Cvoice24.com

রাত পোহালেই চবির ভর্তিযুদ্ধ, প্রতি আসনে লড়বে ৩৭ শিক্ষার্থী

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২৬ অক্টোবর ২০২১
রাত পোহালেই চবির ভর্তিযুদ্ধ, প্রতি আসনে লড়বে ৩৭ শিক্ষার্থী

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত বি- ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক প্রথমবর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ৪টি ইউনিট ও ২টি উপ-ইউনিটে ৪ হাজার ৯২৬টি আসনের জন্য এবার আবেদন করেছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বে ৩৭ জন শিক্ষার্থী। স্বাস্থ্যবিধির বিষয় মাথায় রেখে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এবার প্রতিটি ইউনিটের পরীক্ষা কয়েকটি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি শিফটে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিবে।

ইউনিট প্রতি আসন ও আবেদন: 

বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেল সূত্রে জানা গেছে, এবার অনলাইনে মোট আবেদন জমা পড়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৩টি। ‘এ’ ইউনিটে এক হাজার ২১২টি আসনের বিপরীতে আবদেন জমা পড়েছে ৬৮ হাজার ১০৬টি। এই ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬ জন। ‘বি’ ইউনিটে এক হাজার ২২১টি আসনের বিপরীতে আবদেন জমা পড়ে ৪২ হাজার ৬৬৮টি। এ ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তির জন্য লড়বেন ৩৫ জন। ‘সি’ ইউনিটে ৪৪১টি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে ১৩ হাজার ৯১৮টি। এ ইউনিটে প্রতি আসনে ভর্তির জন্য লড়বেন ৩২ জন। ‘ডি’ ইউনিটে এক হাজার ১৬০টি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে ৫৪ হাজার ২৪৯টি। সম্মিলিত এ ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বেন ৪৭ জন। এছাড়াও দুটি উপ-ইউনিটের মধ্যে ‘বি১’ ইউনিটে ১২৫টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে দুই হাজার ২০টি। এ উপ-ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তির জন্য লড়বেন ১৬ জন। এছাড়া ‘ডি১’ উপ-ইউনিটে ৩০টি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে দুই হাজার ৯০২ টি। এ উপ-ইউনিটে আসন প্রতি লড়বেন ৯৭ জন শিক্ষার্থী।

পরীক্ষা পদ্ধতি:

ভর্তি পরীক্ষা বরাবরের মতোই ১২০ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০ নম্বর লিখিত পরীক্ষা (বহুনির্বাচনি) ও বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ থেকে যুক্ত হবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ বিষয়সহ মাধ্যমিকের জিপিএ ৪০ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ’র ৬০ শতাংশ যোগ হবে। বহুনির্বাচনী পদ্ধতির এই ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৪০।

ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি:

২৭ ও ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা। ২৯ অক্টোবর ‘সি’ ইউনিট, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর ‘ডি’ ইউনিট এবং ১ ও ২ নভেম্বর ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ৫ নভেম্বর উপ-ইউনিট ‘বি-১’ ও ‘ডি-১’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষা সকাল-বিকাল শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। সকালের শিফটের পরীক্ষার্থীরা পৌনে ১০টায় কেন্দ্রে প্রবেশ করবে। ওএমআর ফরম বিতরণ করা হবে সোয়া ১০ টায়। প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে বেলা ১১ টায়। পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ১২ টায়।

অন্যদিকে দুপুরের শিফটের পরীক্ষার্থীরা সোয়া দুইটায় কেন্দ্রে প্রবেশ করবে। ওএমআর ফরম বিতরণ করা হবে পৌনে তিনটায়। প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে দুপুর সাড়ে তিনটায়। পরীক্ষা শেষ হবে বিকেল সাড়ে চারটায়।

বেড়েছে ট্রেনের শিডিউল

ভর্তি পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ । আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত এই বিশেষ শাটল সার্ভিস চলবে। নগরীর বটতলী রেলস্টেশন থেকে যথাক্রমে সকাল ৬টায়, সাড়ে ৬টায়, সাড়ে সাতটা, ৮ টা ১৫ মিনিটে , ৮টা ৪৫ মিনিটে, ১১টা ৪০ মিনিটে, দুপুর ১২ টায়, সাড়ে ১২টায়, বিকেল ৩টায়, ৪টায় ও রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে যথাক্রমে সকাল ৭টা ০৫ মিনিটে, সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে, সকাল ৮ টা ৪০ মিনিটে, সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে, সকাল ১০টায়, দুপুর ১টায়, দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে, বিকেল ৩টায়, বিকেল ৫টায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটা ও রাত ৯টা ১০ মিনিটে নগরীর বটতলীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

সব ট্রেনই ঝাউতলা, ষোলশহর, ক্যান্টনমেন্ট, চৌধুরীহাট, ফতেয়াবাদ স্টেশনে কিছুক্ষণ থেমে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে যাবে। প্রতিটি ট্রেন বটতলী রেল স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে আসতে আনুমানিক ১ ঘন্টা সময় লাগবে।

যেসব বিষয়ে ভর্তিচ্ছুদের জানা জরুরি

এ দিকে ভর্তি পরীক্ষার সময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনাগুলো হল—

পরীক্ষার হলে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধান করতে হবে। পরীক্ষার্থীদের সাথে একের অধিক অভিভাবক আসতে পারবে না ও নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা নিজস্ব পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হবে। পরীক্ষা শেষে ধাপে ধাপে কেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে। দুই কপি প্রবেশপত্র, পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি ও উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষার মূল রেজিষ্টেশন কার্ড অথবা A লেভেলের Statement of Entry এর মূলকপি ভর্তি পরীক্ষার দিন অবশ্যই সাথে রাখতে হবে। পরীক্ষার হলে fx-100 বা এর নিচে সাধারণ মানের (মেমরী ‘অপশন/সীম ব্যতিত) ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে।

এছাড়া পরীক্ষার হলে প্রার্থীর মোবাইল ফোন, মেমোরি যুক্ত ক্যালকুলেটর/সীম, ডিভাইস সম্বলিত ঘড়ি ও কলমসহ যেকোন সঙ্গে রাখতে পারবে না। প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত বিষয়ে কারো কাছে কোন অভিযাগ দৃষ্টিগোচর হলে তা ১ম ও ২য় শিফটে নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ সময়ের ন্যূনতম এক ঘন্টা পূর্বে সকল প্রমাণাদিসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিট কো-অর্ডিনেটরের কাছে লিখিত অভিযাগে করা এবং ভর্তি পরীক্ষায় কারো বিরুদ্ধে কোন ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

যেভাবে আসবেন চবিতে:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক প্রথমবর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। শহর থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরের পথ হওয়ায় এই ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে পথ চিলনে এই দূরত্বে মোটেও কঠিন বা কষ্টের কিছু নয়। 

বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ক্যাম্পাসে: প্রতিটি জেলা থেকেই চট্টগ্রামের বাস পাওয়া যায়। আর যেসব জায়গা থেকে সরাসরি বাস নেই তারা ঢাকায় এসে সেখান থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারে। এছাড়া ঢাকা বা অন্যান্য স্থান থেকে ট্রেনের ব্যাবস্থাও রয়েছে। বাস বা ট্রেনে করে বাসে চড়ে চট্টগ্রাম শহরে আসতে হবে। এরপর শহরের বটতলী রেল স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল বাস বা অন্যকোন মাধ্যমে ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে পারবে।

শহর থেকে চবি ক্যাম্পাসে: দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চট্টগ্রাম শহরে আনেকে সহজে পৌঁছালেও শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসতে বেগ পোহাতে হয়। যেহেতু এবার ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে চবি কতৃপক্ষ বিশেষ শাটল সার্ভিসের ব্যাবস্থা করেছেন সেক্ষেত্রে সকলেই শাটলে আসা উচিত। এক্ষেত্রে সময়, শ্রম, অর্থ সবই সাশ্রয় হয়। বটতলী স্টেশন থেকে শাটলে উঠলে ১ ঘন্টার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে পৌঁছানো যাবো। আর যদি কেউ বাসে আসতে চায় তাহলে নিউমার্কেট থেকে ৩ নং বাসে বা সিএনজিতে সরাসরি ক্যাম্পাসের ১ নং গেইটে পৌঁছাতে পারবে। সেখান থেকে সিএনজিতে করে ক্যাম্পাসের ভেতর প্রবেশ করা যাবে। নিউমার্কেট থেকে বাসগুলো নগরীর কাজীর 
দেউড়ী-প্রবর্তক-মুরাদপুর-অক্সিজেন-ফতেয়াবাদ-১ নং গেইট এই রুটে চলাচল করে। তাছাড়া কিছু বাস মার্কেট-ওয়াসা-জিইসি-অক্সিজেন-ফতেয়াবাদ-১নম্বর গেইট রুটে চলাচল করে। 

ভর্তি পরীক্ষার্থীর আনাগোনায় মুখর চবির হল-ক্যাম্পাস: 

ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আজ থেকে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। কেউবা শাটলে আবার কেউবা বাস-সিএনজি যোগে পৌঁছাচ্ছেন ক্যাম্পাসে। আর পরীক্ষার্থীদের আগমনে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। এছাড়া বিশ্বিবদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে থাকছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ভর্তিচ্ছুদের আনাগোনায় আবাসিক হলে সৃষ্টি হয়েছে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ। ক্যাম্পাসের খাবার দোকান ও ক্যাফেটেরিয়ার মালিক কর্মচারীরাও পার করছেন ব্যাস্ত সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে এলাকাভিত্তিক সংগঠনগুলোর ব্যানার পোষ্টার। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিশ্বিবদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় বেশ সন্তোষজনক বলে মনে করছেন ভর্তিচ্ছুরা।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়