নিবন্ধন ছাড়াই গাড়ি চলছে সৌদি টার্মিনালে
শুভ্রজিৎ বড়ুয়া, সিভয়েস২৪
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে নিবন্ধনহীন গাড়ি চলাচল নিয়ে তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেছে তিন অভিযানের পরেই। অভিযানে ২৯ গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেলেও একটি টার্মিনালে পড়ে রয়েছে প্রায় ৭২টি গাড়ি। যেখানে পরিচালিত হয়নি কোনো অভিযান। এর মধ্যে অনিবন্ধিত গাড়িগুলো নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হলেও ‘জটিলতায়’ নিবন্ধন হচ্ছে না। অন্যদিকে সৌদি সংস্থাকে আলাদা করে দেখা নিয়ে দেশীয় অপরেটারদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও জনবলের কারণ দেখিয়ে অভিযান পরিচালনায় দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড পরিদর্শন করেন নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। পরিদর্শনে তিনি অনিবন্ধিত গাড়ি বন্দরে যেন চলচল না করে এ বিষয়ে সতর্ক করেন। সেইদিন অভিযান পরিচালনা করে বিআরটিএ। প্রথম দিনে তারা চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড পরিদর্শন করে ৬০ ধরনের গাড়ি চলাচলের বিষয়টি উদঘাটন করেন। অভিযানে এনসিটি থেকে সাইফ পাওয়ারটেকের ১০ গাড়ির নিবন্ধন না থাকায় জরিমানা করা হয়। এর পরদিন ৯ অক্টোবর এএন্ডজে ট্রেডার্সের ৭টি ট্রেইলারের নিবন্ধন না থাকায় জরিমানা করা হয়। পরবর্তীতে ১৬ অক্টোবর এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজের ১২টি অনিবন্ধিত গাড়ির জন্য জরিমানা গুনে। এরপর থেকে আর বন্দরমুখো হয়নি বিআরটিএ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পতেঙ্গায় গড়ে তোলা কনটেইনার টার্মিনালটি জি টু জি চুক্তির ভিক্তিতে ২২ বছর মেয়াদে দায়িত্ব নেয় সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি)। তিনটি ধাপে প্রতিষ্ঠানটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে সব যন্ত্রপাতি আনার পর কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের কাজও শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে টার্মিনালটিতে চলছে প্রতিষ্ঠানটির ৯টি রিচ স্ট্যাকারস, ৪টি এম্পটি কনটেইনার হ্যান্ডেলার, ১৮টি টার্মিনাল ট্রেইল, ২৩টি টার্মিনাল ট্রাকটর, ৬টি ফর্ক লিফটস এবং ১২টি স্প্রেডার। কিন্তু কোনটির নিবন্ধন নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বেসরকারি অপারেটর প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কমকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উপর থেকে অর্ডার যা এসেছে, তা তো খারাপ না। সবার উচিত আইন মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা। গাড়ির নিবন্ধন না থাকলে, সেটি করে নেয়া। এজন্য অভিযান হয়েছে, আমাদের মিস-কমিউনিকেশনের জন্য কিছু গাড়ির লাইসেন্স করা হয়নি। সেটা আমাদের ভুল। এজন্য আমরা জরিমানাও গুনেছি। সতর্ক হয়ে নিবন্ধনের ব্যবস্থাও করছি। কিন্তু বিদেশি অপারেটরদের যদি বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়, সেটির মধ্যে সবাই কিন্তু খুঁজবে।’
এ নিয়ে জানতে চাইলে আরএসজিটির অপারেশন ম্যানেজার মইনুল আবসার সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমরাতো নতুন করে কনটেইনার টার্মিনাল চালু করেছি। তাই গাড়ি ও চেসিস-এর রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি আমরা আবেদন করেছি। আর রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করলেও তো রেজিস্ট্রেশন পেতে অনেক সময় লাগে। তাই দেরি হচ্ছে।’
অভিযান প্রসঙ্গে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক (ইঞ্জি.) সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বেশ কিছু অভিযান করেছি। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে তিনবার অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আর যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমরা সম্প্রতি ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছি। পাওয়ারটা এখনও দেওয়া হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার পেয়ে গেলে আমরা পুরোদমে সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করবো।’
আবেদন করার কত দিনে গাড়ির নিবন্ধন পাওয়া যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাড়ির নিবন্ধন সচারাচর তিন কর্মদিবসেই হয়ে যায়। তবে কাগজ পত্রে বা গাড়িতে সমস্যা থাকলে সময় একটু বেশি লাগে। আরএসজিটির গাড়িগুলোর যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে সেগুলো ঠিক করে নিবন্ধন দিতে সময় লাগবে। সামাধান যোগ্য সমস্যা না হলে নিবন্ধন দেওয়া হবে না। আর যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে দ্রুত সময়ে নিবন্ধন দেওয়া হবে।’