দাবি আদায় না হলে ‘কর্মবিরতির’ হুঁশিয়ারি
১১ বছরেও স্থায়ী হননি চসিকের ৫৪ প্রভাষক
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
ব্যানার হাতে শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে আছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে। কয়েকজন শিক্ষকের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা আছে— ‘পাঠদানে যদি হই যোগ্যতাসম্পন্ন তবে কেনো বেতন বৈষম্য’, ‘আমার স্কেল আমাকে দিন, মর্যাদার সাথে বাঁচতে দিন’, ‘দাবি মোদের একটাই স্কেল চাই স্কেল চাই’। তারা সকলেই চসিকের বিভিন্ন কলেজের প্রভাষক। তাদের দাবি— চসিকের নিয়োগবিধি অনুযায়ী লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষা দিয়ে ২০১৩ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কথা ছিল দুই বছরের শিক্ষানবীসকালীন সময় শেষ হওয়ার পর স্কেল প্রদানসহ নবম গ্রেডে অন্তভুক্তি হওয়ার। তবে ১১ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও স্থায়ী করা হয়নি।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৩টার দিকে নগরের টাইগারপাস চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা। প্রয়োজনে কর্মবিরতির মতো ‘কঠোর’ কর্মসূচির দেওয়া হবে বলেও হঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বঞ্চিত শিক্ষকরা বলেন, ‘২০১৩ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে নিয়োগবিধি রয়েছে তা জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকার নিয়োগের মাধ্যমে লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। কথা ছিল দুই বছর পর স্কেল প্রদান করবে এবং নবম গ্রেডেই অন্তভুক্তি হওয়ার কথা। তবে ২০১৫ সালে বেতন কাটামো পরিবর্তন হয়েছে; তখন তৎকালীন মেয়র মঞ্জুর আলম পরিবর্তন হয়ে গেছেন। কিন্তু দুই বছর পর শিক্ষানবীসকালীন সময়ের পর আমাদের যে বেতন কাটামো পরিবর্তন ও পাওয়ার কথা সেই স্কেল প্রদান করেনি। ধাপে ধাপে কয়েকধাপে বেতন বৃদ্ধি হলেও সেই স্কেল থেকে বঞ্চিত হই।’
তারা বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো বৈষম্যের শিকার হয়েছি। আমাদের সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত যে শিক্ষক রয়েছেন; তাদের মাধ্যমে আমাদের ২৩টি যে সিটি করপোরেশন কলেজগুলো রয়েছে। সেই কলেজগুলো আমাদের পাঠদান স্বীকৃতি ও বেনভেজে অর্ন্তভুক্ত এবং সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সেই ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে আসছে।’
শিক্ষকরা আরো বলেন, ‘তবে সম্প্রতি এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া শিক্ষকরা সকল সুযোগ-সুবিধা পান। অথবা আত্তীকরণ হওয়ার পর বা নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণ হই সেসকল শিক্ষকরা সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। এছাড়া ১৯৯৯, ২০০৫, ২০০৮ ও ২০১১ সালে যে সকল শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে তারা যে সকল সুযোগ সুবিধা পাই অথচ আমরা করপোরেশনের অধিভুক্ত হয়েও সেই সুযোগ থেকে চরমভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে বঞ্চিত হয়েছি।’
বঞ্চিত হওয়ার সেই বেতন স্কেলের জোর দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘বঞ্চিত হওয়া সেই স্কেল আদায় না হওয়া পর্যন্ত এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করে যাব। আপাতত আমরা এখানে অবস্থান করছি। পরবর্তীতে যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে কর্মবিরতির মতো যে কঠোর কর্মসূচি রয়েছে ধীরে ধীরে সেদিকেই অগ্রসর হবো।’
চসিক সূত্রে জানা গেছে, চসিক পরিচালিত ২৩টি কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত কলেজের জনবল কাঠামো অনুসারে এসব কলেজে ৩৮০টির অধিক পদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১৬৯টি পদে সহকারী অধ্যাপক এবং ৯৫টি পদে স্থায়ী প্রভাষকরা কর্মরত। বাকি ১১৬ পদের মধ্যে ২০১৩ সালে নিয়োগ হওয়া শিক্ষকদের ৫৪ জন কর্মরত। ২০১৩ সালে ৮০ জন নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ২৬ জন চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত ৩৮০ পদের বিপরীতে শূন্য থাকা পদগুলোতে তাদের (অস্থায়ী ৫৪ জন) স্থায়ী করার সুযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গতকালও (রবিবার) টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। ২০১৩ সালের পর বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও সেগুলো নিয়ম মেনে অর্থাৎ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।