বেইস টেক্সটাইল লিমিটেড
কারখানা বন্ধের দুবছর পর পাওনা পেলেন শ্রমিকরা
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে দুই বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রামের নিট কারখানা ‘বেইস টেক্সটাইল লিমিটেড’। এরপর শুরু হয় কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের আন্দোলন। একপর্যায়ে পাওনা পাওয়ার আশাও ছেড়ে দেন তারা। কিন্তু সেই নিরাশায় আলো জ্বালিয়েছে শ্রমিক সংগঠন ‘বিগফ’। তবে পাওনা পেয়ে শ্রমিকরা খুশি হলেও ‘নয়-ছয়’ এর অভিযোগও ওঠেছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিগফ) সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে কালুরঘাটের মোহরায় যাত্রা শুরু করে বেইস টেক্সটাইল লিমিটেড। বিজিএমইএর ২ হাজার ৬২১ রেজিস্ট্রেশন নম্বরের এ কারখানায় কাজ করতেন ২ হাজার ৮৭০ জন। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বকেয়া রাখার একপর্যায়ে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায় ২০২২ সালে। কারখানার মালিক পাড়ি জমান বিদেশে। শ্রমিকরা ওই বছরের আগস্টে কারখানাসহ বিজিএমইএ ভবন ও শ্রম অধিদপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেন। এরপর পেটের দায়ে আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে অন্যত্র চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শ্রমিকরা।
বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিনের আলাপ-আলোচনায় ৮৭৩ জন শ্রমিকের জন্য বায়ার প্রতিষ্ঠান নিউ ওয়েবের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘কাট এন্ড বাগার’ থেকে তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আনে শ্রমিক সংগঠন ‘বিগফ’। সংগঠনটি বিজিএমইএর নেতা ও শ্রম অধিদপ্তরকে বাদ দিয়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম আয়োজন করে পাঠানটুলি এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে। অনুষ্ঠানটি ফ্যাক্টরি বা সংশ্লিষ্ট কোনো এলাকায় না করায় সন্দেহের জালে আটকে যায় শ্রমিক সংগঠনটি। এমনও অভিযোগে এসেছে, সংগঠনটি বায়ারদের কাছ থেকে ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা এনে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ‘নয়-ছয়’ করছে।
শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার শঙ্কার কথা জেনে নগরের পাঠানটুলিতে দ্বীন মোহাম্মদ কমিউনিটি সেন্টারে যান সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক। সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকরা এক ধরনের টোকেন নিয়ে এসেছেন কমিউনিটি সেন্টারে। সেখান থেকে টাকা নিয়ে হাসিমুখে চলে যাচ্ছেন। প্রতিবেদক প্রবেশ করতে চাইলে তাকে প্রথমে আটকে দেওয়া হয় নিচতলায়। পরে অবশ্য ঢুকতে দেওয়া হয়।
পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম কালুরঘাটের কারখানায় বা বিজিএমইএতে না করে পাঠানটুলির কমিউনিটি সেন্টারে কেন?- জানতে চাইলে বিগফ সভাপতি চন্দন কুমার দে বলেন, ‘শ্রমিকরা যেকোনো সময় বেতন-ভাতা সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতার জন্য আমাদের কাছে আসে। আমাদের অফিস চৌমুহনী মোড়ে। কালুরঘাটে হলে ভালো হতো। কিন্তু কারখানাটি বন্ধ। এমনকি শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে মালিকপক্ষের কারো ভূমিকা নেই। আর বিজিএমইএর প্রশাসক আমাদের এ প্রোগ্রামের জন্য তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। তাই আমরা আমাদের অফিসের কাছেই স্থান নির্বাচন করেছি।’
দুই বছরের বেশি সময় পর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের মতো একটি অনুষ্ঠানে শ্রম অধিদপ্তরের কেউ নেই কেন?- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা সরাসরি বায়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কনভিন্স করেছি। মালিকপক্ষ বা শ্রম অধিদপ্তরের কেউ এতে জড়িত ছিলেন না। তবু জানানোর প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।’
অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিগফ সভাপতি বলেন, ‘আমরা ববায়ার থেকে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এনেছি। এখানে তাদের প্রতিনিধিও আছেন। তারা পুরো কার্যক্রম দেখছেন। এছাড়া বিজিএমইএর প্রতিনিধিরাও আছেন।এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।’
বিজিএমইএর প্রাক্তন প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দায়িত্বে থাকাকালে কারখানাটির শ্রমিকরা আন্দোলন করেছিলেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আমরা কাজ করে তা শেষ করতে পারিনি। তবে এখন শ্রমিকদের একটি সংগঠন শ্রমিকদের পাওনা দিচ্ছে বলে শুনেছি। তবে শ্রমিক সংখ্যা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে।’
টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় কাজল নামে এক পোশাককর্মী বলেন, ‘আমরা আশাও করিনি। ভেবেছি, টাকাগুলো আর পাবো না। কিন্তু একটা বিষয় আমি বুঝতে পারিনি। আমি ৮৪ হাজার টাকা পাওনা আদায় করেছি বলে সাইন করেছি। টাকা নিয়ে আসার পর ১৬ হাজার ৮০০ টাকা আমার থেকে কেটে নিয়েছে। এটা কেন নিয়েছে তাও আমাদের বলেনি। এছাড়া আমাদের অনেক সহকর্মী তাদের টাকা পাচ্ছে না। তারা যোগাযোগ করেও আজকে আসতে পারেনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিগফ সভাপতি বলেন, ‘আমদের সংগঠন চলে শ্রমিকদের টাকায়। আমরা বিভিন্ন সময়ে যেসব আন্দোলন করে বকেয়া আদায় করি, সেখান থেকে ১০ পার্সেন্ট আমরা নিই। কিন্তু এ সার্ভিস দেওয়ার জন্য আমাদের দুই বছর ধরে তাদের জন্য কাজ করতে হয়েছে। তাই আমরা এখান থেকে ২০ পার্সেন্ট কেটে রাখছি। আর আমরা গতকাল (বুধবার) ও আজ (বৃহস্পতিবার) টাকা দিয়েছি। এরপরও যারা বাকি থাকবে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রেক্ষিতে ৩০ দিন পর করে আমরা আরেকটা প্রোগ্রাম করবো। তখন বাকিদের দেওয়া হবে। এরপরও যদি ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার কম আমরা পরিশোধ করি; সেখানের বাকি টাকা বায়াররা নিয়ে যাবে।’