Cvoice24.com

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে রাঙামাটির ম্যাকলিনের বই

রেফায়েত উল্যাহ রুপক, চবি

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ৫ জানুয়ারি ২০২৫
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে রাঙামাটির ম্যাকলিনের বই

নাম তার ম্যাকলিন চাকমা। জন্ম পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বরকল উপজেলার সুবলঙের হাজাছড়া গ্রামে। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ মাড়িয়ে, ছড়ার পানিতে ভেসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) থেকে পালি সাহিত্যে শেষ করেছেন স্নাতকোত্তর।

ম্যাকলিনের বেড়ে ওঠা পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। অল্প বয়সেই বাড়ি থেকে দুই তিন কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি ছড়ায় নৌকায় ভেসে স্কুলে যাতায়াত। প্রাথমিকের গণ্ডি চুকিয়ে মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য পরিবার থেকে দূরে সরতে হয় তাঁকে।

২০০১ সালে হাজাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির পর সেখান থেকেই প্রাথমিকের গণ্ডি চুকান ম্যাকলিন। পরে ভর্তি হন আরো ৩-৪ কিলোমিটার দূরে বরুনাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপরই পরিবার থেকে দূরে সরতে হয় তাঁকে। পাহাড়ের বাতিঘর খ্যাত মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করে ঢাকার মার্টিন লুথার কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি সাহিত্যে ভর্তি হয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন ম্যাকলিন।

মোনঘরে লেখালেখি শুরু করা ম্যাকলিনের পাহাড়ি জীবন, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আদিবাসীদের অস্তিত্ব, জীবনবোধের নানাদিক নিয়ে লেখা একটি বই যুক্ত হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বাংলা বিভাগে। তাঁর লেখা ‘নুও গোরি ফাগুন এঝের’ পড়ানো হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সাহিত্য কোর্সে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম হঠাৎ একদিন ফোন করে তাঁকে জানালেন এ সুখবর। ২০২৩ সালে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে বইটি বাংলা বিভাগের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সাহিত্য কোর্সে অনুসরণীয় বইয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আদিবাসীদের সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পর্কে বাঙালিরা বিশদভাবে জানুক এটাই তাঁর প্রত্যাশা।

ম্যাকলিনের শৈশব কেটেছে বরকলের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা হরিণামৌনের পাহাড়ে। তখন তাঁর নানা-নানিরা হরিণা পাহাড়ে জুম চাষ করতো। সেখানে জুম চাষ করতো ম্যাকলিনও। তখন থেকেই ম্যাকলিন পাহাড়কে রূপসী, সংগ্রামী, প্রেমিকা হিসেবে কল্পনা করা শুরু করে। সেখান থেকেই তাঁর লেখালেখির ভাবনা শুরু।

চাকমা ভাষায় ম্যাকলিনের তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। চাকমা ভাষায় কবিতা লেখার পাশাপাশি বাংলায়ও কবিতা লিখছে। পাশাপাশি চাকমা ভাষায় ছোটগল্প, গানও। চাকমা ভাষাকে সমৃদ্ধ ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠত করতে কাজ করছেন ম্যাকলিন। সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে নিয়ে যেতে চান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।

পাহাড়ে আদিবাসীদের জীবন অনেক সংগ্রামের। প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়েই টিকে থাকতে হয় তাদের।পাহাড়ের মানুষ মূলধারার জনগোষ্ঠী থেকে অনেক পিছিয়ে। অনেকক্ষেত্রে শিক্ষার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চা হয় মুষ্টিমেয়। সরকার যদি আদিবাসীদের অধিকার, সংস্কৃতি, সাহিত্য চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আরও অনেক এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা তাঁর।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: