ভবন নির্মাণে দুর্নীতির তদন্তে চবিতে দুদকের টিম
চবি প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৬ষ্ঠ একাডেমিক ভবন (দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ) নির্মাণে জি কে শামীমের অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টা দিকে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম মোড়লের নেতৃত্বে একটি টিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ একাডেমিক ভবনের নির্মাণে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারির কাজ ভাগিয়ে নেন জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান। পরে অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাওয়ায় প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। অধিকতর তদন্তের জন্য আজও আমাদের একটি টিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শন করেছেন। অনুসন্ধান এখনো চলমান রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-জিকেবিএলকে ৭৫ কোটি এক লাখ ২৯৫ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর চুক্তি হয়।
দরপত্রের সঙ্গে শর্তানুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠান আগের পাঁচবছরে কমপক্ষে একটি ৩৫ কোটি টাকার বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ সন্তোষজনকভাবে সমাপ্তির সনদপত্র জমা দেয়। আগের পাঁচবছরে গড়ে কমপক্ষে ৪১ কোটি টাকার টার্নওভার এবং ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার লিকুইড অ্যাসেট সংক্রান্ত কাগজপত্রও জমা দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদকের অভিযোগ, জি কে শামীম ও ফজলুল করিম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানির প্রকৃত নিবন্ধিত নামের সাথে একক মালিকানাধীন ফার্মের নাম সংযুক্ত করে নিবন্ধনের সনদ জমা দেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো চুক্তির কাগজপত্র জমা দেননি। এছাড়া নিবন্ধিত প্রকৃত শেয়ার সংখ্যার চেয়ে বেশি শেয়ার দেখানো হয়। টেন্ডার নোটিশের ১৯ (ডি, ই ও এফ) নম্বর শর্তানুযায়ী ১০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ও টার্নওভার সংক্রান্ত যে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয় তা-ও জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা বলে দুদকের অভিযোগ।
দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির অযোগ্যতা ও অদক্ষতার সুযোগে অতি সুক্ষ্ম তথ্যগত জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করে ওই কার্যাদেশ হাসিল করে নেন। পরে গত বছরের ২২ নভেম্বর জালিয়াতির মাধ্যমে চবির ভবনের নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি নেওয়ার অভিযোগে জি কে শামীমসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। পরে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চবির ভবন নির্মাণের ৭৫ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় জিকে শামীমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় যুবলীগের সমবায় সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেওয়া জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। মো. গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম ঢাকার জি কে বি এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া অভিযুক্ত দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল করিম চৌধুরী কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার সদর থানাধীন নৈরাজপুর গ্রামে।