Cvoice24.com

চট্টগ্রাম বোর্ডে ভূতুড়েকাণ্ড: দিন থেকে রাত হতেই কারো নম্বর বাড়লো কারো কমলো

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৩:১২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
চট্টগ্রাম বোর্ডে ভূতুড়েকাণ্ড: দিন থেকে রাত হতেই কারো নম্বর বাড়লো কারো কমলো

দিন থেকে রাত হতেই রেজাল্ট ওলট-পালট।

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সোহানা আহমেদ। ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে অংশ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় প্রকাশিত এইচএসসির ফলাফলে দেখা যায় সোহানা আহমেদ সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তখন সবকিছুই ঠিকঠাক থাকলেও বিপত্তি ঘটে রাতে।

কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আবার বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফলাফল দেখতে গিয়ে সোহানা দেখেন তার উচ্চতর গণিত বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর কমে গেছে! ফল প্রকাশের পর দুপুরে উচ্চতর গণিত বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ১৯৮ কিন্তু রাতে একই বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর দেখাচ্ছে ১৯০। আচমকা ফলাফলে এমন অসঙ্গতি দেখায় ঘাবড়ে যায় সোহানা ও তার অভিভাবক। 

একই ঘটনা সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি দাশ পুনমের ক্ষেত্রে। তারও ফল প্রকাশের পর দুপুরে উচ্চতর গণিত বিষয় প্রাপ্ত নম্বর ছিল ২০০। কিন্তু রাতে সেই বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর হয়ে যায় ১৮০। 

কেবল এই দুই শিক্ষার্থীই নয়, এমন অভিযোগ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীদের। কোনো কোনো বিষয়ে কারও নম্বর কমে গেছে আবার কারও নম্বর প্রাপ্ত মোট নম্বরের চেয়েও বেড়ে গেছে। ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে একই শিক্ষার্থীর দিনে এক; আর রাতে আরেক রকম ফলাফল নিয়ে হইচই পড়ে যায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। কারণ একই বিষয়ের দুই রকমের পরিবর্তনে কোন ফলাফল সঠিক তাই নিয়েই দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা।

অভিভাবকরা বলছেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস আকারে পরীক্ষা নেওয়ার পরেও শিক্ষাবোর্ডের দায়সারা কাজে ফলাফলের এমন গড়মিলে শঙ্কিত শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা। যদিও অভিযোগের বিষয়ে জোরালো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি বোর্ড সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।

তবে বোর্ডের পরীক্ষা শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ভুল এন্ট্রি দেওয়া এবং পরবর্তীতে তাড়াহুড়ো করে তা সংশোধন করতে গিয়ে ফের ভুল করেছে। কিন্তু এই ধরনের অসঙ্গতি পরীক্ষার ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেও মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি ১ম ও ২য় মিলে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয় এবং পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম ও ২য় মিলে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে। অর্থনীতি ও পৌরনীতিতে একই নম্বর পেলেও গ্রেড নম্বর অনুযায়ী পৌরনীতিতে নম্বর বেশি দেখাচ্ছে। এটার মানে বুঝতে পারছি না। দুইটা বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর একই অথচ গ্রেড ভিন্ন ভিন্ন। আমার রেজাল্ট কি আসলেই সঠিক নাকি পুরোটাই ভুল তা কিছুই বুঝতে পারছি না। এটা বিষয়টা এখন পুরো কনফিউজড হয়ে গেছি। এখানে যে কোনটা আসল আর কোনটা নকল তাই চিন্তার বিষয়।’

একই অভিযোগ জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক সিভয়েসকে বলেন, ‘আসলে এমন অসঙ্গতিপূর্ণ ঘটনা আমার এক পরিচিতজনের বাচ্চার সঙ্গে ঘটেছে। দুপুরে সে পরীক্ষার ফলাফল দেখে তখন সে এক বিষয়ে পেয়েছে ২০০; কিন্তু রাতে যখন আবার ডাউনলোড করে দেখতে যায় তখন দেখে সে ওই বিষয়ে ২০৩ পেয়েছে। কিন্তু মোট নম্বর হচ্ছে ২০০। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তাহলে বাকি তিন নম্বর যুক্ত হলো কীভাবে? পুরো বিষয়টাই কনফিউশন তৈরি করছে। আশা করি, বোর্ড কর্তৃপক্ষ দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান করবে। নতুবা পুরো ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে এখনও যে প্রশ্নবিদ্ধ হবে না তা কিন্তু নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার পরিচিতজনকে দেখেছি খুব ঘাবড়ে যেতে। অর্থাৎ রেজাল্ট এমন হওয়ায় এখানে কোনটাকে আসল রেজাল্ট ভাববে তা-ই তো কনফিউশন তৈরি করছে। সেইসঙ্গে এটার একটা নেগেটিভ ইফেক্ট তো রয়েছেই। এই বাচ্চার হয়তো গ্রেড পয়েন্ট পরিবর্তন হয়নি; কিন্তু এমন ভুলে যদি অন্য বাচ্চারা ভুক্তভোগী হয় তবে এর দায়ভার কার? কে নিবে এ দায়দায়িত্ব? অথবা ঝোকের বশে যদি বাচ্চাটা সুইসাইড বা অন্যকিছু করে বসে তবে তার কি হবে? পরীক্ষার ফলাফল বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে নিতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’

এদিকে এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল আলীমের সঙ্গে সিভয়েস যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।

ফলাফলের এমন গড়মিলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এইচএসসি রেজাল্ট হস্তান্তর করতে ঢাকায় এসেছিলাম। ফলাফলে অসঙ্গতির বিষয় নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে আমাদের পরীক্ষা শাখা থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তবে একটু আগে আমার কাছে কিছু অভিযোগ এসেছে। আমি যেহেতু চট্টগ্রামে নেই এবং অনেক রাত হয়ে গেছে সুতরাং কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে। চট্টগ্রাম ফিরেই এ বিষয়ের অভিযোগ দেখে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, এবার (২০২১ সাল) উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৯.৩৯ শতাংশ। যদিও তা অন্যান্য বোর্ডের চেয়ে কম। কিন্তু অটোপাশের বছর ছাড়া বিগত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ ও পাসের হার দুটোটেই ভালো ফল হয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের। 

-সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়