সালমান শাহকে হারানোর ২৮ বছর
সিভয়েস২৪ ডেস্ক
ঢাকাই সিনেমাপ্রেমীদের এই দিনটি আজ (৬ সেপ্টেম্বর) বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজকের এই দিনটিতেই দর্শক হারিয়েছিলেন বাংলা সিনেমার রাজপুত্র নায়ক সালমান শাহকে। ১৯৯৬ সালের এই দিনে রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
পুলিশের একাধিক তদন্ত শেষে বলা হয়, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে তার পরিবার ও ভক্তরা এই তদন্ত কখনও গ্রহণ করেননি। বরং তাদের দাবি, সালমানকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। তার মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য আজো উদঘাটিত হয়নি।
বলা হয়, সালমান শাহ ছিলেন কালোত্তীর্ণ নায়ক। কোনো কালের মধ্যে তিনি সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তার ফ্যাশন সচেতনতা, স্টাইলিশ চলাফেরা সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য। ভক্তদের চোখে তিনি ছিলেন ‘স্বপ্নের নায়ক’। দক্ষ অভিনয়, সুদর্শন চেহারা আর বিশেষ স্টাইলের জন্য রাতারাতি দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। ছেলে ভক্তদের পাশাপাশি প্রচুর মেয়ে ভক্ত পান নয়ের দশকের এ ড্রিম বয়।
সালমানই একমাত্র নায়ক, সর্বমহলে যিনি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে এবং তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শকদের হলে গিয়ে ছবি দেখার অনভ্যাস দূর করেছিলেন।
১৯৮৫ সালে বিটিভিতে মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক ‘পাথর সময়’-এ একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে সালমান শাহ’র ক্যারিয়ার শুরু হয়। পরবর্তীতে অভিনয় করেছেন বেশ কিছু টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপনে।
১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে অমর এই নায়কের। এতে তার নায়িকা ছিলেন মৌসুমী। প্রথম সিনেমাতেই দর্শকদের মন জয় করে নেন সালমান। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মাত্র তিন বছরে সালমান শাহ অভিনয় করেছেন ২৭টি সিনেমায়। এর মধ্যে বেশিরভাগ সিনেমাই ছিল সুপারহিট ও ব্যবসা সফল।
সালমান শাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘জীবন সংসার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘সুজন সখী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম প্রিয়াসী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভেতর আগুন’ ইত্যাদি।
ক্ষণজন্মা এই নায়কের জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায়। তার পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। সালমানের নানা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ে সালমানের আসা নানার কারণেই।
সালমানের পারিবারিক নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড় ছিলেন। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন কণ্ঠশিল্পী। ইমন নামে অভিনয় জীবন শুরু হয় বিটিভিতে শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে পাস করেছিলেন তিনি।
সালমান শাহ ছিলেন বিবাহিত। চলচ্চিত্রে অভিষেকের আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। দাম্পত্য জীবনের ৪ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেন অভিনেতা। দেখতে দেখতে তার মৃত্যুর ২৮ বছর পার হয়ে গেছে। বেঁচে থাকলে বাংলা সিনেমার এই সুপারস্টার আজ ঠাঁই পেতেন বিশ্বের টপ টুয়েন্টি হ্যান্ডসাম ছেলেদের নামের তালিকায়।