Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

চবি ক্যাম্পাসে রাতে হেনেস্তার শিকার দুই ছাত্রী

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:৩৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
চবি ক্যাম্পাসে রাতে হেনেস্তার শিকার দুই ছাত্রী

ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রী হেনস্তার শিকার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে দুই নম্বর গেটের বাসায় যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় চারজন যুবক ওই ছাত্রীদের পথরুদ্ধ করে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসময় প্রক্টরিয়াল বডির গাড়ি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করেন। এসময় ওই চার যুবক দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এরমধ্যে হেনস্তাকারী একজনকে দৌঁড়ে পেছন থেকে ধরে পেলেন প্রক্টরিয়াল বডি।

হেনস্তাকারীরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটির বিস্তারিত তুলে ধরেন।

পাঠকের উদ্দেশে হুবহু স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো...

‘এই ভার্সিটিতে চার বছর পার করে ফেললাম। তাও কি কখনো চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করবো না? একটা কাজ শেষ করে শহর থেকে আসছিলাম। বৃষ্টি থাকায় আর গাড়ি না পাওয়ার কারণে শহর থেকে আসতে দেরি হয়ে গেলো। তার উপর এক নম্বর গেটে সিএনজি পেতেও সমস্যা হওয়ায় জিরো পয়েন্ট যখন পৌঁছালাম তখন প্রায় ১১টা ৪০ মিনিট বাজে। আর সঙ্গে আমার ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র আপুও ছিলো। আপু ১৬-১৭ আর আমি ১৭-১৮ সেশনের। জিরো পয়েন্ট পার হতেই প্রক্টর স্যারের সাথে দেখা, স্যার আমাদেরকে জিজ্ঞেস করায় নিজেদের সমস্যাগুলো বললাম, স্যারও বুঝতে পেরে আমরা একা বাসায় যেতে পারবো কিনা জিজ্ঞেস করলেন আর সাবধানে যেতে বলে বিদায় নিলেন। আমরা স্যারের সাথে আলাপ করে ২ নম্বর গেটের দিকে হাঁটা ধরলাম।’

তিনি আরও লিখেন, ‘হাঁটতে হাঁটতে যখন সোহরাওয়ার্দী মোড় পার হয়ে সেন্ট্রাল মসজিদের কাছাকাছি গিয়েছি, হুট করে পেছন থেকে ডাক দিলো কে জানি। ক্যাম্পাসে রাতের বেলা হাঁটতে গিয়ে মেয়েরা প্রায়ই এরকম উড়ো ডাক শুনে। তাই কানে না নিয়ে আমরা নিজেদের মতো হাঁটছিলাম। আমাদের সাড়া না পেয়ে এবার কেউ একজন জোরে থ্রেট দেওয়ার ভঙ্গিতে ডেকে বললো, এই দাঁড়ান, ডাকছি না?’

‘আমরা দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরলাম আর দেখলাম যে ৩টা ছেলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ততক্ষণে ৩টা ছেলেই এসে আমাদের রাস্তা আটকে দাঁড়ালো আর নানারকম প্রশ্ন করা শুরু করলো। তারা আমাদের সেশন, পরিচয়, ওদের ফোন বের করে টাইম দেখিয়ে এতো রাতে এখানে কেন, কি করছি আরো নানান কথা বলতে থাকলো। প্রথমে থতমত খেয়ে গেলেও সামলে নিলাম। বললাম যে আমরা ওদেরকে বলতে বাধ্য নই, একটু আগে প্রক্টর স্যারের সাথে দেখা হয়েছে, স্যার জানেন। তারপর আমাদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বললাম। ওরা আমাদের রাস্তা না ছেড়ে আটকে রাখলো, আরও বেশি করে জেরা আর থ্রেট দেয়া শুরু করলো।’ 

ওই ছাত্রী আরও লেখেন, ‘রাস্তা ছাড়ছে না দেখে বাধ্য হয়ে আমাদের সেশন বললাম। আমাদের সেশন বলে ওদের সেশন জিজ্ঞেস করতেই আরো রেগে গেলো, আমাদের আজেবাজে কথা বলা শুরু করলো। ওদের এরকম আজেবাজে কথাবার্তা শুনে আমরা বললাম, যে রাস্তা না ছাড়লে প্রক্টর স্যারকে কল দিবো! তখন ওদের একজন বলে উঠলো যে, প্রক্টর কে যে ওদেরকে প্রক্টরের ভয় দেখাচ্ছি, কাকে ফোন দিবো দিতে ওরাও দেখবে কি করতে পারি। ওদের সাথে তখন আরেকটা ছেলে এসে যোগ দিলো। এবার ৪জন মিলে আমাদেরকে শাসাতে শুরু করলো। আমরাও তর্ক করছিলাম, একপর্যায়ে ওরা সবাই প্রায় তেড়ে আসছিলো আমাদের দিকে। তাদের মধ্যে একজন ছিলো লুংগী পড়া। সে লুংগীটা হাটুর উপরে তুলে বারবার আমাদের গায়ে পড়ার জন্যে তেড়ে আসছিলো। তখন আমরা চিৎকার করে কথা বলা শুরু করেছিলাম রাগে আর ভয়ে।’

‘ঠিক তখনই দুই নম্বর গেটের দিক থেকে একটা গাড়ি আসতে দেখি, কাছাকাছি আসতেই বুঝতে পারলাম এটা প্রক্টর স্যারেরই গাড়ি। আমরা চিৎকার করে ডেকে হাত নেড়ে স্যারের গাড়ি থামাই। স্যারের গাড়ি থামতেই ওরা দৌঁড়ানো শুরু করে, স্যারদের মধ্যে একজন দৌঁড়ে গিয়ে ওদের একজনকে ধরে ফেললেন। স্যারের সাথে আরো ৬-৭ জন স্যার ছিলেন। তারপর ছেলেটাকে জেরা করে জানা গেলো ওরা ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। একজন আরবী ডিপার্টমেন্টের, একজন ফিলোসফির আর বাকিদেরটা জানি না।’

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, প্রক্টর স্যার ছেলেটার আইডি আর নাম লিখে নিয়ে গেছেন। আমাদেরকেও আশ্বাস দিলেন যে এটার সঠিক বিচার ওনারা করবেন, আমরা যেনো লিখিত অভিযোগ দিই ওদের নামে।

নিজের ভার্সিটিতে কখনোই সেইফ ফিল করিনি, তবুও বেশ কয়েকটা বছর কেটে যাওয়াতে ভাবতাম হয়তো এবার আর এরকম কিছু ফেইস করতে হবে না। আমি জানি না ১৯-২০ সেশনের কয়েকটা ছেলের এতো সাহস কিভাবে হয় যে পরিচয় জানার পরেও নিজেদের চেয়ে ৩-৪ বছরের সিনিয়রদের এভাবে পথ আটকে হ্যারাস করতে পারে।

ইমার্জেন্সি ইস্যুতে যদি ক্যাম্পাসে ফিরতে ১২টাও বেজে যায় তবে কি সেটা এখন পাপ হিসেবে গণ্য হবে যে তার মাশুল আমাদের থেকে ৩-৪ বছরের ছোট ছেলেদের কাছে হ্যারাসড হওয়ার মাধ্যমে দিতে হবে? অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে ভার্সিটি সম্পর্কে এদের ধারণা কতোটা নিচু হলে এরা ঠিক করে ক্যাম্পাসের ছাত্র হয়ে ওঠার আগেই রাস্তায় হেঁটে হেঁটে এরকম জানোয়ারের মতো আচরণ করে বেড়াচ্ছে। আজকে হয়তো স্যারেরা ঠিক সময়ে এসেছিলেন বলে আরও খারাপ কিছু হওয়া থেকে বেঁচে গেছি কিন্তু কাল কি হবে? আমাদের জায়গায় তো অন্য কোনো মেয়েও থাকতে পারতো। নিজের ক্যাম্পাসে একটু নিরাপদে থাকতে চাওয়া কি খুব বড় চাওয়া?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আমরা গাড়ি নিয়ে ঘুরছিলাম। রাত ১১টার দিকে আমাদের গাড়ি কেন্দ্রীয় মসজিদের গেটের সামনে দুইজন ছাত্রী আমাদের গাড়ি থামিয়ে তাদেরকে হেনস্তার কথা বলেন। আমরা গাড়ি থামিয়ে অভিযুক্ত ছেলেদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। তবে এর মধ্যে একজনকে আমরা দৌঁড়ে গিয়ে ধরতে পেরেছি। তার আইডি কার্ড ও মুঠোফোন জব্দ করেছি। রোববার দেখা করতে বলেছি। তার মাধ্যমে অন্য অভিযুক্তের পরিচয় জেনে আমরা ব্যবস্থা নিব।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়