রাউজানের আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে থাকছে ওয়ালটন চালডালডটকম এলজিসহ ২৮ প্রতিষ্ঠান

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় রাউজানের চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর।  ১১৭ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বিজনেস ইনকিউবেটরটির নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামালের নামে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের হাত ধরে বুধবার উদ্বোধন হতে যাওয়া এ বিজনেস ইনকিউবেটরটিতে শুধু প্রশিক্ষণই নয়; দেশি-বিদেশের প্রতিষ্ঠিত মোট ২৮টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে সেখানে চলে গেছে ওয়ালটন, চালডাল ডটকম, এলজি, বাটারফ্লাই, অস্ট্রেলিয়ান ক্লিক প্যাডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্পটি ৫ একর জমির জায়গা জুড়ে অবস্থিত। সেখানে রয়েছে ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০তলা একটি ইনকিউবেশন ভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ৬ তলা একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন। এছাড়াও ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের চার তলাবিশিষ্ট পৃথক দুটি (একটি নারী, একটি পুরুষ) আবাসিক ডরমিটরি ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি ডরমিটরিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। 

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ জুন) দুপুরে প্রকল্পস্থলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রকৌশলী মো. রফিকুল আলম বলেছেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প যুগান্তকারি পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের আওতায় চুয়েটের শিক্ষার্থী ছাড়াও বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে যে কেউ এসে এখানে কাজ করতে পারবে। এই জন্য আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে আগামীকাল শুভ উদ্ধোধন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশে চলছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এই শিল্পবিপ্লব নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি হবে নতুন উদ্যোক্তা। বাড়বে দক্ষতা হবে প্রযুক্তির প্রসার। বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রযুক্তি নিয়ে চর্চার পরিধি বাড়লেও নেই দক্ষ জনগোষ্ঠী। নতুন নতুন উদ্ভাবনী আইডিয়া তরুণদের মাঝে থাকলেও সঠিক নিদের্শনা ও পরিচর্যার অভাবে অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সঠিক নিদের্শনা ও পরিচর্যার বিষয়টি প্রধান্য দিয়ে গড়ে তুলা হয়েছে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প।’

বিজনেস ইনকিউবেটরের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে চুয়েট উপাচার্য বলেন, ‘হাঁসমুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর যন্ত্রের নাম ইনকিউবেটর। তবে এই ইনকিউবেটর প্রকল্পে না আছে ডিম না ফুটবে বাচ্চা। এমন একটি ব্যবস্থাপনা যেখানে নতুন ও সম্ভাবনাময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সঠিক নিদের্শনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে সফল ও বাজার উপযোগী পণ্য ও সেবায় পরিণত করে। এই প্রকল্পে নতুন আইডিয়াকে দিবে বিশেষ অগ্রাধিকার। তরুণ উদ্যোক্তারা পাবে ১৮ মাসে বিনামূল্যে এই ইনকিউবেটরে কাজ করার সুবিধা। এছাড়াও কাজের অগ্রগতি হলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের সুযোগ করে দিবে এই প্রকল্প।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, তরুণ উদ্যোক্তা ছাড়াও বিজনেস ইনকিউবেটরে থাকছে দেশ-বিদেশের প্রতিষ্ঠিত মোট ২৮টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে চুয়েটে চলে এসেছে ওয়ালটন, চালডাল ডটকম, এলজি, বাটারফ্লাই নামে দেশিয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও ইনকিউবেটরে থাকবে ক্লিক প্যাড নামে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠানও।’

এই প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ড. মসিউল হক বলেন, ‘বিজনেস ইনোভেশন ইকো-সিস্টেমে স্মরণীয় পদক্ষেপ শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ওইভাবে দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারছে না। এই কারনে নতুন নতুন আইডিয়াকে পরিচর্যা করলে আমরা সেগুলো প্রডাক্ট হিসেবে পরিণত করা যাবে। এখানে কোন উদ্যোক্তাদের ফাইন্ডিং— এ জটিলতা থাকলে এই প্রকল্পের আওতায় ১০ লাখ টাকা দিয়ে আইডিয়াকে কার্যকর করা হবে।’

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্পের আওতায় চুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রায় ৫ একর (৪ দশমিক ৭ একর) জমির ওপর ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ইনকিউবেশন ভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ৬ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ইনকিউবেশন ভবনের মধ্যে রয়েছে— স্টার্টআপ জোন, আইডিয়া/ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, ই-লাইব্রেরি, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, বঙ্গবন্ধু কর্নার, এক্সিবিশন/প্রদর্শনী সেন্টার, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সভাকক্ষ প্রভৃতি।

উদ্যোক্তা ও গবেষকদের কাজের সুবিধার্থে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও) ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি বিগ ডাটা ল্যাব, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাব-স্টেশন ও সোলার প্যানেল রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আইটি ফার্মের জন্য পৃথক কর্নার, অত্যাধুনিক সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, রিক্রিয়েশন জোন, মেকার স্পেস, ডিসপ্লে জোন, প্রেস/মিডিয়া কাভারেজ জোন, নিজস্ব পার্কিং সুবিধা প্রভৃতি।

অন্যদিকে, মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবনে ২৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম এবং ৩০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক ৮টি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনার কক্ষ রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪ তলাবিশিষ্ট পৃথক দুটি (একটি নারী ও একটি পুরুষ) আবাসিক ডরমিটরি ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি ডরমিটরিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া দুটি মিনি সুপার কম্পিউটার সম্বলিত অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব শিগগিরই স্থাপিত হতে যাচ্ছে চুয়েটে।

এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর, শেখ জামাল ডরমিটরি ও রোজী জামাল ডরমিটরির শুভ উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আরও সংযুক্ত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

অনুষ্ঠানটি গণভবন, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও চুয়েট তিন প্রান্ত থেকে একযোগে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম-৬ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য এ.বি.এম. ফজলে করিম চৌধুরী, চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, চুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী এবং শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটররের উপকারভোগী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।

সিভয়েস/ডিসি