Cvoice24.com

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড
টেবিলে টেবিলে সেই হয়রানি পড়ছে না চোখে!

শারমিন রিমা, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ৩১ আগস্ট ২০২৪
টেবিলে টেবিলে সেই হয়রানি পড়ছে না চোখে!

নাম, বয়স সংশোধন, হারানো মার্কশিট, সার্টিফিকেট তোলা— সবই অনলাইনে। তবু চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এমন সেবা নিতে গিয়ে টেবিলে টেবিলে হয়রানি-ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ভুড়ি ভুড়ি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এসব নিয়ে এখন আর কারো মুখে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ‘পতনের পর পরিবর্তন’ তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার ৫ ঘণ্টারও বেশি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ঘুরে এমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

যদিও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের ভাষ্য, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে নয়, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সবকিছু নিজেই কঠোরভাবে মনিটরিং করছে। এরপরও সেবা দিতে কেউ টাকা দাবি করলে কিংবা কোনো ধরনের হয়রানির চেষ্টা করলে অভিযোগ জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সরেজমিনে বোর্ডের তৃতীয় তলায় কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া আকিব হাসনাতের সাথে। তিনি সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘১৬ জুলাই যেদিন আন্দোলন হলো সেদিন আমি সকাল ১০টার দিকে এসেছিলাম। আমার ভাইয়ের এসএসসির সার্টিফিকেটে ভুল সংশোধন করতে। অপেক্ষা করতে করতে সারাদিন বোর্ডেই চলে গেছে। এরমধ্যে বিকেলে গন্ডগোলের ভেতরে পড়ে যাই। পরে কাজ শেষ না করেই বোয়ালখালী চলে যাই আমরা। এরমধ্যে একদিন এসে কাগজপত্র দিয়ে গেছি। আজকে সার্টিফিকেট কবে পাবো তা জানতে আসছি। কোনো ঝামেলাই হয় নাই। খুব তাড়াতাড়ি কাজ হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় যখন আসছিলাম কয়েকজন টাকা চাইছিল। তারা মনে হয় দালাল এমন কেউ হবে। এই মাসে আমি দুইবার এলাম কিন্তু সেদিনের ওই লোকদের (দালাল) আর দেখি নাই। মনে হয় সব সোজা হই গেছে। এখন স্টুডেন্টদেরকে ভয় পায় তাই ঘুষের কথা মুখেও আনে না। যাই হোক, এটাই শান্তির বিষয়। সেবা নিতে এসে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না।’ 

বোর্ডের পঞ্চম তলায় কথা হয় এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মামুনুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইট থেকে নাম্বার নিয়ে ফোন করে ভর্তির বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছিলাম উনারা (কর্মকর্তারা) বলেছেনও। বিষয়টা ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছে পরিবর্তনের একটা হাওয়া লেগেছে সবখানে। এটা ভালো দিক। এপ্রিশিয়েট করছি। এভাবে সবসময় সেবাটা বজায় থাকলেই হয়। কাউকে আর ভোগান্তির ভেতরে পড়তে হয় না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সবসময় শুনে আসছি টাকা ছাড়া বোর্ডে কোনো কাজই হয় না। টেবিলে টেবিলে টাকা দেওয়া লাগে। আমার এক বন্ধুর ছেলের বয়স ঠিক করতে এসে কত যে ঝামেলায় পড়েছিল। আমিও আমার মেয়েটার সার্টিফিকেট সংশোধন নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম। নিজে এসে পরিবর্তনটা দেখে ভালো লাগছে। সরকার পরিবর্তনের কারণে দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর কর্মকর্তারা সোজা হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সামনে আর ঘুষ খাওয়ার সাহস করবে না।’ 

অথচ গত বছরের ২৮ নভেম্বর নাম সংশোধন করতে এসে হয়রানির শিকার  হওয়া অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফারজানা শিপু বলছিলেন, ‘আমার আর আমার ছোট বোনের এসএসসি ও এইচএসসি সার্টিফিকেটে মায়ের নামের বানান ভুল ছিল। মা মারা যাওয়ার পর বোর্ডে সার্টিফিকেট সংশোধন করতে গিয়ে আমাকে নাকানি চুবানি খেতে হয়েছিল। দুইমাসেও কোনো কাজ হয়নি। কতবার যে বোর্ডে এসে ফেরত গেছি। এরপর একজন এসে বললো চারটা সার্টিফিকেট ২৪ হাজার টাকা দিলে তিনি আমার কাজ করে দিবে। হয়রানি হচ্ছে দেখে আমি দিয়েও দিবো ভেবেছিলাম। পরে এক কর্মকর্তা সঠিকভাবে বুঝিয়ে বলায় ওই যাত্রায় আমাকে আর ঘুষ দিতে হয়নি। কাজটা হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেক।’

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নাম-বয়স সংশোধনের জন্য প্রতিমাসে গড়ে দেড় হাজারের মতো আবেদন জমা পড়ে। গত অর্থবছরে মোট আবেদন জমা পড়ে ২০ হাজার। এরমধ্যে নিষ্পত্তি করা হয় ১৭ হাজার আবেদন। বর্তমানে নাম সংশোধনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে এক হাজার ২১৫টি আর জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য পড়েছে ৭২টি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ডাকা ‘নাম ও বয়স সংশোধন’কমিটিতে উপস্থিত না থাকা ও যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন না করায় ঝুলে আছে আরও ৩৩৬টি আবেদন। এ নিয়ে সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আবেদন রয়েছে এক হাজার ৬২৩টি।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত কাজগুলোর কোনো কিছুই বসে নেই। হয়রানি বা ঘুষের বিষয়ে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে কোনো ধরনের অভিযোগ আসেনি। আমি চেষ্টা করছি শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং কড়াকড়িভাবে মনিটরিংও করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ১১ সদস্যের একটি কমিটি আছে। সবাই সিগনেচার করার পরে আমি চূড়ান্ত করি। আলাদা করে কেউ টাকা খেয়ে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আর এটা পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার দায়িত্ব সচিবের। এরপরেও কেউ নির্দিষ্ট অভিযোগ আমার কাছে নিয়ে এলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: