আবারও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
সিভয়েস প্রতিবেদক
হাটু পানিতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে এক পরীক্ষার্থী ছবিটা চকবাজার এলাকা থেকে তোলা
চট্টগ্রামে শনিবার (২৬ আগস্ট) দিনভর থেমে থেমে গুড়ি বৃষ্টি হলেও মধ্যরাত থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যায়। রোববার (২৭ আগস্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১৪৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে বরাবরের মতই তলিয়ে গেছে নগরের নিচু এলাকাগুলো। আর তাতেই ভোগান্তিতে পড়ে চট্টগ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। যে জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রামসহ তিন শিক্ষাবোর্ডের ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে ২৭ আগস্টে আনা হয়েছিল, সেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। তবে সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও অতি বৃষ্টির কারণে এক ঘন্টা পিছিয়ে সকাল ১১টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়, যা চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক মোমিন হোসেন বলেন, ‘রাত থেকে যখন দেখতেছি অনেক বৃষ্টি হচ্ছে তখন থেকে ভয় পাচ্ছিলাম। বাচ্চাকে কিভাবে পরীক্ষা কেন্দ্র দিয়ে আসব!বৃষ্টি না থাকলে বাচ্চা নিজে যেতে পারত। এখন যে বৃষ্টি আর রাস্তাঘাটের কথা আর নাই বলি। এই বৃষ্টিতে ঠিকঠাক মতো দাঁড়িয়ে পাওয়া যায় না। তার উপর দ্বিগুণ তিন গুন ভাড়া চায়। এখন যেহেতু বিপদে পড়ছি বাধ্য হয়ে যেতে হবে। অনেক কষ্ট করে বাচ্চাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাই দিলাম। আসার সময় দেখছিলাম অনেকে পরীক্ষার্থী গাড়ির অপেক্ষায় আছে। কি যে হবে তাদের!'
এ অভিভাবক আরও বলেন, যে বন্যা বৃষ্টির কারণে পরীক্ষা পিছিয়েছে, সে বন্যা-বৃষ্টি তাদের পিছু ছাড়লো না। ওদের কপালটাই খারাপ। এখন যদি পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকরা দেরি হওয়ার বিষয়টা সেক্রিফাইস করেন বাচ্চাদের জন্য তাই ভালো হবে।'
এদিকে, এইচএসসির প্রথম দিনে যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের পরীক্ষা চলছে। অতি বৃষ্টির কারণে প্রথমদিন এক ঘণ্টা পিছিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরবর্তী পরীক্ষাগুলো আগের রুটিন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার।
এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন ১১৩টি কেন্দ্রে ২৭৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৪৬৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ছাত্র ৪৭ হাজার ৫৩২ জন। ছাত্রী ৫৪ হাজার ৯২৯ জন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০ হাজার ৭৪৫ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩৪ হাজার ৯৭০ জন ও মানবিক বিভাগ থেকে ৪৬ হাজার ৭৪৬ জন এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে ৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথ জানান, ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রাম নগর ও এর আশেপাশের কেন্দ্রগুলোতে এক ঘন্টা পিছিয়ে সকাল ১১টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলবে।
প্রসঙ্গত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত ১৩ আগস্ট রাতে তিন শিক্ষা বোর্ডের (চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড) উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষা পেছানো হয়। স্থগিত চার পরীক্ষার মধ্যে ১৭ আগস্টের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা হবে ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০ আগস্টের বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ১ অক্টোবর, ২২ আগস্টের ইংরেজি প্রথম পত্র ২ অক্টোবর আর ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম পরীক্ষার প্রথম চারটি বিষয়ের পরীক্ষার নতুন তারিখ ১, ৩, ৫ ও ৮ অক্টোবর।