Cvoice24.com

বেশিরভাগ বিডার কিনতে আগ্রহী নন
সাবেক এমপিদের গাড়ি নিলামে, মন ভরাতে শুধুই দেখাদেখি

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া, সিভয়েস২৪
১৯:৪৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সাবেক এমপিদের গাড়ি নিলামে, মন ভরাতে শুধুই দেখাদেখি

শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাবেক সংসদ সদস্যদের আনা ২৪টি গাড়ি নিলামে তুলেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। তবে মন ভরাতে এসব গাড়ি দেখলেও কিনতে আগ্রহী নন বেশিরভাগ বিডার। একদিকে কাস্টমসের সংরক্ষিত মূল্য অন্যদিকে আগ্রহী ক্রেতার অভাবে— সাবেক এমপিদের গাড়িতে ‘মন বসছে’ না কারো। যদিও শুল্কসহ সাবেক একজন এমপির গাড়ি খালাসে আশার প্রদীপ খুঁজছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম সূত্রে জানা যায়, এবারের নিলামে ২৪ জন সাবেক এমপির গাড়ি তোলা হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও সাতজন এমপির গাড়ি, যা আগামী নিলামে তোলা হবে। সকল সাবেক এমপিদের গাড়ি জাপানের ২০২৪ মডেলের ল্যান্ড ক্রুজার। তবে এবারের নিলামে ওঠা জাপানের ২৬টি তৈরি ল্যান্ড ক্রুজার, পাঁচটি টয়োটা হ্যারিয়ার, দুইটি টয়োটা র‌্যাভ ফোর, একটি টয়োটা এস্কোয়ার ও চীনের তৈরি হেভি ডিউটি সিনো ডাম্প ট্রাক ১০টি নিলামে তোলা হয়েছে। 

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর তিনটায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কার শেড সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিডার ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ের অনেকে নিলামে তোলা গাড়িগুলো দেখতে ভিড় করেছে কার শেডের সামনে। বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা ক্যাটালগসহ তাদের প্রবেশ করান। এরপর আগ্রহীরা শত শত গাড়ির ভিড় থেকে গাড়ি ক্যাটালগ দেখে নিলামের গাড়িগুলো চিহ্নিত করে দেখছেন। প্রবেশমুখের ডান পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে ল্যান্ড ক্রুজারগুলো। তাই আগ্রহী বিডাররা শুরুতেই যাচ্ছেন এ গাড়িগুলো দেখতে। জিরো মাইলেজে থাকা সাবেক এমপিদের গাড়ি দেখার পরেই তারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন পুরো কার শেড।

এদের মধ্যে মো. মাসুম নামে একজন বলেন, ‘এবারতো একদম ফ্রেশ গাড়ি নিলামে উঠছে। এ ধরনের নিলাম বাংলাদেশে কখনও হয়নি। তাই বিডারদের আগ্রহ বেশি এই নতুন গাড়িগুলোতে। এরপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে নিলামে বিড করার চেষ্টা করছি। বিডাররাও আমাকে সহযোগিতা করছেন। তবে বিডাররা বলছেন, গাড়ির মূল্য বেশি ধরা হয়েছে। তবে আমি মনে করি, কাস্টমস দাম একটু বেশি রাখায় বিডিং বেশি হবে। চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি হবে।’

নিলামের সংরক্ষিত মূল্য নিয়ে বিডার নাছির উদ্দিন ছোটন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি বিডে অংশগ্রহণ করি। এবারের নিলামে নতুন গাড়ি থাকায় আমাদের আগ্রহটা অনেক বেশি ছিল। কারণ এখানে প্রায়ই একদম আপডেট গাড়ি। ২৩-২৪ সালের গাড়ি হওয়ায় কাস্টমস এসেসমেন্ট করার সময় একবার ভ্যাট নেয়। বিডের পরে আবার আমাদের ভ্যাট দিতে হয়। কাস্টমস এসেসম্যান্টে ভ্যাট ধরার কারণে গাড়ির ভ্যালুয়েমন বেড়ে যায়। এ উচ্চমূল্যের উপর নিলামের স্থায়ী আদেশ অনুযায়ী নিলাম দর রাখতে হয় ৬০ শতাংশের উপর। ৬০ শতাংশের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। তারমানে প্রায় ৮৫ শতাংশ দাম দিয়ে গাড়িটি নিলে আমাদের পক্ষে তা বিক্রি করা সম্ভব হয় না।’ 

একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব চৌধুরী বলেন, ‘২৪টি এমপিভুক্ত গাড়ি ও চায়না ডাম্প ট্রাকগুলো নতুন। এরমধ্যে মনে হচ্ছে ডাম্প ট্রাকগুলো ভ্যালু বেশি ধরা হয়েছে। এমপিদের গাড়িগুলোর ভ্যালু ঠিক আছে। ঠিক থাকলে কি হবে, কাস্টমসে বিড করে ৬০ শতাংশ কভার করে ফার্স্ট (প্রথম) বিডে আমার মনে হয় না আগ্রহ তেমন থাকবে। কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি বিড করলে করতে পারেন। তবে আমরা যারা ৩০-৪০ বছর ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত, আমরা মনে হয় এ সাহস করবো না।’

এ নিলামে বিডারদের আগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা নিলামে কিনে তো ব্যবহার করি না। বিক্রি করার বিড করি। এমপিদের গাড়িগুলো বিক্রি করার মতো কোনো কাস্টমার আমাদের কাছে এখনও আসেনি। তবে আগ্রহ আছে হ্যারিয়ার, র‌্যাভ ফোর ও টিএক্স গাড়িতে। এগুলো ভালো বিড হবে।’

বিডারদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কথা হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সাবেক সংসদ সদস্যদের গাড়ি ছিলো মোট ৩২টি। এবার ৩২টি গাড়ি নিলামে তোলার কথা। তবে ৭টি গাড়ি যারা এনেছেন তাদের কারো ঠিকানায় ও কারো আনা গাড়ির চেসিজ নম্বরে ভুল থাকায় চিঠি চালানে আইনগতভাবে পিছিয়ে যায়। এছাড়া অন্য একটি গাড়ি শুল্কায়নের নির্ধারিত মূল্যে একজন সাবেক সংসদ সদস্য নিয়ে যান। তাই আমরা আশা করছি, সংরক্ষিত মূল্য বেশি ধরা হয়নি। বিডাররা আগ্রহ রাখবেন। যদি বেশি হতো, তাহলে শুল্কায়ন শাখার মূল্যে এ গাড়ি নিতো না।’

তিনি আরও বলেন, আগ্রহীরা এসে গাড়ি দেখছেন। এরপরও নিলাম যখন ওপেন (উন্মুক্ত) হবে, তখন আমরা বলতে দরদাতাদের অংশগ্রহণ নিয়ে বলতে পারবো। এমপিদের আরও সাতটি গাড়ি আছে। ওগুলো জন্য আমরা আরেকটি নোটিশ দিয়েছি। সাড়া পাবো বলে মনে হচ্ছে না। যদি সাড়া না পাই তাহলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি গাড়িগুলো নিলামে তোলা হবে।

প্রসঙ্গত, ২৪টি তৈরি ল্যান্ড ক্রুজারের সংরক্ষিত মূল্য ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা। এছাড়া দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা দুইটির মধ্যে একটির মূল্য ১ কোটি ৬২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪ টাকা এবং অন্যটি ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার ১২১ টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে তৈরি ২৪৮৭ সিসি’র একটি হ্যারিয়ার গাড়ির মূল্য ৭৬ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৩ টাকা, ২০২২ সালে তৈরি ১৯৮৬ সিসি’র হ্যারিয়ার আইচি মূল্য ৮২ লাখ ৩ হাজার ৬৬৭ টাকা, ২০২০ সালে তৈরি ১৯৮৬ সিসি গাড়ির মূল্য ৬১ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৯ টাকা, ২০১৯ সালের ১৯৮৬ সিসি আরেকটি হ্যারিয়ার গাড়ি ৫৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৮২ টাকা এবং ২০১৮ সালের ১৯৮৬ সিসি আরেকটি হ্যারিয়ার গাড়ি ৫৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৮৭ টাকা ধরা হয়েছে। দুইটি র‌্যাভ ফোরের মধ্যে ২০১৯ সালের মডেলের মূল্য ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ টাকা ও ২০২০ সালের গাড়িটির মূল্য ৫৬ লাখ ২২ হাজার ১০৭ টাকা ধরা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৯৮৬ সিসি টয়োটা এস্কোয়ারের দাম ৩০ লাখ ৩৮ হাজার ১৬৮ টাকা এবং চীনের তৈরি ১০টি হেভি ডিউটি সিনো ডাম্প ট্রাকের ৬টির প্রতিটি ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৩২ টাকা ও বাকি ৪টি ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮১ টাকা ধরা হয়েছে।