Cvoice24.com

প্রশাসনের ঈশারায় আইন ভাঙছে চবির ক্রিমিনোলজি বিভাগ—অভিযোগ শিক্ষকদের 

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ৭ ডিসেম্বর ২০২১
প্রশাসনের ঈশারায় আইন ভাঙছে চবির ক্রিমিনোলজি বিভাগ—অভিযোগ শিক্ষকদের 

আইন ভঙ্গ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে সভাপতির দায়িত্বে সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ.বি.এম. নাজমুল ইসলাম খানকে বহাল রাখার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিভাগের শিক্ষকদের মধ্য থেকে সভাপতি নিয়োগের বিষয়ে তালবাহানার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) এমন অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের তিন শিক্ষক। বিবৃতি পাঠানো তিন শিক্ষক হলেন, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন ও মৌমিতা পাল এবং প্রভাষক মো. মাজহারুল ইসলাম। 

বিবৃতিতে বর্তমান সভাপতি নাজমুল ইসলাম খান বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করেই অগণতান্ত্রিক উপায়ে ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করে তাঁর পূর্বলিখিত সিদ্ধান্তে সদস্যদের স্বাক্ষরদানে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিন শিক্ষক। 

এছাড়াও নিয়মানুযায়ী বিভাগীয় সভাপতি নৈমিত্তিক ছুটিতে গিলে বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা। কিন্তু নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সভাপতি ছুটিতে যাওয়ার সময় রেজিস্ট্রার বরাবর একটি পত্রে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিনকে বিভাগীয় সভাপতির ‘রুটিন দায়িত্ব’ প্রদানের অনুরোধ জানান। যা নজিরবিহীন এবং চবি এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর গুরুতর লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন ওই তিন শিক্ষক।

এ বিষয়ে ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে সভাপতি ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ.বি.এম. নাজমুল খানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে সভাপতির যোগ্যতা না থাকায় অন্য বিভাগ থেকে একজন শিক্ষককে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ওই বিভাগের দুইজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন। এখন ওনারা সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য হয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাদের অপেক্ষা করতে হবে। কারণ যাকে বর্তমানে সভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছে, তার সময়সীমা শেষ হয়নি। সময়সীমা শেষ হলেই ওনারা সভাপতির দায়িত্ব পাবেন।

 হুবহু বিবৃতি:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে, সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ১ম বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ ২০১৮ ইং সনের ১ জুলাই প্রভাষক (স্থায়ী পদে) হিসেবে উক্ত বিভাগে যোগদান করি। অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী অবসরে গেলে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর, গত ০২/০৭/২০২০ তারিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ.বি.এম. নাজমুল ইসলাম খানকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয় (সংযুক্তি- ০১)। গত ৩০/০৫/২০২১ তারিখে আমাদের মধ্যে দুইজন প্রভাষক হতে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিভাগে যোগদান করি। বিগত ২৪/১১/২০২১ তারিখে বিভাগের সভাপতিকে মাধ্যম করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর সংবিধির ধারা ৭ অনুযায়ী ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে বিভাগীয় শিক্ষকদের মধ্য থেকে সভাপতির দায়িত্ব প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার নিমিত্তে একটি পত্র প্রদান করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর সংবিধির ধারা ৭ অনুযায়ী, “The Chairman of a department shall be appointed by the Vice-Chancellor for a period of three years from among the teachers, not below the rank of an Assistant Professor, of the department by rotation in order of seniority.”। কিন্তু, বিভাগীয় সভাপতি পত্র গ্রহণের সাত (০৭) কর্মদিবস অতিক্রান্ত হলেও রেজিস্ট্রার বরাবর উক্ত পত্রটি প্রেরণ করেননি। অন্যদিকে, রেজিস্ট্রার দপ্তরে উক্ত পত্রের অগ্রীম কপি জমা দিতে গেলে, রেজিস্ট্রার দপ্তর পত্রটি গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ আমাদের আবেদন অগ্রাহ্য করে ড. এ.বি.এম. নাজমুল ইসলাম খানকেই বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে পরামর্শ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এহেন পরামর্শে আমরা বিস্মিত কারণ বিভাগীয় দুইজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায়, নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ড. এ.বি.এম. নাজমুল ইসলাম খানকেই বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে বহাল রাখা চ.বি. এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর সংবিধির ধারা ৭ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর লঙ্ঘন এখানেই থেমে নেই। গত ০৫-১২-২০২১ তারিখে বিভাগীয় সভাপতি নৈমিত্তিক ছুটিতে যাওয়ার সময় রেজিস্ট্রার বরাবর একটি পত্রে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মহোদয়কে বিভাগীয় সভাপতির “রুটিন দায়িত্ব”প্রদানের অনুরোধ করেন; যা নজিরবিহীন এবং চ.বি. এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর গুরুতর লঙ্ঘন। কেননা, ০২/০৯/১৯৮২ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪১ তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী “When a Chairman of a department proceeds on leave for a period of less than a year, the next Senior teacher of the department will remain in-charge of the department for the leave period of the former.”এবং ২৩-০৯-১৯৯৮ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৩৩৫ তম সভার সিদ্ধান্ত ৭ অনুযায়ী “যে সকল নুতন বিভাগে সভাপতির পর কোন সহকারী অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক নাই অথবা থাকিলেও সভাপতির ছুটিকালীন/অনুপস্থিতিকালীন সময়ে তাঁহারাও ছুটিতে থাকিলে সেইক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডীনকে বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব প্রদান”এর বিধান রয়েছে। বিভাগের সভাপতি এবং রেজিস্ট্রার দপ্তরের এহেন স্বেচ্ছাচারী আচরণে আমরা বিস্মিত, মর্মাহত এবং অপমানিত।

তিন শিক্ষক দাবি করেন, ড. এ.বি.এম. নাজমুল ইসলাম খান এর স্বেচ্ছাচারিতার সর্বোচ্চ বহি:প্রকাশ ঘটেছে গত ০৮/১১/২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির ৬ষ্ঠ সভায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৬তম সিন্ডিকেট সভার ‘বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি’সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী; বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার ন্যূনতম তিন কর্ম দিবস পূর্বে সভার আলোচ্য সূচি প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের লিখিতভাবে অবহিত করতে (সংযুক্তি- ০৮)। হয় কিন্তু, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের ৬ষ্ঠ প্ল্যানিং কমিটির সভা আহ্বানের ক্ষেত্রে উক্ত নিয়ম সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। উক্ত প্ল্যানিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় ০৮/১১/২০২১ তারিখে; আলোচ্যসূচিও প্রকাশ করা হয় ০৮/১১/২০২১ তারিখে উক্ত সভায় বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও সভাপতি প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করেই সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে, মানসিক চাপ প্রয়োগ করে তাঁর পূর্বলিখিত সিদ্ধান্তে সদস্যদের স্বাক্ষরদানে বাধ্য করেন। যেখানে একজন অধ্যাপক (সমাজবিজ্ঞান/ক্রিমিনোলজি), চারজন সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক [(নৃবিজ্ঞান/সমাজবিজ্ঞান-২ জন, আইন-১ জন এবং ক্রিমিনোলজি-১ জন)] নিয়োগ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু, বিভাগের কারিকুলাম পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, নৃবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মাত্র একটি করে কোর্স রয়েছে। শুধুমাত্র একটি করে কোর্স এর পাঠদানের জন্য উক্ত বিষয়সমূহের অনার্স, মাস্টার্সধারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি কোনভাবেই বোধগম্য নয়। কারণ, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উপরোক্ত বিষয়সমূহের (নৃবিজ্ঞান/সমাজতত্ত্ব) পাঠদান অতিথি শিক্ষকের মাধ্যমে চলমান রয়েছে এবং এ ধারাটি অন্যান্য বিভাগেও অনুশীলন করা হয়ে থাকে। এতে করে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা একাডেমিকভাবে উপকৃত হবে এবং উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সাশ্রয় হবে। তৎপ্রেক্ষিতে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে উক্ত প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য সভার অব্যবহিত পরেই সভাপতিকে মৌখিক অনুরোধ করা হয়। তিনি কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরবর্তীতে ২৫-১১-২০২১ তারিখে বিভাগীয় সভাপতি বরাবর উক্ত প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্ল্যানিং কমিটির নতুন সভায় তদ্বিষয়ে (শিক্ষক নিয়োগ) সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য লিখিতভাবে জানানো হয়। ইতোমধ্যে বিভাগীয় সভাপতি আগামী ০৮-১২-২০২১ তারিখে প্ল্যানিং কমিটির সভা আহবান করেছেন, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তিনি আমাদের লিখিত আবেদনটি পরবর্তী প্ল্যানিং কমিটির এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করেননি। ইহা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এ্যাক্ট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৬ তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী “A meeting shall be called by the Chairman when requestioned by one-third members of the committee.”।

এমতাবস্থায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর পবিত্রতা এবং মর্যাদা সমুন্নত রাখতে উল্লিখিত বিষয়ে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্র্তপক্ষের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি।

সিভয়েস/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়