Cvoice24.com

সততা চর্চার অনন্য ভুবন ‘অনেস্ট সেন্টার’ 

হিমু বড়ুয়া

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সততা চর্চার অনন্য ভুবন ‘অনেস্ট সেন্টার’ 

‘আপনার আজকের দিনটি যদি খারাপ যায় তবে আমাদের বলুন’— ব্যতিক্রমধর্মী এমন শ্লোগানে আসছে ‘অনেস্ট সেন্টার’

‘আপনার আজকের দিনটি যদি খারাপ যায় তবে আমাদের বলুন’— ব্যতিক্রমধর্মী এমন শ্লোগানে আসছে ‘অনেস্ট সেন্টার’। নগরের জামালখানস্থ সিপিডিএল ম্যাজেস্টা ভবনের চার তলায় আগামীকাল শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) যাত্রা করবে ভিন্নধর্মী এই প্রতিষ্ঠান। যেখানে এক ছাদের নিচেই থাকছে উন্মুক্ত পাঠাগারে বসে অবসর মুহূর্ত কাটানো, কম টাকায় কেনাকাটার সুযোগ, শিশুদের জন্য আদর্শ বিনোদনের ব্যবস্থাসহ আরও অনেক কিছু।

বই পড়ুয়াদের কথা চিন্তা করে অনেস্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে উন্মুক্ত পাঠাগার। উপন্যাস, ছোট গল্প, নাটক, ভ্রমণকাহিনী, ছড়া, কবিতাসহ দেশি-বিদেশি সায়েন্স ফিকশনে সাজানো হয়েছে এটি। যে কোনো বয়সের যে কেউ এসে ইচ্ছে করলে সারাদিন বই পড়ে কাটাতে পারবে। এখানে থাকছে কফি ক্যাফে। সাশ্রয়ী মূল্যের নাস্তাও রাখা হবে পাঠকদের সুবিধায়। কক্ষের চারপাশে সাজানো থাকবে প্রত্নতাত্ত্বিক (এনটিক) নানা নিদর্শন, যা জোগাবে বাড়তি অনুভূতি।    

সেন্টারের বিশাল জায়গায় শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে বই, ছবি আঁকতে রং তুলি। সপ্তাহে দুইদিন অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার থাকবে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সিভয়েসকে বলেন, ‘শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য এখানে বই ছাড়াও বেশকিছু মজার মজার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মা-বাবার সঙ্গে এসে তারা যেন আনন্দ পায় তাই এতো আয়োজন।’

সমাজে যাদের ব্যস্ত জীবনযাপন, তাদের কথা চিন্তা করে রাখা হয়েছে ‘প্যারেন্টস লাউঞ্জ’। যেখানে থাকছে পরিবার-পরিজন নিয়ে গল্প, আড্ডা, গানের সঙ্গে সিনেমা দেখার সুযোগ। আবার জন্মদিনের অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থাও আছে। সবার জন্যই রয়েছে নামাজ ও প্রার্থনার কক্ষ। অনেস্ট সেন্টারের প্রাধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মনিরুল হক অপু সিভয়েসকে বলেন, ‘একটি পরিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা নিয়েই আমরা এই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। এমনকি শরীর ও মনের ব্যায়ামের জন্য খুব শিগগিরই ইয়োগা চর্চার ব্যবস্থা করা হবে।’ 

বহুমাত্রিক সুবিধাসম্বলিত অনেস্ট সেন্টারের আরেকটি বিশেষ উদ্যোগ ‘ফ্রি জোন’। যেখানে সংযোজন করা হয়েছে বিপন্ন মানুষ ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন-পুরাতন জামাকাপড়, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সেবা সরঞ্জামাদী এবং শিক্ষা উপকরণ। এই জোন থেকে অসহায় লোকজন নিজেদের চাহিদা মতো পণ্য নিতে পারবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। শুধু তাই নয়; এসব কাপড় বা পণ্য পৌঁছে দেওয়া হবে এমন মানুষদের, যারা নিজেদের অভাব অভিযোগের কথা বলতে পারে না। লজ্জা পায় কারও কাছে হাত পাততে। আর এ কাজটি করবে অনেস্টের স্বেচ্ছাসেবকরা।  

সমাজের মধ্যবিত্ত ও স্বল্প উপার্জনকারীদের কথা চিন্তা করে অনেস্ট সুপারশপে রাখা হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ও কসমেটিকস। এখানে থেকে যে কেউ পণ্য কিনতে পারবেন বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সিইও মনিরুল হক বলেন, ‘নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে আমাদের সুপারশপে দেওয়া হচ্ছে ভর্তুকি। শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্যেই মিলবে এ সুবিধা। অর্থাৎ বাজারে উন্নতমানের চাল যদি ৭০ টাকা হয়, আমাদের এখানে সেটা ৬৪ টাকায় মিলবে। যদিও অসৎ কিংবা সুবিধালোভীদের কথা চিন্তা করে মাসে একবারই ২০ কেজি চাল কেনার নিয়ম এখানে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘অনেস্ট একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। সেখানে যতগুলো পণ্যের সেলপোস্ট হয় তাতে ক্রয়মূল্য উল্লেখ থাকে। আর ওই পণ্য থেকে যতটুকু লাভ হয় তা চলে যায় বিপন্ন মানুষ ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সেবায়। যদিও লাভের ৬০ শতাংশ দেওয়া হয় ক্রেতাকেই!’ 

আরও ব্যাখ্যা করে অনেস্ট সেন্টারের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘মনে করুন, কোনো পণ্যের ক্রয়মূল্য ১০০ টাকা হলে তার সঙ্গে ২৫ শতাংশ লাভ যুক্ত করে এর বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়। পণ্যটি বিক্রি করার পর লাভের ২৫ টাকার ৬০ শতাংশই পাবেন ক্রেতা। অর্থাৎ তিনি পণ্যটি ১১৭ টাকায় কিনছেন। আর বাকি ৬ টাকা অনেস্ট তার অপারেশন খরচ বাদ দিয়ে সেন্টারের নানা সেবামূলক কার্যক্রমে ব্যবহার করে। ফলে এই সিস্টেমটায় ক্রেতাও সুবিধা পান, আর আমরা চালিয়ে যেতে পারছি মানবিক সেবাগুলো।’

দেশসেবায় অনুকরণীয় এই কাজের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন চট্টগ্রামের কর কমিশনার ও কথাসাহিত্যিক বাদল সৈয়দ। ‌‘আসুন মায়া ছড়াই’ এই স্লোগান নিয়ে তিনি করোনাকালে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বহুমুখী সেবা কার্যক্রমে। প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রামের সামাজিক সংগঠন ‘পে ইট ফরোয়ার্ড’, ‘অনেস্ট’। করোনাকালে ডাক্তার-নার্সদের বিনামূল্যে ৪০ হাজার পিপিই প্রদান, মুমূর্ষু রোগীদের অক্সিজেন ও টেলিমেডিসিন সেবা এবং নগদ অর্থ সহায়তাসহ বহুমুখী উদ্যোগ নিয়ে মানবসেবার অনুপম উদাহরণ তৈরি করেছিল তারা। অনেস্ট সেন্টার মূলত মানবিক সংগঠন ‘পে ইট ফরোয়ার্ড’-এর সহযোগী।

অনেস্ট সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা বাদল সৈয়দ সিভয়েসকে বলেন, ‘অনেস্ট সেন্টার নতুনভাবে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। থাকছে বিশাল পণ্যের আউট লেট। বই প্রেমীদের সুবিধার জন্যে আমরা উন্মুক্ত পাঠাগার করেছি। সেখানে সবাই এসে বই পড়তে পারবেন। তবে বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। ১০ জন স্থায়ী ও ছয় শিক্ষানবিশ কর্মী দিয়ে পরিচালিত হবে সেন্টারটি। পাঠক ও ক্রেতাদের সুবিধার জন্য চালু থাকবে সপ্তাহের সাতদিনই।’ 
  
তিনি বলেন ‘অনেস্ট সেন্টারের মূল উদ্দেশ্য বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। বিনামূল্যে তাদের পণ্য সরবরাহ করা। আর যারা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত আছেন, তাদেরকে বাজারমূ্ল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য সরবরাহ করা। আমাদের সদস্যরা এখান থেকে পণ্য সংগ্রহ করে দুঃস্থদের কাছে পৌঁছে দেয়। সারাদেশে আমাদের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার সেচ্ছাসেবক আছেন। এদের মাধ্যমেই আমরা বিপন্নদের সাহায্য করি। অর্থাৎ আমরা ডোনেট করবো আপনারা পৌঁছে দিবেন।’ 

অনেকে সরাসরি তাদের কাছে আসেন জানিয়ে বাদল সৈয়দ বলেন, ‘করোনার শুরুতে রিকশাওয়ালাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এসেছেন। তাদের আমরা স্বসম্মানে নগদ অর্থ ও পণ্য দিয়ে সাহায্য করেছি। এমনকি আমাদের অনেস্ট সেন্টারে এসেছিলেন যৌনকর্মীরাও। জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে আমরা সবাইকে সহযোগিতা করে থাকি। অনেস্ট সংগঠনটি নতুন না, মূলত নতুনভাবে নবরূপে এটির স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়