Cvoice24.com

স্কুল বন্ধে সরকারিতে সুদিন, বেসরকারি শিক্ষকদের দুর্দিন

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১৩ জুন ২০২১
স্কুল বন্ধে সরকারিতে সুদিন, বেসরকারি শিক্ষকদের দুর্দিন

ফাইল ছবি

মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে গত ১৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চলমান এই পরিস্থিতিতে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিয়মিত পাচ্ছেন বেতন-ভাতা। কিন্তু কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বন্ধের কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা পাচ্ছেন না বেতন-ভাতা, এমনকি অনেকে হয়েছেন চাকরিচ্যুতও। 

এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে চলতি বছরে স্কুলগুলোতে ভর্তি হয়নি আশানুরূপ শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের বেতন, বাড়ি ভাড়া ও বিদুৎ বিল দিতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষরা। ফলে করুণ সময় পার করছেন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়েও দারুণ শঙ্কিত অভিভাবকরা। এ নিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।   

রবিবার (১৩ জুন) সরেজমিনে নগরের ২ নম্বর গেটের নাসিরাবাদ এলাকার কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ঘুরে দেখা যায়, স্কুলের গেট তালাবদ্ধ। ভিতরে নেই কোন সাড়া-শব্দ, নেই কোন পদধ্বনি। একটা সময় ছোট্ট শিক্ষার্থীদের কলতানে মুখর থাকা স্কুল প্রাঙ্গণগুলোতে এখন শুনশান নিরবতা। নগরের আকবরশাহ এলাকার ক্যাব ইন্টারনেশনাল স্কুল, জনতা কিন্ডারগার্টেন, রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র।

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে প্রায় ১২শ কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। পুরো চট্টগ্রাম জেলায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে  নগরের প্রায় ৪ হাজার শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েছেন। এদিকে গত ৯ জুন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে কিন্ডারগার্টেনগুলো খুলে দেয়ার দাবিতে সমাবেশও করেছে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন সম্মিলিত রক্ষা কমিটি। ওই সমাবেশ থেকে তাদের ক্ষতি পোষাতে সরকারের প্রতি প্রণোদনার দাবিও জানিয়েছেন তারা। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল।

নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ‘ম্যারিল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’র শিক্ষিকা রিয়া চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘গত বছরের এপ্রিলে এই স্কুলে জয়েন করি। এর আগে আরেকটি কিন্ডারগার্টেনে ছিলাম। কোভিডের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাকরি চলে যায়। বর্তমানে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াই। আগের মতো পুরো বেতন পাইনা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। অর্ধেক বেতন দিয়ে কোনরকম চলতে হয়। আগেতো শিক্ষকতার পাশাপাশি টিউশনও করতাম, এখন তাও নেই। শুধু আমি না, আমার মতো অনেকে করুণ দিন পার করছেন। কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হবে, কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে— সেদিনের আশায় প্রহর গুনছি এখনো।’

বঙ্গবন্ধু কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজ’র আহবায়ক ও লাইমলাইট গ্রামার স্কুল’র সভাপতি মো. খুরশীদ আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমার স্কুলে করোনার আগে ৮শ এর মতো শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩শ’তে নেমে এসেছে। সবকিছু খোলা থাকলেও স্কুল খোলার দিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী সকলেরই ক্ষতি হচ্ছে।’ 

নগরের একটি বেসরকারি প্রাক-প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. সেলিম সিভয়েসকে বলেন, ‘স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমার মেয়েটা দিনদিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনায় আর মনযোগ নেই বললেও চলে। স্কুলের টিচারদের সাথেও কোন যোগাযোগ করা হয়নি, বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেতনও দিইনি। ভেবেছিলাম, এবছর কোভিড পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। এখন আবারও বাচ্চাকে পুনরায় আগের শ্রেণিতে ভর্তি করাতে হবে।’  

নতুন কুঁড়ি বিদ্যানিকেতন’র শিক্ষক মোহাম্মদ মোশাররফ সিভয়েসকে বলেন, ‘বর্তমানে খুব খারাপ অবস্থায় আছেন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। করোনাকালীন সময় থেকে অর্থাৎ স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র এক মাসের বেতন পেয়েছি। স্কুলে আয় না থাকায় বেতন পাওয়া নিয়ে এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, আমরা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা সমস্যায় পড়েছি বেশি, কারণ আমরা সরকার বা কারো কাছ থেকে কোন প্রকার প্রণোদনা বা সাহায্য কিছুই পাইনি। কিভাবে জীবন সংসার চলছে তা শুধু আমরাই জানি।’

কিন্ডারগার্টেন এডুকেশন এসোসিয়েশন’র মহাসচিব ও চট্টগ্রাম মডেল স্কুল’র প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে টিউশনিও করানো যাচ্ছে না। অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি তাতেও কিছু মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে সরকার যদি আমাদের দিকটা না দেখে, তাহলে সবাইকে অনাহারে মরতে হবে। অথচ এই পরিস্থিতিতে সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন কিন্তু আমরা বঞ্চিত। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে স্কুলের বেঞ্চ-টেবিলও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর বেতন হয় শিক্ষার্থীদের স্কুল ফি আর টিউশন ফি থেকে। বর্তমানে স্কুল বন্ধ থাকায় টিউশন ফি পাচ্ছে না। এ অবস্থায় যদি সরকার এগিয়ে না আসে তাহলে সামনে আরও কঠিন অবস্থায় পড়তে হবে। সবকিছু খুলে দেয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হচ্ছে না। দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দিলে শিক্ষার্থীরাও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়