Cvoice24.com

ইংরেজিতে খারাপ ফলে পিছিয়ে চট্টগ্রাম বোর্ড

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২৮ নভেম্বর ২০২২
ইংরেজিতে খারাপ ফলে পিছিয়ে চট্টগ্রাম বোর্ড

পর পর দুই বছর চট্টগ্রাম বোর্ডের ফলাফল আগের বছরের তুলনায় ভালো ছিল। কিন্তু এবারের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে। এছাড়া গত চার বছরের তুলনায় বেড়েছে জিপিএ ৫। তবে গতবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হার ভালো ছিল। কিন্তু এবার তিন বিষয় বাদে সব বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ায় শতকরা হিসেবে গড় পাসের হারে অন্য বোর্ডের চেয়ে পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। 

যদিও বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন— করোনা পরবর্তী এবারের পরীক্ষার ফলাফল ভালো হয়েছে। তবে ইংরেজি বিষয়ে খারাপ ফলাফল না হলে অন্য বোর্ডকে টপকাতে পারতো চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। পার্বত্য অঞ্চলে ইংরেজিতে খারাপ ফলের কারণে সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। যার কারণে গড় হারে পিছিয়ে গেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন পাঁচ জেলা ও মহানগরে এবার পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে। চট্টগ্রাম মহানগরের স্কুলগুলোতে পাসের হার ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ। যা গতবার ছিল ৯৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় এবার পাসের হার ৮৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যা গতবার ছিল ৯১ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে এ বছর পাসের হার ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ। গতবার যা ছিল ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ।

চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজার মিলিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় এক লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৯ জন। পরীক্ষায় অসুদপায় অবলম্বন করায় বহিস্কার করা হয় পাঁচজনকে। বাকি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ৩০ হাজার ১৩ জন। পাসের হার ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অকৃতকার্যের হার ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সংখ্যায় যা ১৮ হাজার ৫২১ জন।

এছাড়া কক্সবাজার জেলায় এবার পাসের হার ৮৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গতবার ছিল ৯০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রাঙ্গামাটি জেলায় এবার পাসের হার ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ। গতবার যা ছিল ৮৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গতবার ছিল ৮৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। একইসঙ্গে বান্দরবান জেলায় এবার পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যা গতবার ছিল ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।

এদিকে অকৃতকার্য হওয়া ১৮ হাজার ৫২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ হাজার ১৯৪ জনই এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। বাকি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের পরীক্ষায় অকৃতকার্য। যার কারণে সার্বিক বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল খারাপ হয়। 

গতবার চট্টগ্রাম বোর্ডের এসএসসির পাসের হার ছিল পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ। আর এবার সে রেকর্ড ভেঙ্গে পাসের হার কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রাম বোর্ডে ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০১৯ সালে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০২০ সালে পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ছিল ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। 

এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘গতবার পরীক্ষা হয়েছিল শুধুমাত্র তিনটি বিষয়ে। জেএসসির বিষয়ভিত্তিক ফলাফলের মাধ্যমে নম্বর ও পাস-ফেল নির্ধারণ করা হয়েছিল। এজন্য যারা জেএসসিতে পাস করেছিল, পরীক্ষা ছাড়াই তারা এসএসসিতেও পাস করে। এজন্য পাসের হারে রেকর্ড ছিল। এবার তিন বিষয় বাদে সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। তার পরেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার ফলাফল ভালো হয়েছে। আর পাসের হার কিছুটা কমে যাবার ক্ষেত্রে প্রভাব রয়েছে ইংরেজি বিষয়ের কারণে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইংরেজিতে খারাপ ফলাফলের বড় কারণটা স্কুলগুলোতে এই বিষয়ের শিক্ষক সংকট রয়েছে। দেখা যাচ্ছে এ কারণে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরা গিয়ে ইংরেজি বিষয়ে পড়াচ্ছেন। এ বিষয়টাতে উতরে উঠতে পারলে আমাদের বোর্ডের ফলাফল ভালো হবে।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ আরও বলেন, 'পাহাড়ের জনগোষ্ঠী একটু পিছিয়ে পড়া। তাদের আরো পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা দরকার। এখন তাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি সুফল মিলবে।'

অন্যদিকে, এবার ছাত্র ও ছাত্রীদের পাসের হার প্রায় সমান। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবার ছাত্রী ৮০ হাজার ৫২৬ জন এবং ছাত্র ৬৮ হাজার ১৩ জন ছিল। ছাত্রী সংখ্যা বেশি হলেও ছাত্রী পাসের হার ৮৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং ছাত্র ৮৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পাসের দিক থেকে এবার এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা। বিজ্ঞানে ৯৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং মানবিকে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। গতবছরের তুলনায় মানবিকে পাসের হার এবার কমেছে ১৯ শতাংশ। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার গতবছরের মতোই। বিজ্ঞানে গতবছর ছিল ৯৬ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এছাড়া গত পাঁচ বছরে জিপিএ-৫ এ রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১৮ হাজার ৬৬৪ জন। যার মধ্যে ছাত্রী সংখ্যাই বেশি। ১০ হাজার ৮৮৯ জন ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে। ছাত্র পেয়েছে ৭ হাজার ৭৭৫ জন। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৭৯০ জন। মানবিক বিভাগে ৪১৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২ হাজার ৬৮৬ জন। এছাড়া এবারের পরীক্ষায়  শতভাগ পাস করেছে এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭১টি। গতবারের চেয়ে বেড়েছে ১৭টি। যদিও এবারে পাসের হার শূন্য এমন কোনো বিদ্যালয় ছিল না।

সিভয়েস/এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়