খানেক অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন।

ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি বারবার বলছিলেন, ‘এ ব্যাংকে কি হয়েছে, আমি তা জানতে চাই না। অনেক কষ্টের পাঁচ লাখ টাকা জমা রেখেছি। তাদের অনিয়মের জন্য আমরা সংকটে থাকবো কেন? বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিক বা না নিক, আমাদের টাকা দেওয়ার জন্য টাকা ছাপিয়েছে। গর্ভণর বলেছেন, যার যত টাকা প্রয়োজন দেবেন। কিন্তু কই? আমরাতো পাচ্ছি না। আগের মতোই গড়িমসি করছে।’

কী বলছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা

গ্রাহকদের অসন্তোষ থাকলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা সুস্থ ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সপ্তাহ খানেক সময় চাইছেন। তারা বলছেন, এ মুহূর্তে গ্রাহকের জরুরি প্রয়োজনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। 

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পাবলিক লিমিটেডের বহদ্দারহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. আরিফ বলেন, ‘সুস্থ ব্যাংকিংয়ে ফিরতে হলে গ্রাহকের আস্থা প্রয়োজন। ভুল-শুদ্ধ বিবেচনার বাইরে গিয়ে গ্রাহকদের একটু সময় দিতে হবে। আমরাতো বুধবার থেকেই টাকা দিচ্ছি। তবে গ্রাহকের প্রয়োজন কি তা জানতে চাচ্ছি। এটা আমাদের অনধিকার চর্চা হিসেবে উল্লেখ করতে পারেন।’

গ্রাহকের জরুরি প্রয়োজনের কারণেই ‘অনধিকার চর্চা’ জানিয়ে এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘এরপরও এটি (অনধিকার চর্চা) করতে হচ্ছে কারণ যেসব গ্রাহক চিকিৎসা বা ব্যক্তিগত খুবই প্রয়োজনে টাকা তুলতে আসছেন, আমরা তাদের দিচ্ছি। সবাই একসাথে টাকা তুলতে শুরু করলেও ব্যাংকিং তো আর হবে না। তাই প্যানিকড গ্রাহকদের আমরা অল্প অল্প করে টাকা দিয়ে তাদের আস্থা রাখার চেষ্টা করছি।’

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক ও ব্যাংকটির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এম সালেহ উদ্দিন কুতুবি বলেন, ‘এই মূহুর্তে আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার জন্য, যারা হজ যাত্রী আছেন, চিকিৎসা, পড়াশোনার জন্য চাচ্ছেন তাদেরকে সহজভাবে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছু গ্রাহক আছেন, যারা একটু প্যানিকড। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। এতোদিন যারা ৫০ হাজার টাকা নিতে আসছেন, তাদের ২০ হাজার টাকা নিয়ে আপাতত প্রয়োজন মেটাতে বলেছি। পরবর্তী সপ্তাহে কিছু কিছু করে তাদের দিয়েছি। গ্রাহকদের আস্থা রাখতে পারায় আমরা ব্যাংকিং ঠিকভাবে করতে পেরেছি। এরমধ্যে আমাদের টাকা সহায়তা দেওয়ার কারণে গত ৩০ বছর ধরে আমরা গ্রাহকদের আস্থা রেখেছি, আগামীতেও একইভাবে গ্রাহকদের আস্থায় থাকতে চাই।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: