Cvoice24.com

প্রবাসে ‌‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক বীজ’ বুনছেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

ওমর ফারুক হিমেল

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২২ জানুয়ারি ২০২১
প্রবাসে ‌‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক বীজ’ বুনছেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম

‘ডিসেম্বরের প্রথমদিকে সিউলের চুন চুং ইয়ং ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলাম। সিরিয়াল নিয়ে বসে আছি, কখন ডাক আসবে। কিছুক্ষণ পর একজন আগন্তুক সিট খালি রেখেই আমার পাশে বসে পড়লেন। আমি তখন মোবাইলে মনোযোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্য শুনছিলাম।’

‘ইট ইজ নট ব্লু স্টেট, ইট ইজ নট হোয়াইট স্টেট, ইট ইজ এ ইউনাইটেড স্টেট’- কথা শেষ হতেই পাশে বসা আগন্তুক প্রশ্ন করলেন, আমি কোন দেশের নাগরিক, কী আমার পেশা, কোথায় যাব। নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথার ঝুঁড়ি খুললেন। স্ব উদ্যোগে দিলেন নিজের পরিচয়। তিনি সিউলস্থ নাইজেরিয়া দূতাবাসের তৃতীয় সচিব উসমান।

প্রবাসী সাংবাদিক ওমর ফারুক হিমেলের সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন নাইজেরিয়া দূতাবাসের তৃতীয় সচিব উসমান।

এ সাংবাদিক বলেন, ‘আমি তাকে প্রশ্ন করলাম পেশা হিসেবে কূটনীতিক পেশা কেমন? উত্তরে বললেন ইট ইজ এ ভেরি প্রেস্টিজিয়াস প্রফেশন। আমাকে স্বপ্রণোধিত হয়ে তিনি বললেন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামকে চিনি কিনা, আমি বললাম জ্বি।’

কূটনীতিক উসমান বললেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের এবং নানা দূতাবাসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামকে উপস্থিত হতে দেখেছি। তিনি খুবই ডায়নামিক, একই সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, শিক্ষণীয় ইস্যুগুলো নানা ফোরামে তুলে ধরছেন অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে।’

এভাবেই ভিনদেশের কূটনীতিক উসমান রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামের নানা কর্মের উদ্যোগের ঝাঁপি খুললেন। বললেন মেধাবী কূটনীতিক তিনি, তার বক্তব্য বাংলাদেশের বর্ণময় গল্প আমরা শুনতে পাই।

মোটাদাগে ২০১৭ সালে ডিসেম্বর মাসের ২১ তারিখ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই নিরবধি দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। আধুনিক মনমানসিকতা আপাদমস্তক একজন পরিশীলিত, আধুনিক চিন্তার মানুষ তিনি। সদালাপি, সৎ, নির্লোভ, নির্মোহ, প্রচারবিমুখ একজন দূরদর্শী পরিপক্ক কূটনীতিক।

অর্থ-সম্পদের প্রতি প্রজাতন্ত্রের এই কর্মচারীর নেই কোনো লোভ। সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য প্রবাসীদের জন্য, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে, দেশের সংস্কৃতিকে ও জানিয়ে দেয়ার জন্য যে ইস্যু কোরিয়ানদের সামনে আনা দরকার, তাতে তিনি তৎপর। যেন রাষ্ট্রীয় সীমানায় পাহারা দেয়া অতন্দ্র বর্ডার গার্ড।

কোরিয়ার সরকারের কাছে বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে গ্রহণীয় ভূমিকা রেখেই চলেছেন। নির্লোভ ও নির্মোহ ব্যক্তিত্ব ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার পালনের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক অনুপ্রেরণায়, সত্য-সুন্দর-কল্যাণাশ্রয়ী পথের নিশানা নিয়েই তিনটি বছরজুড়েই দেশকে চিত্রবৎ করেই ক্ষান্ত হননি, কোরিয়া থেকে কূটনীতির দ্যুতি দিয়েই সরকারি-বেসরকারি তিনটি পুরস্কার অর্জন করেন।

শুধু কি তাই প্রবাসীদের জন্য নিরবধি কাজ করেই চলেছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতে পারে সেজন্যই প্রজাতন্ত্রের এই পরিশুদ্ধ কর্মচারী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স চালু করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। একটি ওয়েবিনারে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেই উঠলেন এই জীবনে তিনি এ রকম শিক্ষাবান্ধব রাষ্ট্রদূত দেখেননি।

একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের শিশু-কিশোররা যাতে দেশীয় শিক্ষা, কৃষ্টি, ভাষাকে আয়ত্ব করতে পারে সেজন্য দূরশিক্ষণে ভাষা কোর্স চালু করে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের প্রশংসায় ভাসছেন। এই উদ্যোগের ফলে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া পূর্ণ হলো।

ভাষা কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাদির রহমান নামে এক অভিভাবক রাষ্ট্রদূতের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি আবেগে আপ্লুত হন। নিকট ভবিষ্যতে শিক্ষাবান্ধব কর্মকাণ্ডগুলো দেশ গঠনে এবং একই সঙ্গে প্রবাসীদের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
রবীন্দ্রনাথের মতে, শিক্ষা কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, যা বিশ্ব সত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে। শিক্ষার মধ্যে এমন একটি সম্পদ থাকা চাই যা কেবল আমাদের তথ্য দেয় না, সত্য দেয়; যা কেবল ইন্ধন দেয় না, অগ্নি দেয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবাসীরা বলছেন, রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম প্রবাসীদের মাঝে, শিশু-কিশোরদের মাঝে শিক্ষার যে অগ্নিবীজ রূপায়ন করে দিলেন তা সুপেয় সুমিষ্ট রূপে হাজির হবে শিগগিরই। একই সঙ্গে আঠারো হাজার প্রবাসীদের মনে এই উদ্যোগগুলো স্মরণীর চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

সময় হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। সঠিক সময়ে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমনটি মত দিয়েছেন কোরিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটির সাবেক সভাপতি হাবিল উদ্দীন।

মনীষী মিশু কাকুর মতে, প্রতিটি শিশুই প্রতিভা নিয়ে জন্মায় কিন্তু সমাজ সে প্রতিভা ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু আবিদা ইসলাম, শিশু-কিশোরদের মাঝে জাতির জনককে চেনাতে, মুক্তিযুদ্ধকে চেনাতে, বাংলাদেশের নদ-নদী ফুল পাখিকে চেনাতে নানা উৎসবকে চেনাতে, যে উদ্যোগ নিয়েছেন এতে শিশু কিশোরদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করবে। 

এমনটি মনে করেন অভিভাবকরা। শিক্ষা হচ্ছে ধনাগার ও সংস্কৃতি হচ্ছে এর প্রকাশ, যার মৃত্যু নেই। সে কাজটি করেই চলেছেন নীরবে নিভৃতে ১৫তম বিসিএসের ফরেন ক্যাডারের এই মেধাবী কর্মকর্তা। যেন প্রবাসের বুকে শিক্ষার ফেরিওয়ালা।

-সিভয়েস/ওএফএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়