Cvoice24.com

দেরিতে আসায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পদে পরীক্ষা দিতে পারেননি শতাধিক চাকরিপ্রার্থী

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ২২ এপ্রিল ২০২২
দেরিতে আসায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পদে পরীক্ষা দিতে পারেননি শতাধিক চাকরিপ্রার্থী

কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের ভিড়।

নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত না হওয়ায় কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন নি প্রায় শতাধিক চাকরিপ্রার্থী। কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার পর কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের ৬৪টি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। প্রবেশপত্রের শর্তানুযায়ী পরীক্ষা শুরুর এক ঘন্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করার নিয়ম। কিন্তু যানজটের কারণে প্রায় শতাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি। অনেক পরীক্ষার্থী মাত্র দুই মিনিট দেরি করায় নিয়মের দোহাই দেখিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ পরীক্ষার্থী। যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ার যুক্তি সঙ্গত কারণ জানানোর পরেও ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে এসময় অনেক নারী চাকরিপ্রার্থীকে কান্না করতে দেখা যায়। এ সময় বিনা কারণে তাদের লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ করেন পরীক্ষার্থীরা।

কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পেরে ক্ষুব্ধ এক পরীক্ষার্থী শুভ্রা দাশ বলেন, 'দুইটা বছর করোনার জন্য আমাদের এমনিতেই নষ্ট হয়েছে। মাত্র দুই মিনিট দেরি হওয়ায় ভেতরে যেতে দেয়নি। এটা অন্যায়। আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি তাদের বলার পরেও তারা আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। এটা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা ছিল। আমরা তো একেবারে সময় শেষ করে আসিনি। সাড়ে দশটায় এসেও কেন আমাদের ঢুকতে দিবেনা। একটা মেয়ে তাদের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেছে তাকেও যেতে হয়নি। আমাদেরকে পেটানোর জন্য লাঠি নিয়ে বের হইছে।'

আরেক পরীক্ষার্থী তুলি সরকার বলেন, 'গাড়ির জন্য একঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এতো কষ্ট করে দেখেন আমি ১০টা ৩২ এ আসছি। আধাঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। মাত্র দুই মিনিটের জন্য পরীক্ষা দিতে দেয়নি। এটা অন্যায়। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছুই না।'

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, 'ঘটনা সত্যি। তবে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। তাছাড়া পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে। এমনকি প্রবেশপত্রের পিছনেও কিন্তু শর্ত দেওয়া ছিল। বারবার করে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে। এরপরেও এখন কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে না পারে তাহলে আসলে কিছুই করার নেই।'

লাঠিচার্জ করার অভিযোগ বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, 'বিষয়টা জানি না। ডিসি স্যার বলতে পারবেন। তবে পরীক্ষার নির্ধারিত সময় অতিক্রম করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিবেনা এইটাই নিয়ম।'

জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৮৫০টি। আর এই পদের বিপরীতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন ৫৪ হাজার ৮৯৪ জন। অর্থাৎ এক পদের জন্য লড়ছেন ৬৪ জন চাকরিপ্রত্যাশী। প্রথমধাপে চট্টগ্রামসহ দেশের ২২টি জেলায় শুক্রবার (২২ এপ্রিল)সকাল ১১টায় শুরু হয়েছে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা। নগরের ৬৪টি কেন্দ্রে বেলা ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রথমধাপে চট্টগ্রামে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ৬৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষা ঘন্টাব্যাপী চলে। প্রায় ৫৫ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী এ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় দেড় বছর পর এই নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপে ২০ মে ৩০ জেলায় এবং ৩ জুন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৩১টি জেলায়। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু  করোনা পরিস্থিতির কারণে নিয়োগ পরীক্ষা আটকে যায় এবং ইতোমধ্যে সারা দেশে অবসরজনিত কারণে আরো ১০ হাজারেরও বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। শিক্ষক ঘাটতি নিরসনকল্পে  মন্ত্রণালয় পূর্বের বিজ্ঞপ্তির  শূন্যপদ ও বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্যপদ মিলিয়ে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়