Cvoice24.com

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষার ৯ মাস আগেই ফল!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২৮ মার্চ ২০২২
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষার ৯ মাস আগেই ফল!

গেল বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি। ফল প্রকাশের পরপরই ফলাফলে অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। আবার সেই ভুলের হদিস খুঁজতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই কমিটি নিয়েও হয় ‘কাদা ছোড়াছুড়ির’ মতো ঘটনা। আর সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার সনদকাণ্ডে (একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট) তোলপাড় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।

করোনা পরিস্থিতির কারণে ২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২ ডিসেম্বর। অথচ এইচএসসি পরীক্ষার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ছাপানো হয় ২১ সালের ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে। অর্থাৎ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার নয় মাস আগের তারিখ দিয়েই একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ছাপায় বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখা। প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি ট্রান্সক্রিপ্টে এমন ভুল তারিখ দিয়ে ছাপানো হয়। আর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরে ভুল তারিখে ছাপানো সেই ট্রান্সক্রিপ্ট ইতোমধ্যে কিছু বিলি করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষাবোর্ড যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে, তেমনি ভুল ট্রান্সক্রিপ্ট সংশোধিত না হলে ভবিষ্যতে হয়রানির মুখে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। বোর্ডের পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট শাখার একের পর এক ভুল নিয়ে বিব্রত খোদ বোর্ড কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ‘গাফিলতি’ সহজভাবে মানতে চাইছেন না শিক্ষাবিদরাও।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করে ৮৯ হাজার ৮৯ জন। এরমধ্যে ৪০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর ট্রান্সক্রিপ্ট ভুল তারিখে ছাপানো হয়েছে। প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে এসব ট্রান্সক্রিপ্ট ছাপানো হচ্ছিলো। কিন্তু এই ভুল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে সোমবার (২৮ মার্চ)। আর তারপরেই হইচই পড়ে যায় বোর্ডের বিভিন্ন শাখায়। বোর্ডের সংস্থাপন শাখার একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এতো সংখ্যক ভুল ট্রান্সক্রিপ্ট ছাপানোর কারণে ৮ লাখের বেশি টাকা ‘অপচয়’ করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।

ভুল ট্রান্সক্রিপ্ট পাওয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আসলাম বলেন, ‘এই সকল ট্রান্সক্রিপ্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট সারাজীবন বাচ্চাদের প্রয়োজন হয়। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। নরমালি কি হয়, বাচ্চারা পাস করেছে ট্রান্সক্রিপ্ট পেয়েছে। কিন্তু যে ভুলটা তারা (শিক্ষাবোর্ড) করেছে সেটা মারাত্নক ভুল। হয়তো সচরাচর চোখে পড়বে না। কিন্তু এই সার্টিফিকেট নিয়ে যখন সরকারি চাকরি বা অন্য চাকরি করতে যাবে তখন তো জাল কিংবা ভুয়া সার্টিফিকেট বলবে। তখন এর দায় কে নিবে! ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন কার ভুলে কে সাফার (ভোগ) করবে। এর আগে, একবার রেজাল্ট নিয়ে গণ্ডগোল হলো এখন আবার সার্টিফিকেট নিয়ে। কর্তৃপক্ষের ভুল কেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের পোহাতে হবে। দায়িত্বশীল একটা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা বারবার হলে সামনে তো আমাদের আস্থাও থাকবে না।’

এদিকে, একটা ট্রান্সক্রিপ্টের পেছনে বোর্ডের কত টাকা খরচ হয়েছে সে প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ট্রান্সক্রিপ্টগুলো সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে করা হয়। তাদের ওয়ার্ক অর্ডারে কি আছে এই মূহুর্তে বলতে পারবো না। তবে মোটামুটি একটা খরচ আছে। কারণ ট্রান্সক্রিপ্টগুলো হার্ড-পেপারের হয়। আবার এখানে কিছু সিকিউরিটি ম্যাটারস আছে। যেমন টাকায় জলছাপ থাকে, ভেতরে একটু প্রিন্ট থাকে, এটাতেও তেমন আছে। যাতে যে কেউ চাইলেও বের করতে না পারে। সবমিলিয়ে ভালো একটা এমাউন্ট (টাকা) অপচয় হয়েছে বোর্ডের।’

একই বিষয়ে কলেজ পরিদর্শক জাহেদুল হক সিভয়েসকে বলেন, ‘আমি বিষয়টা শুনেছি যে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের ডেটে (তারিখে) ভুল হয়েছে। এটা একটা ডকুমেন্ট; তাই অবশ্যই কারেক্ট (সঠিক) করে দিতে হবে। এটা শিক্ষার্থীর সারাজীবন লাগে; তাই বোর্ড কর্তৃপক্ষকে সঠিকটা দিতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কি পরিমাণ বিতরণ হয়েছে তা আমি জানি না। এটা আসলে আমার জানার বিষয়ও না। আমি ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় দেখি। এটা পরীক্ষা শাখা জানবেন।’

অন্যদিকে, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অসঙ্গতির কারণে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১৫ মার্চ সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধেও প্রেষণে কার্যক্রম বাতিল করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে  বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না বোর্ডের কর্মকর্তারা।

অভিযোগ এসেছে, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার খবর আসতেই একদিনের নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে ঢাকায় গেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ। যেখানে সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী, কর্মস্থল থেকে ৫ কিলোমিটারের বাইরে গেলে কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্মস্থল ত্যাগের সে অনুমতি না নিয়ে কেবলমাত্র নৈমিত্তিক ছুটিতে ঢাকায় গেছেন।

ট্রান্সক্রিপ্টকাণ্ড ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে বোর্ডের সচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল আলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘আজ সারাদিন নাম ও বয়স সংশোধনী মিটিং নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। অফিসিয়ালি আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এরপরও যখন বললেন; বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সে হিসেবেই পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

-সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়