Cvoice24.com

চবি ছাত্রলীগ/ দুই জনের কমিটিতে দুই বছর পার

হিমু বড়ুয়া

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ১৪ জুলাই ২০২১
চবি ছাত্রলীগ/ দুই জনের কমিটিতে দুই বছর পার

চবি ছাত্রলীগ/দুই জনের কমিটিতে দুই বছর পার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের দুবছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৯ সালের আজকের এই দিনে রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এক বছরের জন্য অনুমোদিত এ কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয় সেসময়। অথচ দুবছর পূর্ণ হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি তারা। কমিটি পূর্ণাঙ্গ তো দূরের কথা সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায়ও বসতে পারেনি এ দুই সদস্য।

মেয়াদোত্তীর্ণ সময়েও কমিটি করতে কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে বেড়েছে হতাশা আর ক্ষোভ। দীর্ঘ সময়েও কমিটির আলোর মুখ দেখতে না পেয়ে সম্ভাবনাময় অনেক তরুণই হয়ে পড়েছেন নিষ্ক্রিয়। বেশিরভাগ নেতা-কর্মীরা করোনার কারণ ছাড়াও দোষ চাপিয়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সদিচ্ছা আর আন্তরিকতার উপর। যদিও কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার পেছনে লকডাউনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকাকেই একমাত্র কারণ হিসেবে দেখছেন চবি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সম্পাদক।  

কয়েক দশক ধরে চবি ছাত্রলীগ নগর আওয়ামী লীগের দুইটি ধারায় নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। একটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারি। আরেকটি প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারি। তবে বর্তমানে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে তারা অনুসরণ করেন। আবার এ দুটি মূল গ্রুপের মধ্যে অনেক উপ-গ্রুপ। এরমধ্যে আজম নাছির অনুসারিদের উল্কা, সিক্সটি নাইন, ভিএক্স, একাকার, কনকর্ড, আরএস, বাংলার মুখ, এপিটাফ। অন্যদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারিরা হলেন সিএফসি ও বিজয়।

এ নিয়ে চবি ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীরা বলছেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি বৃহৎ অংশ পরিচয়হীনতায় ভুগছেন। অনেক মেধাবী কর্মী ছাত্রলীগ করেও পরিচয় ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করছেন। তাই এ দায় এড়ানোর কোন সুযোগ সভাপতি ও সম্পাদকের নেই।

চবি ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দূর্জয় সিভয়েসকে বলেন, ‘এ দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে ব্যর্থই বলা যায় কারণ যথাসময়ে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ একটা হল,  ফ্যাকাল্টির কমিটিও করতে পারেনি। শুরু থেকে তারা আমাদের সাথে অফিসিয়ালি কোন আলোচনায় বসতে পারেনি। কমিটির মেয়াদ যেহেতু এক বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। দুই বছর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করলে তারা যে খুব বাহবা তাও না। করোনার আসার আগে ৯ মাস তারা কিছুই করতে পারেনি। এখন তারা করোনার দোহাই দিচ্ছে।’

চবি ছাত্রলীগের কর্মী ও ‘একাকার’ গ্রুপের নেতা নিয়াজ আবেদীন পাঠান সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার প্রকোপ শিক্ষাঙ্গনের পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতিতেও ভাল প্রভাব ফেলেছে, তবে দুটো ক্ষেত্রেই প্রয়োজন দায়িত্বপ্রাপ্তদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা ‘

ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক  ও আরএস গ্রুপের নেতা রকিবুল হাসান দিনার সিভয়েসকে বলেন, ‘দুই বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলো না , এর চেয়ে হতাশা আর কি থাকতে পারে! করোনার কারণে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে থমকে আছে সবকিছু। কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় দলের কর্মীরাও হয়ে পড়েছে হতাশাগ্রস্ত।এখনতো ছাত্রদের মাঝে করোনার ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। আশাকরি পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং  ক্যাম্পাস খুললে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। তবে এক্ষেত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বদিচ্ছা ও আগ্রহটাই মূখ্য।’

চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ‘বিজয়’ গ্রুপের নেতা মো. ইলিয়াস সিভয়েসকে বলেন, ‘২০১৯ সালে এক বছরের জন্যই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়েছিল। নির্দেশনা ছিল এক বছরের ভিতরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার। সেই কমিটি দুই বছর পার করলেও তাদের মধ্যে কোন আগ্রহ দেখ যায় নি। সভাপতি ও সেক্রেটারি কোভিডের আগেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কোন আলোচনায় বসে নি আমাদের সাথে। তাদের দৃষ্টিতে আমরা যদি অযোগ্য হই তাহলে যারা যোগ্য তাদের নিয়ে বসতে পারত। ছাত্রলীগ মেধাবীদের সংগঠন।  কমিটি হলে অনেক ছাত্র নেতা বৃহৎ আকারে প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারত। যেহেতু ২ বছর পার হয়ে গেছে আমার মনে হয় না তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারবে।' 

এবিষয়ে সাবেক পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলার মুখ গ্রুপের নেতা আবু বকর তোহা সিভয়েসকে বলেন, ‘ছাত্ররা রাজনীতি করে পদ-পদবী আশা করবে এটা স্বাভাবিক । তাই দীর্ঘদিনের এ জট কাটিয়ে ওঠা উচিত। তবে দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার পেছনে করোনা অনেকটা দায়ী। তবে এখনো পর্যন্ত সবাইকে নিয়ে ওনারা কোন আলোচনায় বসতে পারেননি। তাই বলব বর্তমানে যে দুই জন আছেন নেতৃত্বে তাদের আরও আন্তরিকতার প্রয়োজন রয়েছে।’ 

চবি ছাত্রলীগের সাবেক কার্যকরী কমিটির সদস্য মইনুল ইসলাম রাসেল সিভয়েসকে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দেয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এরকম পরিস্থিতি চবি ছাত্রলীগে আগে কখনো পড়তে হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় বেশির ভাগ নেতা কর্মীরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ফলে এই সুযোগকে ব্যবহার করে  ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।’

করোনার কারণে সবকিছু স্থবির হয়ে আছে গত ১৫ মাস। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু।  

তিনি সিভয়েসকে বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই কর্মীদের থেকে সিভি আহ্বান সহ অন্যান্য কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম। আমরা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেছিলাম। তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ায় একাজগুলো পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠেনি। আমরা সবার সাথে আলোচনা করেছি। যারা মিটিংয়ে ছিল তারা জানে। আমি আমার দায়িত্ব নিয়ে করেছি আলোচনা। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বির্তকিত, মামলার আসামিসহ চাঁদাবাজরা যেন স্থান না পায় ওইভাবে যাচাই-বাচাই করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে। ৮০ দশকের পরে চবিতে কোন হল-ফ্যাকাল্টি কমিটি হয় নি। এর দায় আমাদের সবাইকে নিতে হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, বগি ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছিল ২০১৬ সালে জুলাইয়ে। তবুও বিগত ভর্তি পরীক্ষার সময় বিভিন্ন বগির চিকা, টি-শার্ট দেখা গিয়েছে। এসব নিষিদ্ধের পরও অনেকে বগি ভিত্তিক কার্যক্রম চালাচ্ছে নামে বেনামে। এসব কাজ চবি ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করে যারা ক্লিন ইমেজে আছে তাদেরকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ হল-ফ্যাকাল্টি কমিটি দিব। ক্যাম্পাস ও ক্লাস শুরু হওয়ার সাথে একাজগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হবে।’

এদিকে সব অভিযোগকেই উড়িয়েই দিয়েছেন চবি ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। তিনি বলেন, যারা কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে কাজ করছে তারা আমাদের সাথে আছে। যারা বিরোধিতা করছে তারা বগিভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাদেরকে আমি অস্বীকার করি। তারা মূলধারার ছাত্রলীগ নয়। তাদের সাথে আমার কোন কাজ থাকতে পারেনা।’  

তিনি আরও বলেন, ‘একজন ছাত্র কখন ছাত্রলীগ করবে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হবে। এখনতো বিশ্ববিদ্যালয়তো বন্ধ কাকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবো? এই মহামারীর অবস্থা সবাইকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এটা নিয়ে হতাশ হওয়া যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ায় সাথে সাথে আমরা সকল ত্যাগী ও আদর্শ কর্মীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ অন্যান্য কমিটি গঠন করব আশাকরি।’ 

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ২১ (ক) ধারা অনুযায়ী, প্রতিবছর জেলা শাখাগুলোর সম্মেলন করার কথা। ঠিক একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, উপজেলা ও ইউনিট কমিটির মেয়াদ এক বছর। অথচ বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সেই কমিটি টেনেটুনে চলে আরও কয়েক বছর। নির্দিষ্ট মেয়াদ, সে তো গঠনতন্ত্রের ‘অলঙ্কার’ কেবল। 

এবিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদক কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে গত জানুয়ারিতে সিভয়েসকে দেয়া এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে চবিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া যাচ্ছে না। সার্বিক পরিস্থিতি ভালো ও ক্যাম্পাস গতিশীল হলে এ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।’ তবে এ বিষয়ে এখনো কোন লিখিত বক্তব্য দিতে দেখা যায় নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে। 


 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়