Cvoice24.com

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ভূতাপেক্ষ’ আইন নিয়ে ক্ষুব্ধ নগদের তানভীর মিশুক

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
২০:১৫, ৫ জানুয়ারি ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ভূতাপেক্ষ’ আইন নিয়ে ক্ষুব্ধ নগদের তানভীর মিশুক

‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন ২০২৪’ এর প্রজ্ঞাপন গত ১ জানুয়ারি জারি করা হয়েছে। আর সেটি ‘ভূতাপেক্ষ’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এমন প্রজ্ঞাপন দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) তাঁর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা দুটি ধারা গত ১২ আগস্ট থেকে কার্যকর দেখাচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক যখন নগদে প্রশাসক ও বোর্ড নিয়োগ দিয়েছিল— তখন এই আইন কার্যকর হয়নি। আর সেই অপরাধ ঢাকতেই হাইকোর্টের রায়ের আগে তড়িগড়ি করে ওই দুটি ধারাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত গেজেটে কি ছিল—

গত ১ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (বাংলাদেশ ব্যাংক) সচিব নাজমা মোবারেকের অনুমোদিত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এতে লেখা ছিল— ‘‘এস. আর. ও. নং ৪২৭-আইন/২০২৪। সরকার, পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪ (২০২৪ সনের ০৯ নম্বর আইন) এর ধারা ১ এর উপ-ধারা (৩) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, ওই আইনের ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (৪) এবং ধারা ৩১ গত ১২ আগস্ট ২০২৪ তারিখকে এবং অন্যান্য ধারাসমূহ এই প্রজ্ঞাপন জারির তারিখকে কার্যকরের তারিখ হিসেবে নির্ধারণ করা হলো।’’

যা বলছেন নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক—
 
‘আজ আইন বানিয়ে ঘোষণা দিল— এটা ৫ মাস আগে থেকেই কার্যকর! এ যেন ভবিষ্যৎ থেকে অতীতে চিঠি পাঠানোর গল্প। এমন ম্যাজিক শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। বিশেষ ওই দুটি ধারা কেনো ১২ আগস্ট থেকে কার্যকর দেখানো হচ্ছে। অথচিএ ধারা ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার কথা। এটা যে কেউ সাদা চোখেই বুঝতে পারেন। কারণ, ওই দুটি ধারা দেখিয়েই তখন নগদে প্রশাসক ও বোর্ড নিয়োগ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক। পুরো কাজটাই করেছেন গায়ের জোরে। সবাই বোঝে যে আইনটা কার্যকরই হয়নি, সেটা ব্যবহার করে তখন অপরাধ করেছেন। আর সেই অপরাধ ঢাকতে হাইকোর্টের রায়ের আগে তড়িগড়ি ওই দুটি ধারাকে দেওয়া হয়েছে ‘ভূতপূর্ব’ অনুমোদন। সত্যিই সেলুকাস।’

দেশে এই প্রথম আজ আইন বানিয়ে ৫ মাস আগ থেকে কার্যকর!

দেশে এই প্রথম আজ আইন বানিয়ে ৫ মাস আগ থেকে কার্যকর দেখানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘গত ১ জানুয়ারি ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন ২০২৪’র প্রজ্ঞাপন জারির ঘটনা নতুন বছরের শুভেচ্ছা হয়ে এসেছে আমার কাছে। মজার ব্যপার হল– এই আইনের দুটি ধারাকে ভূতপূর্ব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাদে পুরো আইনটা কার্যকর হবে বছরের প্রথম দিন থেকে। এই বিশেষ দুটি ধারা (ধারা - ১৮ (৪) ও ধারা - ৩১) গত বছরের ১২ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আজকে আইন বানিয়ে ৫ মাস আগ থেকে কার্যকর দেখানো হচ্ছে!’’

নগদকে ধ্বংস করে মোবাইল আর্থিক খাতের পুরো বাজার একটা কোম্পানিকে দিতে এতো কিছু মন্তব্য করেছেন নগদের এ প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলছেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমি তো এর জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। শেষ পর্যন্ত যে ওনারা ঘোমটা খুলবেন সে তো আমি প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি। নগদকে ধ্বংস করে মোবাইল আর্থিক খাতের পুরো বাজার একটা কোম্পানিকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে এটা বুঝতে কি এখনো আপনাদের দেরী হচ্ছে? হওয়ার কথা নয়। আমি তো জানি এরা সবাই একটা চক্র হয়ে কাজ করছে। আমি বরং বলি যেটা ওনাদের করার কথা ছিল সেটাই ওনারা করছেন এবং সেটাই করবেন। 

তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় কাজটা করা হচ্ছে; তাতে কয়েকটা প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। নদী যেমন শুকিয়ে গেলেও দাঁগ রেখে যায়; তারাও নিশ্চয়ই একদিন ক্ষমতার চাকা ঘুরে ক্ষমতাহীন হবেন। কিন্তু যে দাঁগ আর ক্ষত রয়ে যাচ্ছে সেগুলো তো মুছে যেতে পারবে না। এটা তো থেকেই যাবে। তখন?’

নগদের ওপর এমনিতেই প্রতিষ্ঠানিক আক্রমণ আসতো এটা নিশ্চিত ছিলেন জানিয়ে তানভীর মিশুক বলেন, ‘নগদের জন্ম হয়েছে ২০১৯ সালে। সময়ের প্রয়োজনেই জন্ম হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির। একটা কোম্পানি তখন মনস্টার হয়ে উঠছিল। সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না মোবাইল আর্থিক সেবার বাজারের ওপর। বছরের পর বছর হাজারে ২০ টাকার খড়গ তখন সাধারণ মানুষের ওপরে। তখনই তো নগদ আসল। তারা গ্রাহকদের ওপর এমন অত্যচার না করলে তো নগদের জন্মই হয় না। আর নগদের অপরাধই এখানে। আজ হোক আর কাল হোক, নগদের ওপর কোপ তো পড়তোই। মাঝ থেকে কয়েকটা বছর নগদ একটু বড় হতে পেরেছে; গ্রাহকদের দেখাতে পেরেছে যে মানুষ না ঠকিয়েও সেবা দেওয়া যায়। নগদের ওপর প্রতিষ্ঠানিক আক্রমণ আসতো এটা নিশ্চিত। একটু সময় লাগলো এই যা!’

তিনি আরো বলেন, ‘২০১৯ থেকে শুরু হয়ে আরেকটি কোম্পানির হাজারে ২০ টাকায় বাগড়া দিয়ে নগদ এই যে পাপ (!) করেছে এটি তো ‘অণ্য পাপ’র সমান। এতো গুরুতর অপরাধের শাস্তি তো হওয়া চাই! না হলে বাংলাদেশ কিভাবে বাংলাদেশ হবে? মজাটা হল– ২০২৫ সালের প্রথম দিন আইনটা কার্যকর হল, অথচ এই আইন দিয়ে বিচারের কাঠকড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে আপনাদের দৃষ্টিতে ‘অণ্য পাপ’ করা নগদকে। এটা কতোটা যৌক্তিক– সেই প্রশ্ন আমি দেশের মানুষের জন্যে রেখে দিচ্ছি।’

‘‘এতোই যদি আপনারা পারেন তাহলে এই আইনের আওতায় ২০১১ সালে জন্ম হওয়া ওই মনস্টারের অপারাধের বিচার করেন না? সে সময়ের পত্রপত্রিকায় তো তাদের অন্যায়-অপরাধের ভুরিভুরি বিবরণ ছাপা হয়েছে। বহু মামলাও আছে। ডিজিটাল হুন্ডির জনক বলা হয় উনাদেরকে’’ —যোগ করেন তিনি। 

পাহাড় সমান অভিযোগ আছে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘CID, BFIU, বিটিআরসি আর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাহাড় সমান অভিযোগ আছে। পারবেন এই চ্যালেঞ্জ নিতে? বছরের পর বছর হাজারে ২০ টাকা চার্জ করে গরীব মানুষের পকেট লুটে খাওয়ার বিচার করতে পারবেন? সফটওয়্যার আমদানির নামে এক হাজার চারশ পঞ্চাশ কোটি টাকা পাচারের বিচার করতে পারবেন? পারবেন না। পারবেন কি আর্জেন্টিনা দলকে স্পন্সরের নামে পাচার হওয়া টাকার বিষয়ে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক যে তদন্ত শুরু করেছিল সেটা আবার চালু করতে? এর কিছুই আপনারা পারবেন না। কারণ তাহলে আপনাদের নিজেদের চেয়ারই চলে যাবে। কারণ আপনারাই তো এই পুরো ঘটনার অংশীদার। সবাই চেয়ার-টেবিলের মারপ্যাচের খেলা বোঝে। আর বোঝে বলেই, আপনারা কতো দূর যাবেন সেটা আগে থেকে মানুষ ধরতেও পারে। কোথা থেকে কিভাবে কাদের পরামর্শে এখন বাংলাদেশের আর্থিক খাত চলছে সেটা কে না জানে?’’

‘‘বাংলাদেশের আর্থিকখাতে এই যে উদাহরণ তৈরি করা হচ্ছে তার দায় যে কতকাল ধরে কতজনকে কি কি ভাবে মেটাতে হয় সেটা কেবল সময়ই বলতে পারবে’’ বলেও মন্তব্য করেছেন নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক।