Cvoice24.com

ভুলে ভরা বদলির আদেশ, অধ্যাপক হয়ে গেলেন প্রভাষক!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ১৪ আগস্ট ২০২২
ভুলে ভরা বদলির আদেশ, অধ্যাপক হয়ে গেলেন প্রভাষক!

সম্প্রতি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে একযোগে পাঁচ কর্মকর্তার বদলির আদেশ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সরকারি চাকরিতে বদলির ঘটনা স্বাভাবিক হলেও একসঙ্গে এতোবড় রদবদলের ঘটনা আগে ঘটেনি সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া পাঁচ কর্মকর্তার মধ্যে দুই কর্মকর্তার সঙ্গে ঘটেছে ‘পদ বদলের ঘটনা’। একজন অধ্যাপক পদের হলেও বদলির আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে প্রভাষক হিসেবে। অপরদিকে একই জায়গায় একই পদে দুইজনকে পদায়ন করেছে মন্ত্রণালয়। যেকারণেই গত কয়েকদিন ধরেই এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ডে চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা। যদিও মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বলা হয়েছে নিছক ভুল। 

যেখানে কয়েকমাস পরেই শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তাদের অবসরে যাওয়ার কথা  সেখানে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অধ্যাপকের জায়গায় প্রভাষক উল্লেখ এবং একই পদে দুই অধ্যাপককে পদায়ন করে তাঁদের ‘হেয়’ করা হয়েছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা।  

জানা যায়, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে তিন বছরের বেশি সময় থাকায় একসঙ্গে এ পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। তারমধ্যে একই শাখার তিন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বদলিতে হতবাক বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তারা। কিন্তু যে কারণে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এ কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে; সে একই কারণ থাকার পরেও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়নি। উল্টো পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আর তাই নিয়ে জোর সমালোচনা চলছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যে পাঁচজনকে বদলি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এক সুতা পরিমাণ দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তাছাড়া তাদের মধ্যে দুইজন তো জানুয়ারিতেই অবসরে চলে যাবে। এরমধ্যে এভাবে বদলিটা অস্বাভাবিক। এখানে যে ভুলটা হয়েছে সেটা মোটেও স্বাভাবিক ভুল না। কারণ আমার যাবতীয় কার্যকলাপ মন্ত্রণালয়ে রেকর্ড আছে। আইডি নম্বর দিলে আমাদের সব তথ্য হাজির। সেখানে একজন অধ্যাপককে প্রভাষক হিসেবে উল্লেখ করা সাধারণ ভুল না। আবার একই পদে একই জায়গায় দুইজন। এটাও স্বাভাবিক লাগছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন বোর্ডে আছেন। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানও অনেকদিন বোর্ডে আছেন। আবার একই আদেশে একজন উপপরিচালক থেকে সচিব হয়েছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ঘটেছে উল্টো। তাহলে কি চট্টগ্রামের জন্য এক নিয়ম আবার ঢাকার জন্য আরেক নিয়ম?’

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. ইকবাল হোসেনকে বদলি করা হয়েছে রাজশাহী কলেজে এবং অডিট অফিসার মৃনাল চন্দ্র নাথকে বদলি করা হয়েছে বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে। শিক্ষাবোর্ডের হিসাব শাখার এ দুই কর্মকর্তাই ১৪তম বিসিএসের। ৩০ বছরের চাকরি জীবন শেষে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যাবেন তাঁরা। চাকরির প্রায় শেষ সময়ে এসে বদলির প্রজ্ঞাপনে ঘটেছে পদ অদল বদলের ঘটনা। ১৯৯৩ সালে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন অধ্যাপক মৃনাল চন্দ্র নাথ। সর্বশেষ কর্মস্থল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে তিনি অডিট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি অধ্যাপক পদের হলেও বদলির আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে প্রভাষক হিসেবে। যেখানে শিক্ষা ক্যাডারের প্রথম ধাপ প্রভাষক পদ। অথচ এই কর্মকর্তা প্রায় ৩০ বছর ধরে শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

অপরদিকে, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. ইকবাল হোসেনও ১৯৯৩ সালে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। বদলির আদেশে তাঁর পদবী ঠিক থাকলেও নতুন কর্মস্থলে (রাজশাহী কলেজে) তাঁর জায়গায় যোগদান করেছেন আরেক অধ্যাপক। অর্থাৎ একই পদে দুইজনকে পদায়ন করেছে মন্ত্রণালয়। তাঁর (আবুল কালাম মো. ইকবাল হোসেন) বদলি আদেশের সাতদিনের মাথায় ১১ আগস্ট ঢাকা বোর্ডের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. শাহ তৈয়বুর রহমান চৌধুরীকেও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পদে রাজশাহী কলেজে বদলি করা হয়েছে। যদিও আগে বদলি করা হয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. ইকবাল হোসেনকে। কিন্তু পরে বদলি হলেও ওই পদে ইতোমধ্যেই যোগদান করেছেন অধ্যাপক মো. শাহ তৈয়বুর রহমান চৌধুরী। বদলিকৃত কর্মকর্তাদের ১০ আগস্টের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হলেও বদলির সঙ্গে পদবী অদল-বদলের ঘটনায় নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে পারেননি তাঁরা।

এ বিষয়ে বদলি কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষাবোর্ড থেকে আমার রিলিজ হয়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী রাজশাহী কলেজে যোগদান করবো। যদিও আমাকে বদলি করা পদে ইতোমধ্যে আরেকজন স্যার যোগদান করেছেন। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে বদলি করা হয়েছে বাকিটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারেই হবে।’

এদিকে প্রজ্ঞাপনে পদবীর অদল বদলের ভুল সংশোধনেরও আবেদন করেছেন ওই কর্মকর্তা মৃনাল চন্দ্র নাথ। তিনি বলেন, ‘আদেশে ভুল আসছে। সংশোধনের জন্য আবেদন করেছি। এটা প্রসেসে আছে। সংশোধন হয়ে এলে তারপর রিলিজ নিবো।’

জানতে চাইলে উপ-সচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন (সরকারি কলেজ-২) সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা ভুলটা জেনেছি। উনি সংশোধনের জন্য আবেদনও করেছেন। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। ভুলটা আসলে আমরা পিডিএস দেখে দেই। অনেকসময় পিডিএস আপডেট থাকে না। তাই ভুলটা হয়ে যায়। তারা যখন আবেদন করেন তখন ঠিক করা হয়।’

এক পদে দুই অধ্যাপক পদায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টা আমার নলেজে নাই। উনার ক্ষেত্রে তো ভুল হয় নাই। এখন একই পদে যদি দুইজন হয়ে যায় উনারা আমাদের জানালে আমরা কারেকশনের ব্যবস্থা করবো। একটা পদে তো দুইজন হতে পারেন না। যদিও এটা আমার নলেজে নাই। আমার কাছে এলে দেখবো।’

সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়