Cvoice24.com

যুক্তরাষ্ট্রে মা-বাবা বোন নানিকে হত্যার পর বাংলাদেশি দুই তরুণের আত্মহত্যা

সিভয়েস প্রবাস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৪, ৬ এপ্রিল ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রে মা-বাবা বোন নানিকে হত্যার পর বাংলাদেশি দুই তরুণের আত্মহত্যা

পুরান ঢাকার ওই পরিবারটি বাস করতো যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরে

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস সংলগ্ন অ্যালেন শহরের একটি বাড়ি থেকে বাংলাদেশি এক পরিবারের ৬ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (৫ এপ্রিল) ভোরে টেলিফোন পেয়ে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে। এদের মধ্যে চার সদস্য নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হন।  

প্রাথমিক বর্ণনায় পুলিশ জানায়, দুই ভাই মিলে তাদের মা-বাবা, নানি ও একমাত্র বোনকে হত্যার পর নিজেরাও আত্মহত্যা করেন। তারা অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। 

নিহতরা হলেন— তৌহিদুল ইসলাম (৫৬), স্ত্রী আইরিন ইসলাম নীলা (৫৫), তৌফিকের শাশুড়ি আলতাফুন্নেসা (৭৭), দুই ছেলে তানভীর তৌহিদ (২১) ও ফারহান তৌহিদ (১৯) এবং মেয়ে পারভীন তৌহিদ (১৯)।

অ্যালান শহরের পুলিশ জানায়, ওই পরিবারের কোনো এক সদস্যের বন্ধু পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর তারা ওই বাড়িতে যান। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ডালাস মর্নিং নিউজকে পুলিশ সার্জেন্ট জন ফেলতি জানান, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ওই পরিবারের দুই ভাই আত্মহত্যা করার ব্যাপারে একমত হন। কিন্তু তার আগে পুরো পরিবারকেই তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার (হত্যার) সিদ্ধান্ত নেন।’

নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ। তবে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে দু’জন টিনএজ বয়সী ভাই, তাদের এক বোন, তাদের বাবা-মা এবং নানি রয়েছেন। সবচেয়ে কমবয়সী নিহতের বয়স ১৯ বছর। তার ফেসবুকের স্ট্যাটাসেই পুরো পরিস্থিতির বর্ণনা করা হয়েছে। পুলিশের মতে, ‘আত্মহত্যার প্রসঙ্গ’ নামে ওই স্ট্যাটাসে রয়েছে হতাশার ধারাবিবরণী।  

পরিবারটির ক্যারেন ফেল্লা নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘যথারীতি আমরা রবিবার কাজে যাই। কিছুই বুঝিনি যে, ওরা কেউ আর বেঁচে নেই। তাদের ব্যাপারে অবশ্য বেশি ধারণা নেই আমাদের। তবে পরিবারটির একমাত্র তরুণী ছিল খুবই মেধাবী ছাত্রী। আমার মেয়ের স্কুলেই পড়তো সে।’

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের সেক্রেটারি নাহিদা আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এমন সংবাদে শোকাচ্ছন্ন গোটা কমিউনিটি। তৌহিদুল ইসলাম খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তার স্ত্রী নীলাও আসতেন কমিউনিটির অনুষ্ঠানে। সব সময় তারা দুই ছেলেকে নিয়ে উচ্ছ্বাস করতেন। একমাত্র মেধাবী মেয়েকে নিয়েও তারা গর্ববোধ করতেন। ফারহান আর পারভীন ছিল যমজ। এমন একটি পরিবারের সবাই নিঃশেষ হয়ে গেল একসঙ্গেই। সঙ্গে তৌফিকের শাশুড়ি আলতাফুন্নেসাকেও নিহত হতে হলো।’

জানা গেছে, পুরান ঢাকার তৌহিদুল আট বছর আগে টেক্সাসের এই সিটিতে বসতি গড়ার আগে বাস করতেন নিউইয়র্কে। তিনি টেক্সাসে সিটি ব্যাংকে চাকরি করতেন।

কোনো কারণে তৌহিদের দুই ছেলেই বিষণ্নতায় ভুগলিছেন। সুইসাইড নোটে ছোট ছেলে ফারহানও উল্লেখ করেছেন, ২০১৬ সালে নবম গ্রেডে পড়াবস্থায় আমি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছি বলে চিকিৎসক জানান। এজন্য আমি পরীক্ষায় ফেল করেছি। আজ আমি নিজের শরীর দু’বার কেটেছি। খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমার মনে আছে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট, কাঁচির মত ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরে কেটেছিলাম। অনুভব করেছি কতটা অসহনীয় যন্ত্রণা। এরপর প্রায় দিনই রান্নাঘরের চাকু দিয়ে শরীর কেটেছি। 

তিনি আরও লেখেন, বিষণ্নতার দুঃখবোধ লাঘবের পথ খুঁজেছি। এ অবস্থায় আমার ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু আমাকে ত্যাগ করেছে। এমনি হতাশার মধ্যেই আমাকে ভর্তি করা হয় ইউনিভার্সিটি অব অস্টিনে কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে। এরপর আমি ভেবেছি যে, এবার জীবনটা সঠিক ট্র্যাকে ওঠেছে। বাস্তবে তা ঘটেনি। বিষণ্নতায় জর্জরিত হয়ে পুনরায় আমি নিজের শরীর রক্তাক্ত করি এবং কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় ঘুমাতে যাই। সান্ত্বনা খুঁজি যে, আমি সুস্থ হয়েছি। অন্যদের মতই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি সত্য বলে কখনোই মনে হয়নি।

এক পর্যায়ে তিনি লিখেন, আমি যদি আত্মহত্যা করি তাহলে গোটা পরিবার সারাটি জীবন কষ্ট পাবে। সেটি চাই না। সেজন্যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মারা যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বড়ভাইকে সামিল করলাম। দুইভাই গেলাম বন্দুক কিনতে। আমি হত্যা করবো ছোটবোন আর নানিকে। আমার ভাই করবে মা-বাবাকে। এরপর দুজনই আত্মহত্যা করবো। কেউ থাকবে না কষ্ট পাবার।

ওই নোটে তিনি আরও উল্লেখ করেন, বন্দুক কেনার ব্যাপারটি খুবই মামুলি। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের নামে তামাশা চলছে সর্বত্র। বড়ভাই গেলেন দোকানে। বললেন যে, বাড়ির নিরাপত্তার জন্য বন্দুক দরকার। দোকানি কয়েকটি ফরম ধরিয়ে দিলে সেখানে স্বাক্ষর করলেন ভাই। এরপর হাতে পেলাম কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি, যা দিয়ে নিজের কষ্ট এবং পরিবারের কষ্ট সহজে লাঘব করা যাবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়