Cvoice24.com

চট্টগ্রামে নতুন বছরে ‘বই উৎসব’ নিয়ে শঙ্কা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১৪, ২৪ নভেম্বর ২০২২
চট্টগ্রামে নতুন বছরে ‘বই উৎসব’ নিয়ে শঙ্কা

নতুন বই হাতে উচ্ছ্বাসিত শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

চলমান বৈশ্বিক সংকটে দেশের অন্যান্য খাতসহ ডলার স্বল্পতা প্রভাব ফেলেছে মুদ্রণ শিল্পেও। অবস্থা একটাই চরমে পৌঁছেছে যে দ্বিগুণ দামেও খোলা বাজারে মিলছে না কাগজের দেখা। আর এই কাগজ সংকটের কারণে এবার চট্টগ্রামে নতুন বছরে ‘বই উৎসব’ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেননা এখন পর্যন্ত এক তৃতীয়াংশ বইও ছাপাতে পারেনি ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)। প্রতিবছর যেখানে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যেই বই ছাপা থেকে শুরু করে বিলি করা হয়। আবার সময়মতো বই পেলেও বইয়ের ‘মান’ ভালো না হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ কারণেই সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বই পাওয়া  নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই ছাপানো শুরু হলেও প্রাক-প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি। মানে ছাড় দিয়েও নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

এদিকে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য চট্টগ্রামের প্রাক-প্রাথমিকে নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ২৯৭টি। আর মাধ্যমিকে বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৩টি। এরমধ্যে মাধ্যমিকের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ২২৯টি। কারিগরি শিক্ষার শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৬টি। এছাড়া মাদ্রাসা পর্যায়ে (ইবতেদায়ী ও দাখিল) শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪৬ লাখ ৩১ হাজার ৮৭৮টি। যদিও মাধ্যমিক পর্যায়ে অল্প করে বই আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। 

অন্যদিকে, গত ২২ নভেম্বর বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়— দেশে ২০৬টি পেপার মিল রয়েছে, যার মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র ৮০টি কারখানা। লেখা ও ছাপার কাগজের কাজ করে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫টি কারখানা। এর মধ্যে পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রমকে ঘিরে রয়েছে অন্তত ১৫টি কাগজ মিল। পাঠ্যবই ছাপার দরপত্রে অংশ নেয়ার আগে ছাপাখানার মালিকরা কাগজ মিল মালিকদের সঙ্গে আগাম চুক্তি করে থাকে। কিন্তু প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের দরপত্রে অংশ নেয়ার আগে বেশির ভাগ ছাপাখানা ঠিকমত চুক্তি করতে পারেনি। কারণ ডিপিই (প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর) গতবছরের বই ছাপার বিল পুরোপুরি পরিশোধ না করায় কাগজ মিল মালিকদের দেনা পরিশোধ করতে পারেনি ছাপাখানাগুলো। এ কারণে তারা এবার যথাসময়ে কাগজের চাহিদাপত্র দিতে পারেনি। যার কারণে মিলগুলোও কাগজ উৎপাদনেরর উপকরণ সংগ্রহ করেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সময়ের মধ্যে কাজ করেন না। যে কারণে দেরিতে দরপত্র আহবান করায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। আবার দরপত্রে ন্যূনতম ৮৫ শতাংশ ব্রাইটনেসের (উজ্জ্বলতা) মুদ্রণ কাগজে পাঠ্যবই ছাপার কথা। কিন্তু কাগজ সংকটে এটা কোনোভাবেই মানতে পারছে না কাগজ মালিকরা। এরমধ্যে একেবারে অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ৩৫ কোটি বই লাগবে। এখন দেখা যাবে তাড়াহুড়োয় বইয়ের মান খারাপ নয়তো সঠিকসময়ে শিক্ষার্খীরা বই পাবে না। 

নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে বই আসবে কিনা এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফরিদুল আলম হোসাইনী সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের বই আসতে শুরু করেছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যেই আমাদের বই চলে আসবে। এসব দেখভাল করছে এনসিটিবি। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা আমাদের কত চাহিদা তা এসসিটিবিকে জানিয়ে দিয়েছি। এখন তারাই সব পদক্ষেপ নিবেন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছেন যাতে নতুন বছরে সকল শিক্ষার্থীদের হাতে বই থাকে।’

বইয়ের মান ভালো না হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি এটাতে আমাদের কোনো হাত থাকে না। আমরা চাহিদা দিলে আমাদের সে অনুযায়ী বই পাঠানো হয়। যেহেতু একটা প্রেসে এসব বই ছাপানো হয় না সেখানে কিছু ক্ষেত্রে কখনো কখনো সমস্যা হয়। তবে আমরা কখনো বইয়ের মান খারাপ পাইনি। এরপরেও যদি আপনাদের নজরে আসে আর আমাদের জানালে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাবো। বাকি পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষই নিবেন।’

একইভাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘অন্যান্য সময়ে এতোদিনে আমাদের প্রায় বই চলে আসে। এবার কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে আশা করছি সময়ের মধ্যেই আমাদের সব বই চলে আসবে। অযথা চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

গত বছরের বইয়ের মান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘হ্যাঁ গতবার কয়েকটি বইয়ের মান নিয়ে অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর জানিয়েছিলাম। আশা করছি এবার অসুবিধা হবে না। এরপরেও আমরা নজরদারিতে রাখবো পুরো বিষয়টা।’

-সিভয়েস/এসআর/এআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়