Cvoice24.com

চট্টগ্রাম নগরে অভাবেই কাটে কবরীর প্রথম জীবন

সিভয়েস বিনোদন

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১৮ এপ্রিল ২০২১
চট্টগ্রাম নগরে অভাবেই কাটে কবরীর প্রথম জীবন

কবরী

জন্মস্থান বোয়ালখালী হলেও শৈশব ও কৈশোরে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরেই। অনেক বড় সংসার, বাবা শ্রীকৃষ্ণ দাস পালের পক্ষে তা চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই হাল ধরতে মাত্র ১৩ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে নাম লেখান মিনা পাল ওরফে কবরী। বাংলার এই জনপ্রিয় নায়িকার অভাব অনটনে কাটা দিনগুলো ওঠে এসেছে নিজের জীবনীগ্রন্থ ‘স্মৃতিটুকু থাক’-এ।  
 
আমাদের বৈষয়িক অবস্থা ভালো ছিল না। এতোগুলো ভাইবোনের লেখাপড়া, কাপড়-চোপড়, ঘর ভর্তি বড় বড় খানেওয়ালা ছোটবড় মিলিয়ে দুইবেলায় ২৪-২৫ জন। বিরাট খরচ। 

বাবার একলার রোজগারে কুলাচ্ছিল না। বড় ভাই কিছু সাহায্য করতো। আমাদের গ্রামের বাড়িতেও কিছু সম্পত্তি ছিল। ওসব বিক্রি করতে করতে প্রায় শেষের কোঠায়। 

তাই পুতুল খেলার সংসার থেকে ছুটি নিয়ে ভিন্ন জগতে সংসার পাততে আসতে হয়। ছোট্ট মেয়ে মিনার কাছে তাই আলো ঝলমল ঢাকা শহর এক বিস্ময়। তার আগামী যখন তৈরি হচ্ছে, বুঝবার মতো বয়সও তার হয়নি।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে আমি, বাবা, আলো দিদি তিনজন সদরঘাটের এক বোর্ডিংয়ে উঠলাম। মা ভাইবোন, স্কুলের বন্ধু, এমনকি পুতুল খেলার সাথীদের জন্য মায়া হচ্ছিল। 

সবকিছু বিসর্জন দিয়ে বলি হলাম কিছুটা বুঝে, কিছুটা না বুঝেই ১৩ বছরের মেয়েটি সবার মুখে হাসি ফোটাতে সংসারের হাল ধরল। কতটুকু পেরেছি জানি না। নিজের দিকে তাকানোর ফুরসত ছিল না।

স্মৃতি থেকে সদ্য প্রয়াত কবরী লিখেছিলেন, সেই ফিরিঙ্গি বাজার আলকরণ স্কুল, জেএমস সেন স্কুল, বান্ধবীর বাড়ি যাওয়া সবখানেই আমার অন্তহীন ছোটাছুটি। ভুলতেও পারি না ছোটবেলার স্মৃতি। ঘুরে ঘুরে কেবল মনে পড়ে। 

স্কুল ছুটির পর পূজার ফুল, বিল্বপত্র, দুর্বাঘাস এইসব জোগাড় করা আমার নিত্যদিনের কাজ। পূজার সময় মায়ের নতুন শাড়ি পরতে চাইতাম। বড় বোন লীলা বলতো আমি শাড়ি ছিড়ে ফেলব। ‘হিংসুটে’।

মনে পড়ে আমি যখন বেশ ছোট, আমার মায়ের এক-দু বছর অন্তর বাচ্চা হতো। দেখতাম মা নিজের পেট চেপে ধরে কাঁদতেন। আমাকে কিছু বলার আগেই দৌড়ে পাড়ার দাইমাকে ডাকতে যেতাম। 

মা হাসপাতালে গেলে তার অভাব খুব অনুভব করতাম। মাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকতাম। ছোট থেকেই মায়ের কান্না সহ্য হতো না। 

মা অনেক কাজ করতেন। সংসারের কোন কাজটি মাকে ছাড়া হয় শুনি? শুধু সন্তান জন্ম দিয়েই আমার মায়ের ক্ষান্তি হয়নি। নিজের সুখের কথা কোনোদিন ভাবেনি। 

ছোটবেলায় তার কাছে সতীনের সংসারে জালাতনের কথা শুনে শুনে ওসব ঘটনার পাত্রপাত্রীর চরিত্র এক রকম মনে আঁকা হয়ে যায়। মনে হতো আমিও এই গল্পের এক চরিত্র যে চরিত্র কথা বলে না, গভীরে প্রবেশ করতে পারে না, সাজাও দিতে পারে না, শুধু মার বুক ভরা কান্নায় শামিল হয়ে এতটুকু সান্ত্বনা দেবার অদম্য ইচ্ছাকে উজাড় করে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করতাম। 

অনেকদিন পর দেখা হলে মায়ের পা দুটি চেপে ধরে প্রণাম করবার মধ্যে কী যে তৃপ্তি পেতাম। মনে হতো মায়ের সবটুকু আশীর্বাদ বুঝি আমার একারই অধিকার। শুটিংয়ের সময় মায়ের কথা খুব মনে পড়ত। 
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়